বাতানুকূল যন্ত্র খারাপ, মর্গের দুর্গন্ধে পথ চলা দায়

প্রায় একমাস ধরে বিকল সমস্ত বাতানুকূল যন্ত্র। ফলে পচন ধরেছে মর্গে থাকা বেওয়ারিশ মৃতদেহগুলির। আর এরই জেরে দুর্গন্ধে নাকাল হচ্ছেন কোচবিহার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন রোগী ও তাদের পরিজনেরা। দুর্গন্ধে জেরবার মর্গ সংলগ্ন হাসপাতাল রোড, বিশ্বসিংহ রোড, ও সুনীতি রোডের একাংশের বাসিন্দারাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৬
Share:

মর্গের পাশ দিয়ে এ ভাবেই যেতে হচ্ছে পথচারিদের। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

প্রায় একমাস ধরে বিকল সমস্ত বাতানুকূল যন্ত্র। ফলে পচন ধরেছে মর্গে থাকা বেওয়ারিশ মৃতদেহগুলির। আর এরই জেরে দুর্গন্ধে নাকাল হচ্ছেন কোচবিহার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন রোগী ও তাদের পরিজনেরা। দুর্গন্ধে জেরবার মর্গ সংলগ্ন হাসপাতাল রোড, বিশ্বসিংহ রোড, ও সুনীতি রোডের একাংশের বাসিন্দারাও। অথচ প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। ছুটিতে থাকা কোচবিহার জেলা হাসপাতালের স্থায়ী সুপার জয়দেব বর্মন জানিয়েছেন, ১২টি বাতানূকূল যন্ত্র একসঙ্গে বিকল হয়ে পড়েছে। নতুন করে ওই পরিকাঠামো তৈরির জন্য ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ চেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

এই মুহূর্তে এই মর্গে বেওয়ারিশ ১৩ টি মৃতদেহ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বাতানুকূল যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ায় মৃতদেহে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কোচবিহার সদরের মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “পুজোর ছুটির জন্য সমস্যা হয়েছে। ১৩টি মৃতদেহই খুব দ্রুত সত্‌কারের পাশাপাশি বিকল বাতানুকূল যন্ত্র মেরামতের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার শহরের হাসপাতাল রোডের গা ঘেঁষে বাম আমলে ওই মর্গ তৈরি হয়। কোচবিহার কোতোয়ালি থানা এলাকা তো বটেই দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, বক্সিরহাট থানা এলাকা থেকেও ময়নাতদন্তের জন্য এখানে দেহ আনা হয়। এছাড়া নিউ কোচবিহার রেল পুলিশও ময়নাতদন্তের জন্য এখানে দেহ পাঠায়। নিয়ম অনুযায়ী, বাতানূকূল পরিকাঠামোয় অন্তত ১৫ দিন বেওয়ারিশ মৃতদেহ মর্গে সংরক্ষণ করার কথা। তারপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেহ সত্‌কারের জন্য কোচবিহারের মহকুমা শাসককে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিলে তারই ভিত্তিতেই প্রশাসনের তরফে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেহগুলির সত্‌কার করার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে বেওয়ারিশ দেহ সত্‌কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়না। একসঙ্গে বেশ কিছু মৃতদেহ জমা হওয়ার পরেই সত্‌কারের জন্য চিঠি পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরজন্যই মর্গে জমে থাকা মৃতদেহের সংখ্যা বেড়ে যায়।

Advertisement

এখন যে ১৩টি বেওয়ারিশ দেহ রয়েছে তারমধ্যে এক ব্যাক্তির দেহ গত ২২ জুলাই থেকে ওই মর্গে রয়েছে। সবমিলিয়ে কোতোয়ালি থানার চারটি, দিনহাটা থানার দু’টি, তুফানগঞ্জ থানার দু’টি, বক্সিরহাট থানার একটি ও নিউ কোচবিহার রেল পুলিশের উদ্ধার করা অজ্ঞাত পরিচয় দু’জনের দেহ সেখানে রয়েছে। বাকি দু’টি দেহ জেলা হাসপাতালে মৃত দুই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির। ওই হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সুব্রত হালদার বলেন, ওই পরিবেশে ময়নাতদন্ত করাটা যে কি কষ্টকর তা বলে বোঝানো যাবেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিত্‌সকের কথায়, “গরম আর প্রচন্ড দুর্গন্ধে শ্বাস নেওয়া যাচ্ছেনা। এতে নাক, কান, বুকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকছে।”

ক্ষুব্ধ বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নাকে রুমাল না চেপে লাগোয়া রাস্তায় যাতায়াত করা যাচ্ছে না। দোকানে বসতে গিয়েও বিপাকে ব্যবসায়ীরা। হাসপাতাল রোডের এক ব্যবসায়ী বিশ্বজিত্‌ সাহা বলেন, “দুর্গন্ধে দোকানে বসা যাচ্ছে না। সবসময় গা গোলাচ্ছে।” অ্যাম্বুল্যান্স চালক আফজল মিঁয়ার কথায়, “দুর্গন্ধ এড়াতে বিকল্প ব্যস্ত রাস্তায় যাতায়াত করতে গিয়ে যানজটে পড়তে হচ্ছে।” কোচবিহার পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের মহানন্দ সাহা বলেন, “শহরের ভেতরে ওই মর্গ থেকে যাতে দূষণ না ছড়ায় সেজন্যই বাতানুকূল যন্ত্র বসানো হয়েছিল। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় মাঝেমধ্যেই সেগুলি বিকল হয়ে সমস্যা হচ্ছে।” পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান দীপক ভট্টাচার্য পাল্টা বলেন, “আগে ঠিকঠাক পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। আইন মেনে সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন