বার করে দিন প্রধানের স্বামীকে, নির্দেশ কৃষ্ণেন্দুর

সরকারি বৈঠকে পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধানের জায়গায় তাঁর স্বামী হাজির হলে ঘর থেকে বার করে দিতে হবে স্বামীকে। রাজ্যের বিডিও-দের এমনই নির্দেশ দিলেন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার মালদহ পঞ্চায়েতের জেলা সম্মেলনের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “মহিলাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিন। পঞ্চায়েতের কাজকর্ম কীভাবে করতে হয় শিখতে দিন।” যা শুনে নানা জেলায় বিডিওরা প্রশ্ন তুলেছেন, এমন করতে পারলে তো ভালই। কিন্তু করা যাবে তো?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩
Share:

সরকারি বৈঠকে পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধানের জায়গায় তাঁর স্বামী হাজির হলে ঘর থেকে বার করে দিতে হবে স্বামীকে। রাজ্যের বিডিও-দের এমনই নির্দেশ দিলেন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার মালদহ পঞ্চায়েতের জেলা সম্মেলনের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “মহিলাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিন। পঞ্চায়েতের কাজকর্ম কীভাবে করতে হয় শিখতে দিন।” যা শুনে নানা জেলায় বিডিওরা প্রশ্ন তুলেছেন, এমন করতে পারলে তো ভালই। কিন্তু করা যাবে তো?

Advertisement

এদিন জেলাশাসক, সভাধিপতি, বিডিও, এবং পঞ্চায়েতের নানা স্তরের প্রতিনিধিদের সামনে মন্ত্রী বলেন, “বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মহিলা প্রধানের পরিবর্তে সরকারি বৈঠকে তাঁদের স্বামীকে হাজির থাকতে। তাঁদের সভাকক্ষ থেকে বার করে দিতে হবে বিডিওদের।” মহিলাদের জায়গায় তাঁদের স্বামীরা খবরদারি করছেন কিনা, তা-ও বিডিওদেরই নজর রাখতে বলেন তিনি। জেলা পরিষদের সভাধিপতি সরলা মুর্মু অবশ্য প্রধানের স্বামীদের উপস্থিতির প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আমাদের নজরে এমন বিষয় আসেনি।” তবে জেলা প্রশাসনের কর্তারা একান্তে জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহিলা প্রধানের পরিবর্তে তাঁদের স্বামীরা সরকারি বৈঠকে হাজির হন। এমনকী, দফতরে এসে কাজের তদারকিও করেন।

বর্ধমান জেলার এক বিডিও বলেন, “মহিলা প্রধানের স্বামীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা। বৈঠকে তাঁদের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি করা মানে সেই দলের কোপে পড়া। সেই ঝুঁকি এড়াতেই বৈঠকে তাঁদের থাকতে দেওয়া হয়।” হুগলির এক বিডিও-র অভিজ্ঞতা, “অনেক মহিলা প্রধানের স্বামীর দাপটে আমাদের কাজকর্ম অচল হওয়ার উপক্রম।”

Advertisement

আবার বৈঠকে আসা বন্ধ করলেই সমস্যার শেষ হয় না। জঙ্গলমহলের এক বিডিও বলেন, “প্রথম প্রথম বৈঠকে স্বামীরা আসতেন। আমরা আপত্তি করায় বন্ধ হয়েছে। কিন্তু প্রধানদের মোবাইল ফোন স্বামীরা নিয়ে ঘোরেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে স্বামীরাই কথা বলেন। এটা কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না।”

বর্ধমানের এক বিডিও-র আশঙ্কা, প্রধানের স্বামীদের বৈঠক থেকে বার করে দিলে সমস্যা বাড়তে পারে। কারণ, মহিলা প্রধান যদি ঠিক মতো কাজকর্ম না বোঝেন তা হলে কাজ ভাল হবে না। তার ফল ভুগতে হবে প্রশাসনকেই। অনেক মহিলা প্রধানও অবশ্য মনে করেন, সঙ্গে স্বামী থাকলে দফতরের কাজে সুবিধে হয়। মালদহের সভায় মন্ত্রীর কথা শুনে এক মহিলা প্রধানকে গজগজ করতে শোনা গেল, “হেঁসেল থেকে দুম করে অফিসে বসিয়ে দিলেই তো কাজ চালানো যায় না।” পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “কাজকর্ম বোঝানোর জন্য দফতরে দক্ষ লোকেরা আছেন। ‘সহায়ক’ নামে পদই আছে।” তাঁর কথা, প্রধানের জায়গায় তাঁর স্বামীর উপস্থিতি বেআইনিই নয়, অনৈতিক। কিন্তু যদি উল্টো-সংকট হয়? হুগলির এক বিডিও-র অভিজ্ঞতা, “অনেক সময়েই ব্লকের বৈঠকে পুরুষ প্রধানেরা স্ত্রীকে নিয়ে চলে আসেন। মহিলা বলে বের করে দেওয়া যায় না। শাসক দলের ভয়ে কিছু বলাও যায় না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement