বর্ষা ঢুকে পড়ল উত্তরবঙ্গে। এবং নির্ধারিত সময়ের পাঁচ দিন পরে। তবে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরে গত সাত দিন ধরে উত্তরবঙ্গে যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে তাতে বর্ষার দেরিটা বুঝতেই পারেননি মানুষ। নিম্নচাপ অক্ষরেখা বৃষ্টির সঙ্গে এবার বর্ষা ঢুকে পড়ায় প্রশাসন কিন্তু উদ্বিগ্ন। আশঙ্কা, বর্ষার বৃষ্টি ও নিম্নচাপের বৃষ্টি মিলে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সেচ দফতর বলছে, প্রাক বর্ষার বৃষ্টির পরিমাণ উত্তরবঙ্গের চারটি এলাকায় গড়ে হাজার মিলিমিটার ছাড়িয়ে গিয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সব বিভাগেই একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জলের পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে এই প্রথম তিস্তা এবং মহানন্দা ব্যারেজ প্রকল্পকে বন্যা নিয়ন্ত্রণে সামিল করা হয়েছে। দুই ব্যরেজ কর্তৃপক্ষকে কন্ট্রোল রুম খুলতে নির্দেশ দেন সেচমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পক্ষে সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢুকেছে। কোচবিহার ও গ্যাংটকের উপরে সেই মৌসুমী অক্ষরেখা অবস্থান করছে।” উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক বর্ষার বৃষ্টি বলতে সাধারণত মে মাসের শুরু থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়কে ধরা হয়। কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বছর মে মাসে তেমন বৃষ্টি না হলেও, জুন মাসের শুরুর সপ্তাহেই রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বন্যাপ্রবণ বলে চিহ্নিত এলাকাগুলিতে এই পরিমাণ বেশি বৃষ্টি হওয়ায় সেচ দফতর আশঙ্কিত। আলিপুরদুয়ারে ১২০০, বানারহাটে ১৩৭০, হাসিমারায় ৯২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ ছাড়াও জলপাইগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকায় ১০৩৯, কোচবিহারে ১০৫০ এবং শিলিগুড়িতে ৫২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় বলে সেচ দফতর জানিয়েছে।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, ওই পরিসংখ্যান হাতে পৌঁছনোর পরেই জরুরি বৈঠক ডাকেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবার রাজীববাবু উত্তরবঙ্গে গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন কন্ট্রোল রুম খোলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেচমন্ত্রী বলেন, “এবারে প্রাক বর্ষায় যে বৃষ্টি হয়েছে তা অস্বাভাবিক। জুন মাসের এক সপ্তাহেই যা বৃষ্টি হয়েছে তা প্রায় এক মাসের বৃষ্টিপাতের সমান। সে কারণে এই বার উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন কন্ট্রোল রুম খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
এত দিন বন্যার সময়ে শুধুমাত্র জলপাইগুড়িতে উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম খোলা হত। এবারে কমিশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে তিস্তা এবং মহানন্দা ব্যারেজ প্রকল্পকেও। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক সময়ে জলের চাপ এড়াতে ব্যারেজের গেট খুলে দিতে হয়। ফলে অন্য এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। একই ভাবে নদীতে জলের প্রবাহ না জানলে ব্যারেজের উপরেও হঠাত্ করে চাপ বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ব্যারেজে জল বাড়তে থাকলে নদীর জল বৃদ্ধির প্রবণতাও টের পাওয়া যায়। সে কারণেই দুই ব্যারেজ প্রকল্পকে এবারে বন্যা নিয়ন্ত্রণের টাস্ক ফোর্সে সামিল করা হয়েছে। জলপাইগুড়িতে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে আলিপুর দুয়ার, কোচবিহার এবং শিলিগুড়িতেও দফতরের নিজস্ব কন্ট্রোল রুম থাকছে। এরই পাশাপাশি তিস্তা এবং মহানন্দা ব্যারেজেরও দু’টি অতিরিক্ত কন্ট্রোল রুম খোলা থাকছে। সেচ দফতর জানায়, কন্ট্রোলরুমগুলি থেকে নদীর জলের গতিপ্রকৃতি বুঝতে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চলবে। বাসিন্দারা ফোনে বন্যা সংক্রান্ত খবরাখবর জেনে নিতে পারবেন।
ঝড়ে গাছ ভেঙে বিদ্যুত্হীন আট ঘণ্টা
নিজস্ব সংবাদদাতা • চাঁচল
ঝড়ে বিদ্যুতের তারের গাছ ভেঙে পড়ায় ৮ ঘণ্টা বিদ্যুতহীন হয়ে থাকল মালদহের চাঁচল মহকুমা সদর-সহ তিনটি ব্লক এলাকা। ঝড়ে টিনের চাল ও খড়ের ছাদ উড়ে ক্ষতি হয়েছে কিছু বাড়িরও। বুধবার ভোররাতে চাঁচল মহকুমার চাঁচল-১ ও ২ ব্লক সহ হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকে ঝড় বৃষ্টি হয় বলে জানা গিয়েছে। বৃষ্টি শুরুর আগে কয়েক মিনিটের ঝড়ে চাঁচলে হবিনগর, বিদ্যানন্দপুর, শেরপুর, মোবারকপুর কালীতলা, হরিশ্চন্দ্রপুরের আঙ্গারমনি, কর্পূরগঞ্জে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়ে। কিছু গাছ বিদ্যুতের তারের উপর ভেঙে পড়ায় ঝড়ের পর থেকে বিদদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
চাঁচলে বাপি মজুমদারের ছবি।
হরিশ্চন্দ্রপুরের কর্পুরগঞ্জের বেশ কিছু কলাবাগান তছনছ হয়ে পড়ে, বেশ কিছু বাঁশ গাছও উপরে পড়ে। যদিও, ঝড়ের বেগ খুব একটা বেশি না থাকায় বেশি ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে বলেন, “তেমন ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। তবে বেশ কিছু ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। বিডিওদের রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।” বুধবার রাত সাড়ে তিনটে থেকে মহকুমা জুড়েই বৃষ্টি শুরু হয় বলে অভিযোগ। তার আগে বেশ কিছু দমকা হওয়া বইতে শুরু করে। ঝড়ের পরে টানা ৮ ঘন্টা বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিল চাঁচলে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাম্প না চলার কারণে জল সরবরাহও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।