লেপচা বস্তির এক দিনমজুর মহিলাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত সাব ইন্সপেক্টরকে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করল দার্জিলিং জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষ। দার্জিলিং সদর থানার লেপচা বস্তির বাসিন্দা বীণা লেপচার অভিযোগ ভিত্তিতে সোমবার ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। যদিও আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে বন্ধের হুমকি দিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
দলের দার্জিলিং মহকুমা ইউনিট তরফে জানানো হয়েছে, শুধু থানা থেকে সরিয়ে দিলেই নয়, ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে জাতীয় মহিলা কমিশন ছাড়াও তপফিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনে দ্বারস্থ হবেন বীণাদেবী। যুব মোর্চার তরফে পুলিশকে ২৪ ঘণ্টা সময়সামী বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নইলে সাধারণ ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন যুব মোর্চার নেতারা। এ দিন পুলিশি নিযার্তনের অভিযোগ তুলে যুব মোর্চার তরফে শহরে পোস্টার সাঁটা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে দার্জিলিঙের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সূর্য প্রতাপ যাদব বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। অভিযুক্ত অফিসারকে আপাতত থানার ডিউটি থেকে সরিয়ে ডালি পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
গত রবিবার সকালে বীণাদেবী দার্জিলিং সদর থানার এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, পুরানো একটি মামলার সমনকে সামনে রেখে শনিবার গভীর রাতে তাঁর স্বামী দিলীপ লেপচা’র খোঁজে পুলিশ তাঁদের বাড়িতে হানা দেয়। সেই সময় তাঁরা ঘুমিয়েছিলেন। সোজা ঘরে ঢুকে ওই পুলিশ অফিসার দু’জনের চোখে টর্চের আলো ফেলে জাগিয়ে দেন। তার পরে স্বামীকে গরম পোশাক ছাড়াই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অন্ধকারে ধাক্কাধাক্কিতে স্বামী পালিয়ে গেলে বেজায় ক্ষেপে যান ওই অফিসার। তাঁকে মহিলা পুলিশ কর্মী ছাড়াই ঘরে থেকে বার করে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। তাঁর বাঁ পা ভেঙেও গিয়েছে। বীণাদেবী বর্তমানে দার্জিলিং সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মোর্চার দার্জিলিং মহকুমা কমিটি সহকারি যুগ্ম সম্পাদক এম তামাঙ্গ জানান, বীণাদেবীর অভিযোগকে পুলিশ গুরুত্বই দিচ্ছে না। ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরেও শোকজ, বরখাস্তের মত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের শাস্তির দাবিতে আজ, মঙ্গলবার পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেব। এর পরে আমরা কিছুদিন দেখব, নইলে জাতীয় মহিলা কমিশন এবং জাতি ও উপজাতি কমিশনের দ্বারস্থ হব।
যুব মোচার্র সহকারি সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব লামা জানান, ঘটনাটির সঙ্গে আমরা রাজনীতিকে জুড়তে চাইছি না। কিন্তু আমাদেরও কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। আর মহিলার উপর পুলিশের অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ২৪ ঘণ্টা দেখব নইলে সাধারণ ধমর্ঘটও হতে পারে। যুব মোর্চার মুখপাত্র অমৃত ইয়নজন বলেন, “বীণাদেবীর বাঁ পা ভেঙে গিয়েছে। কম করে একমাস তাঁকে বিছানায় থাকতে হবে। এক দিনমজুরের পক্ষে এই অবস্থায় সংসার চালাল কী দুষ্কর তা বোঝাই হয়। আমরা বীণাদেবীর পাশে আছি।”