ফের মালদহ

বোমা ফেটে জখম কিশোর, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার নালিশ

ইংরেজবাজার ও বৈষ্ণবনগরে বিস্ফোরণের ঘটনার রেশ মেটার আগেই ফের বোমা ফাটার খবর মিলল মালদহেরই কালিয়াচকে। কালিয়াচকের বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিচাপা গ্রামে বুধবার রাত আটটা নাগাদ একটি বাড়িতে বোমা ফাটে। পুলিশের প্রাথমিক ভাবে অনুমান, বৈষ্ণবনগরের ঘটনার মতোই এ ক্ষেত্রেও বাড়িতে মজুত বোমা সরানোর সময়েই তা ফেটে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৬
Share:

ইংরেজবাজার ও বৈষ্ণবনগরে বিস্ফোরণের ঘটনার রেশ মেটার আগেই ফের বোমা ফাটার খবর মিলল মালদহেরই কালিয়াচকে।

Advertisement

কালিয়াচকের বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিচাপা গ্রামে বুধবার রাত আটটা নাগাদ একটি বাড়িতে বোমা ফাটে। পুলিশের প্রাথমিক ভাবে অনুমান, বৈষ্ণবনগরের ঘটনার মতোই এ ক্ষেত্রেও বাড়িতে মজুত বোমা সরানোর সময়েই তা ফেটে যায়। খাগড়াগড় কাণ্ডের পরে মজুত বোমা সরাতে গিয়েই অসাবধানে তা ফেটে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই বাড়ি থেকে আহত এক কিশোরকে ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তাঁরা দেখেছেন। জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই এলাকায় জিয়াউল শেখের বাড়ির বারান্দায় সুতলি বোমা ফেটেছে। এক জন জখম হয়েছে। তবে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জিয়াউল শেখকে অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য পুলিশ আগে এক বার গ্রেফতার করেছিল।

দশ দিনের মধ্যে মালদহ জেলার ইংরেজবাজার, বৈষ্ণবনগর ও কালিয়াচকে বোমা ফাটার ঘটনায় রীতিমতো চাপের মুখে পড়েছে জেলা পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও উঠেছে। ইংরেজবাজারের নরেন্দ্রপুর গ্রামে বোমা বিস্ফোরণের ১০ দিন পরেও আহত ৩ জনের এক জনের বাড়ির সদস্যকেও পুলিশ এখনও জেরা করেনি কেন, তা নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে। সে জন্য বাসিন্দাদের তরফে কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়ে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) গোয়েন্দাদের মালদহে পাঠানোর আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অন্তত ২০ জন বাসিন্দা জানান, জেলার বেশ কিছু এলাকা অনেকদিন ধরেই উত্তপ্ত। পরপর বোমা ফাটল তিন জায়গায়। চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে মালদহের বিস্ফোরণের তদন্ত-ভার তুলে দেওয়ার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গেই, তৃণমূলের একাংশও পুলিশের ভূমিকায় বিরক্ত।

Advertisement

তবে পুলিশ সুপার প্রসূনবাবুর যুক্তি, “ইংরেজবাজারে বোমা বিস্ফোরণে জখমদের পুলিশ পাহারায় চিকিত্‌সা চলছে। তাঁরা সুস্থ না হলে কী ভাবে গ্রেফতার করব?” তবে বোমা বাঁধতে গিয়ে ওই তিন জন জখম হয়েছেন না তাদের উপর বাইরে থেকে কেউ বোমা ছুড়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৈষ্ণবনগরের বিস্ফোরণে যুক্ত এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্য অভিযুক্তরা পলাতক।

ইংরেজবাজারে ৫ অক্টোবর বোমা বিস্ফোরণে জখম হন উজির শেখ, জসিম শেখ ও আবদুল্লাহ। উজির শেখের মা মর্জিনা বিবি বলেন, “পুলিশ গ্রামে এক দিন এসেছিল। বিস্ফোরণস্থল ঘুরে চলে গিয়েছে। বাড়িতে আসেনি।” জসিম শেখের মা কাশ্মীরা বিবির দাবি, “ছেলেরা তাস খেলছিল। সেই সময় কেউ বোমা ছুড়ে পালিয়েছে।” তা হলে থানায় অভিযোগ করেননি কেন? কাশ্মীরাবিবির জবাব, “পুলিশ আসেনি। এলে অভিযোগ করতাম।”

বৈষ্ণবনগরের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। ১২ অক্টোবর বৈষ্ণবনগরে বাজারতি গ্রামে এক সক্রিয় তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে মজুত রাখা বোমা বিস্ফোরণ হয়। মূল অভিযুক্ত কামাল শেখের স্ত্রী ইসমাতারা বিবিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কামাল ও তাঁর চার ভাই ফেরার। স্থানীয়দের কয়েক জনের অবশ্য দাবি, কামালরা এলাকাতেই আছেন কিন্তু অভিযুক্তরা তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য দাবি করেন, যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সকলকেই গ্রেফতার করতে হবে।

এই অবস্থায় ইংরেজবাজারের ঘটনায় জখম তিন জনের চিকিত্‌সার খরচ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ জেনেছে, কেবল উজির শেখের পারিবারিক অবস্থাই ভাল। জসিম ও আবদুল্লাহের বাবা দিনমজুর। আবদুল্লাহ নিজে ট্রাক চালান। তাঁদের প্রথমে মালদহের নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সেখানে উজিরের ৩২ হাজার টাকা, আবদুল্লাহ শেখের ৩২ হাজার টাকা ও জসিম শেখের ৩০ হাজার টাকা বিল হয়। পরিবারের দাবি, নার্সিংহোমের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কলকাতার নার্সিংহোমে ইতিমধ্যে এক একজনের পরিবারকে ৯০-৯৭ হাজার টাকা করে খরচ দিয়ে দিতে হয়েছে। এই বিপুল টাকা কী ভাবে মেটানো হচ্ছে, তা নিয়ে পুলিশের অন্দরে প্রশ্ন উঠলেও সরকারি ভাবে কোনও তদন্ত কিন্তু হচ্ছে না। পুলিশের একাধিক অফিসার জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলেই চিকিত্‌সার খরচ কোথা থেকে আসছে, তা নিয়ে তদন্ত করানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন