বয়স পেরিয়েও হোমে, তাই নেই প্রশিক্ষণ

হোমে থাকার বয়স পেরিয়ে গিয়েছে। তবু সরকারি উদ্যোগের অভাবে আফটার কেয়ার হোমে ঠাঁই মিলছে না সাত প্রতিবন্ধী আবাসিকের। বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদের পড়াশোনা। এ ভাবে দীর্ঘদিন থাকলে তাঁরা স্বনির্ভর হওয়ার প্রশিক্ষণ কীভাবে পাবেন উঠেছে সেই প্রশ্নও। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর মূক ও বধির আবাসিকদের আফটার কেয়ার হোমে স্থানান্তর করার নিয়ম। কিন্তু গত প্রায় এক বছর ধরে ১৮ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়া সাত জন মূক ও বধির আবাসিক রয়েছেন রায়গঞ্জের সূর্যোদয় হোমে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৬
Share:

হোমে থাকার বয়স পেরিয়ে গিয়েছে। তবু সরকারি উদ্যোগের অভাবে আফটার কেয়ার হোমে ঠাঁই মিলছে না সাত প্রতিবন্ধী আবাসিকের। বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদের পড়াশোনা। এ ভাবে দীর্ঘদিন থাকলে তাঁরা স্বনির্ভর হওয়ার প্রশিক্ষণ কীভাবে পাবেন উঠেছে সেই প্রশ্নও।

Advertisement

সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর মূক ও বধির আবাসিকদের আফটার কেয়ার হোমে স্থানান্তর করার নিয়ম। কিন্তু গত প্রায় এক বছর ধরে ১৮ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়া সাত জন মূক ও বধির আবাসিক রয়েছেন রায়গঞ্জের সূর্যোদয় হোমে। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন হোম কর্তৃপক্ষও। ওই সাত জনের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার উপরে, এর ফলে হোমে থাকা ও পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না একাধিক প্রতিবন্ধী কিশোর কিশোরী।

হোম সূত্রের খবর, গত ১২ মে ও ২৫ জুলাই হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথি দাস সমাজকল্যান দফতরের ডিরেক্টর সোমনাথ মুখোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়ে ওই সাত আবাসিককে স্থানান্তর করার অনুরোধ করেন। সমাজকল্যাণ দফতরের ডিরেক্টর সোমনাথবাবু জানান, তিনি সমস্যার কথা জানেন। তাঁর দাবি, ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সী মূক ও বধিরদের থাকা, খাওয়া, পড়াশোনা ও স্বনির্ভরতা প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগে তৈরি হওয়া রাজ্যে আফটার কেয়ার হোমের অভাব রয়েছে। সেই কারণেই সূর্যোদয়ের ওই সাত আবাসিককে আফটার কেয়ার হোমে স্থানান্তর করতে সাময়িক দেরি হচ্ছে। তিনি বলেন, “সমস্যার সমাধানে খুব শীঘ্রই বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় আফটার কেয়ার হোম থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। রাজ্যের সমস্ত জেলায় আফটার কেয়ার হোম তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

বাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ উদ্ধার করে আদালতের নির্দেশে সূর্যোদয় হোমে ১৮ বছরের কম বয়সী মূক ও বধির কিশোর-কিশোরীদের রাখার ব্যবস্থা করে। দুঃস্থ অভিভাবকদের আবেদনের ভিত্তিতেও মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের সেখানে রেখে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন হোম কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ওই হোমে ৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৫৮ জন মূক ও বধির আবাসিক রয়েছে। তাদের মধ্যে ২১ জন কিশোরী। তার মধ্যে গত প্রায় এক বছর আগে ৬ জন কিশোরী ও এক জন কিশোরের ১৮ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, ওই হোমে ৩ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত মূক ও বধির আবাসিকদের থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা ও খেলাধুলোর প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। ১৮ বছর পেরিয়ে গেলে মূক ও বধির আবাসিকদের ওই হোম থেকে আফটার কেয়ার হোমে স্থানান্তর করার নিয়ম রয়েছে।

পার্থসারথিবাবু জানান, হোমের দু’টি হস্টেলে ৫০ জন মূক ও বধির আবাসিকের থাকার পরিকাঠামো রয়েছে। তবে রাজ্যের অন্য কোথাও মূক ও বধিরদের জন্য সরকারি হোম না থাকায় তাঁরা বছরে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন করে আবাসিককে রাখতে বাধ্য হন। ফলে পরিকাঠামোর অভাবে একদিকে যেমন মূক ও বধিরদের হোমে থাকতে সমস্যা হয়, তেমনই তাদের দেখভাল, পরিচর্যা ও পড়াতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয় হোম কর্তৃপক্ষকে। দীর্ঘদিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ জন দুঃস্থ অভিভাবক তাঁদের ১৮ বছর কম বয়সী মূক ও বধির ছেলে মেয়েদের হোমে রেখে পড়াশোনার ব্যবস্থা করার আবেদন জানালেও পরিকাঠামোর অভাবে সেই আবেদন মঞ্জুর করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, “আফটার কেয়ার হোমে স্থানান্তর না হওয়ায় গত এক বছর ওই সাত জনের পড়াশোনা বন্ধ। এখানে তাঁরা ভবিষ্যতে স্বনির্ভর হওয়ার প্রশিক্ষণও পাচ্ছেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন