বৃষ্টিতে ভেস্তে গেল গ্রন্থমেলা, ক্ষোভ

মাত্র কুড়ি মিনিটের বৃষ্টিতে ভেস্তে গেল শিলিগুড়ি মহকুমা গ্রন্থমেলা। বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টিতে দেশবন্ধুপাড়ার তরাই স্কুল ময়দানের সরকারি গ্রন্থমেলার স্টলগুলির অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ বই বৃষ্টিতে ভিজে যায় বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেকোরেটার্সের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সংগ্রাহ সিংহ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪২
Share:

বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড তরাই স্কুলের মাঠে গ্রন্থমেলা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

মাত্র কুড়ি মিনিটের বৃষ্টিতে ভেস্তে গেল শিলিগুড়ি মহকুমা গ্রন্থমেলা। বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টিতে দেশবন্ধুপাড়ার তরাই স্কুল ময়দানের সরকারি গ্রন্থমেলার স্টলগুলির অন্তত পঞ্চাশ শতাংশ বই বৃষ্টিতে ভিজে যায় বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেকোরেটার্সের বিরুদ্ধে।

Advertisement

মেলায় তৈরি স্টলগুলির উপর ঠিকমত আচ্ছাদন না থাকায় কয়েক হাজার বই ভিজে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ মেলায় আসা বই বিক্রেতারা। তাঁদের অনেকেই জানান, মেলার পরিকাঠামো এমনই, বৃষ্টি থামার পরেও বেশিরভাগ স্টলের ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছিল। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও আলো আসেনি অনেক স্টলে। নিজেরা জলে ভিজে বই বাঁচাতে গিয়ে নাজেহাল বিক্রেতাদের অনেকেই এ দিনের মত বইপত্র গুছিয়ে চলে যান।

মেলা সূত্রের খবর, মেলার পরিকাঠামো তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিপ্লব সরকার নামের এক ব্যক্তির ডেকোরের্টাস সংস্থা। বিপ্লববাবু গৌতমবাবুর পাড়াতেই থাকেন। সরকারি সূত্রের খবর, বইমেলায় স্টল তৈরি করতে বিপ্লববাবুর সংস্থাকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে। অথচ স্টল যে ভাবে তৈরি করা হয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ মেলা কমিটির অনেকেই। বিপ্লববাবু দাবি করেন, “স্টল ঠিকই বানানো হয়েছিল। তবে স্টলগুলি মাঠের এক প্রান্তে হওয়ায় সরাসরি বাতাস ও জলের ঝাপটায় কিছুটা এলোমেলো হয়ে থাকতে পারে। সে সময় কিছু করা যেত না। সমস্যার কথা শুনে লোক পাঠিয়েছি। স্টলগুলি মেরামতি করে দেওয়া হচ্ছে।”

Advertisement

একবার ছন্দ কেটে যাওয়ার পর মেলা আর তেমন জমেনি। তবে বিক্রেতারা অনেকেই মেলার পরিকাঠামো তৈরি দায়িত্বে সংস্থার বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছেন। ঘটনার কথা জানিয়ে বইমেলা কমিটির তরফে বিষয়টি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমাকে কেউ এ বিষয়ে জানায়নি। কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব। এই সময়ে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার কথা না। তাই সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। তবে তা মিটিয়ে নেওয়া হবে।”

বৃষ্টিতে বিপত্তি

• মেলার পরিকাঠামো তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিপ্লব সরকার নামে এক ব্যক্তির সংস্থা।

• মন্ত্রী গৌতম দেবের পাড়ার বাসিন্দা বিপ্লববাবুর সংস্থাকে স্টল তৈরিতে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।

• স্টলে ঠিকমতো আচ্ছাদন না থাকায় কয়েক হাজার বই ভিজে যায় বলে অভিযোগ।

• বৃষ্টি থামার পরেও দীর্ঘক্ষণ ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছিল। সন্ধ্যার পরেও অন্ধকার ছিল অনেক স্টল।

মেলায় যে ক্ষতি হয়েছে তা স্বীকার করে নেন মেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নন্দিতা সিংহ। তিনি বলেন, “ঝড়, বৃষ্টিতে সামান্য কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুত স্টলগুলি ঠিক করার কাজ শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কার কী ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই মতো তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় কি না সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে।”

ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে যান এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর স্বপন দাস, তৃণমূল নেতা হরিসাধন ঘোষেরা। ব্যবসায়ীদের অনেকেই তাঁদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আগামী রবিবার পর্যন্ত সরকারি এই বইমেলা চলার কথা। সেখানে আবার বৃষ্টি নামলে স্টল রাখা যাবে না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দিয়েছেন।

মেলায় আসা বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা ও বিক্রেতাদের একাংশের অভিযোগ, “ফাল্গুন-চৈত্র মাসের এই সময় ঝড়-বৃষ্টি হয়। স্টলগুলি তৈরি করার সময় বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত ছিল। প্রয়োজনে টিনের আচ্ছাদন দেওয়া যেত।” এক বিক্রেতা জানান , ত্রিপল লাগানো হয়েছে তা নিম্নমানের। কিছু জায়গায় ত্রিপল ঠিকঠাক লাগানো হলেও তা সরে যাচ্ছিল। এদিন বাতাসে ত্রিপল খুলে যায়। বৃষ্টি নামলে দোকানের সমস্ত বই ভিজে নষ্ট হয়েছে। যদিও বিপ্লববাবু নিম্নমানের কাজের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

একটি স্টলের ম্যানেজার দীপেন বসাক জানান, স্টলের বেশিরভাগ বই জলে ভিজে নষ্ট হয়েছে। এদিন কয়েকজন বই বিক্রেতাকে ভেজা নষ্ট বইগুলি বইমেলা চত্বরে ছুড়ে ফেলে দিতেও দেখা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন