শিক্ষক নিয়োগে ‘লাগামহীন’ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর পদত্যাগ দাবি করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সোমবার বিকেলে জলপাইগুড়ি শহরের ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউশন মাঠে আয়োজিত বামফ্রন্টের নির্বাচনী সভায় তিনি ওই দাবি করেন। তাঁর অভিযোগ, “দফতরের অফিসারদের চাপ দিয়ে টেট পরীক্ষায় অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বাইরের লোকজন তো আছেই, দলের ছেলেদের চাকরির জন্য খোদ তৃণমূলের কয়েকজন ব্লক সভাপতিকেও টাকা দিতে হয়েছে।” বিরোধী দল নেতা জানান, মঞ্চে বসে কলকাতার একটি ফোন পেয়ে তিনি জানতে পেরেছেন, শিক্ষা দফতরের উপসচিব নাকি তাঁকে চাপ দিয়ে টেট পরীক্ষায় দুর্নীতিতে সামিল করানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন। সূর্যকান্তবাবুর প্রশ্ন, “ওই লাগামহীন দুর্নীতির পরে কি শিক্ষামন্ত্রীর পদে থাকা উচিত? যদি উনি পদত্যাগ না করেন, তবে বুঝতে হবে দুর্নীতির পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি আছে।”
এ দিনের ভিড়ে ঠাসা নির্বাচনী সভায় শুরু থেকে সূর্যকান্তবাবু ছিলেন। আক্রমণাত্মক দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলে কংগ্রেস ও বিজেপির তুলোধোনা করেন। একই সঙ্গে তৃণমূলকে বিঁধেছেন সারদা কেলেঙ্কারি থেকে রামলীলা ময়দানের জনসভা, ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের ডাক, আক্রমণের নিশানায় ছিল সবই। তিনি বলেন, “আমি বলি আপনি ভীষণ ছটফট করেন। একটু দাঁড়ান। কথা শোনেননি। বললেন, ফেডারেল ফ্রন্ট হবে। চলো দিল্লি। বলি দিল্লিতেই তো এতদিন ছিলেন? কি করলেন? গেলেন রামলীলা ময়দানে। কাঠফাটা রোদে ফাঁকা মাঠ। বললেন, আন্না আর না।” সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে তাঁর দাবি, আমরা দিল্লিতে খোঁজ নিয়ে জেনেছি সারদার টাকা কোথায় আছে খুজে পাওয়া যাবে। কম্পিউটারে হিসেব আছে। সেটির সার্ভার বিদেশে কোথায় আছে সেটাও জানা গিয়েছে। এর পরেই তাঁর কটাক্ষ, ওই ঘটনা থেকে স্পষ্ট রাজ্যে যিনি ক্ষমতায় আছেন তাঁর হাত বিদেশ পর্যন্ত প্রসারিত।
এ দিন অবশ্য বিরোধী দলনেতা বেশি সরব ছিলেন টেট পরীক্ষার দুর্নীতি নিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, “টেটের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছেলেমেয়েরা আন্দোলনে করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সময় দেখেছেন, কেমন করে যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই সমস্ত তথ্য নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁর পরেও পরিস্থিতি পালটায়নি।” তাঁর অভিযোগ, খোদ তৃণমূলের দুই ব্লক সভাপতির ছেলের চাকরির জন্য ৪ লক্ষ টাকা করে ৮ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর পরেই সভা মঞ্চ থেকে জলপাইগুড়ির তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, “এখানে যারা তৃণমূল করছেন আমার কথা শুনছেন। কেমন আছেন? ভাল থাকলে তৃণমূল করুন। বন্ধ বাগান খুলেছে? দেখছেন তো পরিস্থিতি। চাকরি পাবেন তো?”
রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্য সরকারকে এক হাত নেন তিনি অভিযোগ করেন, তৃণমূলের লোকেরাই এখন রাজ্য পুলিশের উপরে ভরসা না রেখে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলছে তাঁর কথায়, এখন তো রাজ্যে তৃণমূল তৃণমূলকে মারছে, খুন করছে ওঁরা একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বলছে দলের অমুক নেতার নির্দেশে খুন হয়েছে। আদালতে ওই ধরণের তিনটি মামলা চলছে ওঁরা সিবিআইকে দিয়ে ঘটনার তদন্তের দাবি তুলেছে হলটা কি? তাহলে তৃণমূলের কর্মীরাই রাজ্য পুলিশের উপরে ভরসা হারাচ্ছেন। এদিনের সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিআই রাজ্য সম্পাদক শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়, আরএসপি নেতা অশোক ঘোষ, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশ অধিকারী প্রমুখ।