গত অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে খুচরো বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্য সরকার উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসনকে জেলা জুড়ে ন্যায্য মূল্যে আলু বিক্রয় কেন্দ্র খোলার নির্দেশ দিয়েছিল। সরকারি নির্দেশ জারি হওয়ার একমাস পরেও ইসলামপুর বাদে জেলার বাকি আটটি ব্লকে এখনও পর্যন্ত প্রশাসন আলু বিক্রয় কেন্দ্র খুলতেই পারেনি বলে অভিযোগ। ইসলামপুর শহরে কেন্দ্রটি খোলা হলেও আলুর সরবরাহের অভাবে তা দু’দিন পরই বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ।
বাসিন্দাদের বক্তব্য, বাজার দরে আলু কিনে তা ভর্তুকিতে নায্য মূল্যের আলু বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে বাসিন্দাদের কাছে ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা প্রশাসনের। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নয়টি ব্লকের বাসিন্দারা খুচরো বাজারে কেজি প্রতি ২০-২২ টাকা দরে আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বাসিন্দাদের ক্ষোভ আঁচ করতে পেরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসই। অবিলম্বে বাসিন্দাদের স্বার্থে নায্য মূল্যের আলু বিক্রয়কেন্দ্র খোলা না হলে কংগ্রেসের তরফে আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
জেলাশাসক স্মিতা পান্ডে বলেন,“একমাস আগে কৃষি বিপণন দফতরের মাধ্যমে জেলার ন’টি ব্লকের বিডিওদের ওই বিক্রয় কেন্দ্রগুলি খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইসলামপুর ও রায়গঞ্জ মহকুমা প্রশাসনও বিডিও ও কৃষি বিপণন আধিকারিকদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। তার পরেও কেন তা খোলা হয়নি তা দেখছি।” তিনি জানান, প্রশাসনের কারও গাফিলতি ধরা পড়লে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উত্তর দিনাজপুর জেলায় এবার ২২ হাজার হেক্টর জমিতে চার লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিন টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এরমধ্যে ৬১ হাজার মেট্রিক টন আলু হিমঘরে ঢোকে। বর্তমানে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আলু হিমঘরে রয়েছে। তার পরেও কেন আলু বিক্রয় কেন্দ্র খোলা যায়নি, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রসঙ্গে জেলা কৃষি বিপণন আধিকারিক নব্যেন্দুমাধব সাহা বলেন, “আমাদের কর্মী ও পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। আর কোথা থেকে আলু কেনা হবে তা প্রশাসন স্পষ্টভাবে কিছু বলেনি। তা ছাড়া কেন্দ্র খোলার কথা ব্লক প্রশাসনের। আমাদের নয়।”
প্রশাসনের তৎপরতার অভাবেই কেন্দ্র খোলা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য। তিনি বলেন,“প্রশাসনের তৎপরতার অভাবেই এখনও আলু বিক্রয় কেন্দ্র খোলা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি।”
আন্দোলনে নামার কথা ভাবে ছ কংগ্রেসরও। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “রাজ্য সরকার যে প্রতিপদেই বাসিন্দাদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে,এ থেকেই তা প্রমাণিত। মূল্যবৃদ্ধি ও রাজ্য সরকারের ভাঁওতাবাজির প্রতিবাদে খুব শীঘ্রই কংগ্রেস জেলাজুড়ে আন্দোলনে নামছে।” প্রশাসনের বিরুদ্ধে টালবাহানার অভিযোগে সরব হয়েছে বিজেপি এবং সিপিএমও।