এক তরুণীর ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ ছবি চুরি করে ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ একাধিক জনের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে একটি সরকারি শিক্ষা প্রকল্পের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার শিলিগুড়ি থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা রুজু করে তিন জনকে জেরার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই তরুণীর অভিযোগ, তাঁর ‘ব্যক্তিগত’ কিছু ছবি কোনওভাবে চুরি করে মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় তাঁর অফিসেরই তিন সহকর্মী যুক্ত বলে তরুণীর অভিযোগ। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, অভিযোগ গুরুতর। তা পেয়েই ‘সাইবার অপরাধ’-এর ধারা প্রয়োগ করে মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশের ‘সাইবার অপরাধ দমন’ শাখার সাহায্য নিচ্ছে শিলিগুড়ি থানা।
পুলিশ সূত্রের খবর, শিলিগুড়ির জিটিএস মোড়ে ওই শিক্ষা প্রকল্পের অফিস রয়েছে। অভিযোগকারিণীও সেখানে কর্মরত। কর্মসূত্রেই তাঁর এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে নানা জায়গায় যাতায়াত করে থাকেন। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বও গড়ে ওঠে। ঘটনাচক্রে, ওই সহকর্মী বিবাহিত। ফলে, তা নিয়ে অফিসের অন্দরে নানা কানাঘুষো শোনা যায়।
ইতিমধ্যে ওই তরুণী কয়েক জায়গায় বেড়াতেও গিয়েছিলেন। সম্প্রতি ওই তরুণী জানতে পারেন, তাঁর ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ কিছু ফটো মোবাইলের মাধ্যমে নানা জনের কাছে ছড়িয়ে গিয়েছে। তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজখবর শুরু করেন। এর পরেই জানতে পারেন, তাঁর সহকর্মীদের একাংশের ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ ওই ছবি চালাচালি হচ্ছে।
শিক্ষা প্রকল্প সূত্রের খবর, গোড়ায় তরুণীটি ভেঙে পড়েন। সহকর্মীদের কয়েকজন বিষয়টি নিয়ে হইচই না-করার পরামর্শ দেন। তা হলে আরও বেশি লোক জানাজানি হবে বলে চেপে যাওয়ার পরামর্শ দেন ওই সহকর্মীরা। তাই প্রথমে তরুণীটি অভিযোগ জানাননি। কদিন পরে তিনি জানতে পারেন, তাঁর ‘ব্যক্তিগত’ ফটো প্রিন্ট করিয়ে অফিসের কয়েকজন পদস্থ অফিসারের চেম্বারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, তখনই তরুণীটি সন্দেহ করেন, তাঁকে অপদস্থ করে চাকরি থেকে সরানোর ছক কষা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শ নিয়ে ওই তরুণী শিলিগুড়ি থানায় গিয়ে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে খোঁজখবর করে। পুলিশের পদস্থ কর্তারাও অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। রাতেই পুলিশ ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এর ছবি পরীক্ষা করে। প্রাথমিক ভাবে ওই তরুণী কাদের, কেন সন্দেহ করছেন সেই ব্যাপারেও পুলিশ তাঁকে জেরা করে। অভিযোগকারিণী সুনির্দিষ্ট ভাবে ৩ জনের নাম জানালে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে।
তৃণমূলের শিক্ষা সেলের কাছেও খবর পৌঁছেছে। শিক্ষা সেলের এক সদস্য জানান, এক তরুণীকে তাঁর সহকর্মীরা এভাবে হেনস্থার চেষ্টা করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা পুলিশের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, ওই সব ছবি তরুণীর অফিসের কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ থেকে চুপিসাড়ে ‘কপি’ করা হয়ে থাকতে পারে।