বিনা কর্ষণের ধানচাষে সাফল্য কোচবিহারে

বিনা কর্ষণে ধান উৎপাদন করে সাফল্য পাচ্ছেন কোচবিহারের কৃষকেরা। কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান সেরকমই কথা বলছে। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকে এ বারে পরীক্ষামূলক ভাবে ১০০ বিঘা জমিতে বিনা কর্ষণে ধান চাষ করা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩১
Share:

বিনা কর্ষণে ধান উৎপাদন করে সাফল্য পাচ্ছেন কোচবিহারের কৃষকেরা। কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান সেরকমই কথা বলছে।

Advertisement

কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকে এ বারে পরীক্ষামূলক ভাবে ১০০ বিঘা জমিতে বিনা কর্ষণে ধান চাষ করা হয়েছিল। প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকেরা ১৬ থেকে ১৭ মণ ধান পেয়েছেন বলে কৃষি দফতরের তরফে দাবি করা হয়েছে। সাধারণভাবে এক বিঘা জমি থেকে ১০ থেকে ১১ মণ ধান উৎপাদন হয়। কয়েকজন কৃষক আবার খুঁট (লোহা দিয়ে তৈরি যন্ত্র) দিয়ে ধান বীজ রোপণ করে বিঘা প্রতি ২৪ মণ পর্যন্ত ধান পেয়েছেন। বিশেষ করে কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকে এ বারে ধান উৎপাদন অন্য বারের তুলনায় অনেকটা বেশি হয়েছে। চাষিরা সময় মতো চাষে নামাতেই ওই সাফল্য এসেছে বলে কৃষি দফতরের দাবি।

ঘুঘুমারির কৃষক ফজলে রহমান জানান, তিনি এ বারে চার বিঘা জমিতে বিনা কর্ষণে ধান চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ২৪ মণ করে ধান পেয়েছেন। গত বছর সাধারণ পদ্ধতিতে চাষ করে বিঘা প্রতি ১৪ মণ ধান পেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার জমি উর্বর। ফসল ভাল হয়। এ বারে কৃষি দফতরের পরামর্শ মেনে কোনও রকম চাষ না করে খুঁটের সাহায্যে ধানের বীজতলা রোপণ করি। এত ধান হয়েছে দেখে আমি নিজেই হতবাক।”

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকে এ বারে ৮৬ হাজার ৪০০ মেট্রিক ধান উৎপাদন হয়েছে। গত বছর ওই পরিমাণ ছিল ৬৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। ২০১২ সালে ওই সংখ্যা আরও কম ছিল। কোচবিহার সদর মহকুমায় ৭১ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমিতে এ বারে ধান চাষ হয়। প্রতি বিঘাতে ১২ থেকে ১৪ মণ ধান হয়েছে বলে আধিকারিকেরা জানান। গত বছর গড়ে ৯ থেকে ১০ মণের বেশি ধান হয়নি। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের কৃষি আধিকারিক রজত চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিনা কর্ষণে ধান উৎপাদনে আমরা সফল হয়েছি। ওই পদ্ধতিতে যে কৃষকেরা চাষ করেছেন প্রত্যেকেই ভাল ফসল পেয়েছেন। এক দিকে তাঁদের চাষের খরচ বেঁচে গিয়েছে। আরেকদিকে ফলন বেশি হওয়ায় আয় বেশি হবে। এ বারে আমরা আশা করছি হাজার বিঘার উপরে জমিতে বিনা কর্ষণে ধান চাষ হবে।

সারা জেলাতেই ধান উৎপাদন এ বার বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কোচবিহার জেলা কৃষি আধিকারিক আশিষ পাত্র। তিনি বলেন, “ফলন এ বারে ভাল হয়েছে। তাই উৎপাদন অনেকটা বাড়বে বলে আশা করছি।” কোচবিহার জেলায় ২ লক্ষ ৯ হাজার হেক্টরের মতো জমিতে ধান চাষ হয়। সাধারণত প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১১ মণ ধান উৎপাদন হয়। এ বারে কৃষি দফতরের পরামর্শ মেনে অনেক কৃষক সময়মতো চাষে নামেন। অনেকে আবার বিনা কর্ষণেও ধান চাষ করেন। তাতেই তাঁরা সাফল্য পান। কোচবিহার সদর মহকুমা কৃষি আধিকারিক বলরাম দাস বলেন, “এ বারে বৃষ্টি সময়মতো হয়েছে। যা কৃষকদের অনুকূলে গিয়েছে। সে জন্য ফলন ভাল হয়েছে।”

জিরানপুরের আরেক কৃষক বিমান দেব জানান, তিনি এ বারে সাধারণভাবে চাষ করে বিঘা প্রতি ১৪ মণ ধান পেয়েছেন। গতবার ১২ মণ করে ধান পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সেচের অভাবে আমরা ফসল কম পাই। এ বারে দফতর থেকে পাম্পসেট পাই। সে জন্য আষাঢ় মাসের প্রথম সপ্তাহে চাষ শুরু করি। অন্যবার বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকার জন্য ধান চাষে নামতে দেরি হয়।” নাজিরহাট সংলগ্ন ছিটমহলের কৃষক রশিদ আলি জানান, তিনি বিঘাতে ১৪ মণ ধান পেয়েছেন। তাঁর কথায়, “অন্যবার শেষ সময়ে বৃষ্টি হয়। ফলে ফসল থেকে দানা পড়ে যায়। এ বারে বৃষ্টি ওই সময় হয়নি। একটি দানাও নষ্ট না হওয়ায় ফলন বেশি হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন