মালদহে লুকোনো ঘর থেকে মিলল প্রচুর অস্ত্র

কাঠের বেড়ার উপর টিনের ছাউনি দেওয়া ঘর। দেখে মনে হচ্ছে জ্বালানি কাঠের একটি ভাঙাচোরা গুদাম ঘর। ঘরে মজুত জ্বালানি কাঠও। কিন্তু তার নীচেই লুকনো রয়েছে প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া ও ছ’ফুট উচ্চতার একটি পাকা ঘর। আর এই ঘরের মধ্যেই চলছিল বেআইনি অস্ত্র তৈরির কারবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৬
Share:

কালিয়াচকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়

কাঠের বেড়ার উপর টিনের ছাউনি দেওয়া ঘর। দেখে মনে হচ্ছে জ্বালানি কাঠের একটি ভাঙাচোরা গুদাম ঘর। ঘরে মজুত জ্বালানি কাঠও। কিন্তু তার নীচেই লুকনো রয়েছে প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া ও ছ’ফুট উচ্চতার একটি পাকা ঘর। আর এই ঘরের মধ্যেই চলছিল বেআইনি অস্ত্র তৈরির কারবার।

Advertisement

রবিবার ভোরে মালদহের কালিয়াচক থানার কালিয়াচক-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের করারি চাঁদপুর গ্রামে এই ঘর থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ভিন রাজ্যের এক যুবককে। গত লোকসভা ভোটের আগে কালিয়াচক থানার মোজমপুরেও হদিস মিলেছিল এমনই এক বেআইনি অস্ত্র কারখানার।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের নাম মহম্মদ নজরুল। বাড়ি বিহারের মুঙ্গেরে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে সে জানিয়েছে, পাঁচ দিন আগে সে অস্ত্র তৈরির জন্য কালিয়াচকে এসেছিল। এদিন ভোরে মালদহের ডিএসপি সিদ্ধার্থ দোরজির নেতৃত্বে কালিয়াচক থানার পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়। সেই ঘর থেকে পুলিশ ২০টি ওয়ান শটার, ৫ট নাইন এমএম পিস্তল, তিনটি ৭ এমএম পিস্তল, ৯টি ম্যাগজিন এবং এ ছাড়া বেশ কয়েকটি অসমাপ্ত ওয়ান শটার, স্প্রিং, চারটি হাতুড়ি, লোহার রড কাটার মেশিন, ছেনি সহ বন্দুক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনায় আরও কে জড়িত, তার সন্ধান করা হচ্ছে। বাড়ির মালিকের খোঁজে তল্লাশি হচ্ছে।”

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, ওই কাঠের গুদামের মালিকের নাম হুমায়ুন শেখ। বাড়ি পাশেই। সেখানে তিনি খুচরো ভাবে জ্বালানির জন্য কাঠ বিক্রি করতেন। কিন্তু কাঠের দোকানের নীচে যে একটি ঘর রয়েছে, তা পড়শিরাও জানত না। হুমায়ুন পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁর ভাই কালিয়াচক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁকে জেরা করছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হুমায়ুন কংগ্রেস কর্মী। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র রায় অবশ্য বলেন, “আমাদের কেউ এমন ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

ধৃত মহম্মদ নজরুল পুলিশের কাছে জানিয়েছে, সে মজুরির ভিত্তিতে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করে। সে একটি ওয়ান শটার প্রতি এক হাজার টাকা করে মজুরি পায়। পুলিশের কাছে নজরুল দাবি করেছে, সে শুধু ওয়ান শটার বন্দুকই তৈরি করতে পারে। এই ঘটনায় আরও কয়েকজন বিহারের বাসিন্দা জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাদেরও মজুরির ভিত্তিতে আনা হয়েছিল। হুমায়ুনই তাদের নিয়ে এসেছিল বলে পুলিশ মনে করছে। তবে কী কারণে আগ্নেয়াস্ত্রগুলি তৈরি হচ্ছিল, তা পুলিশ এখনও জানতে পারেনি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এখানে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করে তা বিক্রি করা হত।

কালিয়াচকে একের পর এক অস্ত্র তৈরির কারখানার হদিস মেলায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা। গত লোকসভা ভোটের আগে মোজমপুর থেকে প্রচুর আগ্রেয়াস্ত্র উদ্ধার হলেও কাউকে তখন গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝে মধ্যেই কালিয়াচক থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে, কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই মূল অভিযুক্তরা অধরা থেকে যায়। এদিন ফের অস্ত্র কারখানার হদিস মেলায় সাধারণ বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এই এলাকায় এমন আরও অস্ত্র কারখানা থাকতে পারে। ধৃতকে এদিনই মালদহ জেলা আদালতে হাজির করায় পুলিশ। সরকারি আইনজীবী উৎপল মন্ডল বলেন, “পুলিশ ধৃতকে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেছিল। ভারপ্রাপ্ত সিজেএম কুন্তল ভট্টাচার্য তাকে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন