অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ নেতা মদন তামাঙ্গ খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ১৮ জনকে বৃহস্পতিবার জামিন দিন কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি সুদীপ অহলুওয়ালিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ অভিযুক্ত সোনা শেরপা, দাওয়া শেরপা, সূরজ সিংহ ও অলোককান্তি মণি-সহ ১৮ জনের জামিনের আবেদন শর্তসাপেক্ষে মঞ্জুর করেন। তবে অভিযুক্তদের আইনজীবী শেখর বসু, বিশ্বজিৎ মান্নারা আদালতে জানান, ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, অভিযুক্তেরা দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও সিকিমে ঢুকতে পারবেন না। তাঁরা যে এলাকায় থাকবেন সেই এলাকার থানার ওসি-র কাছে এবং সিবিআই-য়ের আঞ্চলিক অফিসে মাসে একবার করে হাজিরা দিতে হবে। ২০১০ সালের ২১ মে দার্জিলিংয়ের ক্লাব সাইডে দলীয় সভার প্রস্তুতির সময় খুন করা হয় তামাঙ্গকে। খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল ওই ১৮ জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তেরা ২০১৩ সালে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্ট খুনের তদন্ত সিবিআই করবে বলে নির্দেশ দেয়। আইনজীবীরা এ দিন জানান, খুনের ঘটনা নিয়ে সিবিআই-কে নিম্ন আদালতে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে বলেছিল হাইকোর্ট। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সিবিআই সেই রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। সেই কারণে নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে।
অভিযুক্তের তরফে সপ্তাহখানেক আগে কলকাতা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আইনি সেলের সদস্য পেম্বা শেরিং ওলা। এ দিন তিনি বলেন, “অভিযুক্তরা সকলেই এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলে রয়েছেন। সে কারণেই হাইকোর্ট তাঁদের জামিনের আবেদন মঞ্জর করেছে। যদিও তাঁদের গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ রেখেছে হাইকোর্ট।”
গোর্খা লিগ নেতাকে খুনের মামলায় মোর্চা কর্মী সমর্থকদের নাম জড়িয়ে পড়ে। এখনও পর্যন্ত মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় মোট ২৮ জন গ্রেফতার হয়েছে। প্রথমে মামলার তদন্তভার ছিল সিআইডির উপর। সিআইডি ৩০ জনের নামে চাজর্শিট জমা দেয় পরবর্তীতে সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে আরও একজনের নাম চার্জশিটে অর্ন্তভুক্ত করে। মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত নিকল তামাঙ্গ শিলিগুড়ির পিনটেল ভিলেজে সিআইডির হেফাজত থেকে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। আরেক অভিযুক্ত দীনেশ সুব্বা এখনও গ্রেফতার হয়নি বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। ২০১১ সালের ডিসেম্বর অভিযুক্ত দিল কুমার রাইয়ের দেহ উদ্ধার হয়। আরেক অভিযুক্তের পরে মৃত্যু হয়। বাকি ৯ অভিযুক্ত আগেই জামিন পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
এ দিন যাঁরা জামিন পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে তেনজিং কামপাচে, কেসর রাই, সোনা শেরপা, দাওয়া সিঙ্গে শেরপা, সুরজ সিংহ, নগেন্দ্র প্রধান, অরুণ মোক্তান, সঞ্জয় তামাঙ্গ, ভানু রাই, কমল সিংহ, অমল রাই, নরেশ রাই এবং প্রবীণ সুব্বা গত বছরের জুন মাসে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। অন্যদিকে, অলক কান্ত মনি থুলুং, কিসমত ছেত্রী, কেশব রাজ পোখরেল, পুরন থামি, দীনেশ গুরুঙ্গকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশ গ্রেফতার করে। এই অভিযুক্ত ৫ মোর্চা নেতা-সমর্থক গত মে মাসে জামিন পেয়েছিলেন। সে সময় নিহত মদন তামাঙ্গের স্ত্রী ভারতী দেবী কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করে জানায়, সিবিআই মামলার তদন্ত করলেও, সেই সংস্থাকে জামিনের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। আদালত সূত্রের খবর এরপরেই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফের ৫ অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করেন।
মদন তামাঙ্গ হত্যার মূল মামলাটি গত নভেম্বর মাসে মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলা দার্জিলিঙের জেলা ও দায়রা জজের আদালত থেকে কলকাতার নগর ও দায়রা আদলতের প্রিন্সিপাল ডিস্ট্রিক্ট অন্ড সেসন জাজের আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভারতী দেবীর আবেদনের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্দেশে দেয় বলে জানা গিয়েছে। অভিযুক্তরা বর্তমানে কলকাতার জেলে রয়েছে। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি বলেন, “অভিযুক্তরা জামিন পাওয়া মানেই কোনও মামলা শেষ হয়ে যাওয়া নয়। আমরা বিচার পাব বলেই আশা করছি। হত্যার মূল পরিকল্পনা যিনি করেছেন তিনিও ধরা পড়বেন এবং শাস্তি পাবেন বলে বিশ্বাস করি।” এ দিন হাইকোর্টে জামিন পেলেও অভিযুক্তরা কেউই এখন জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে মোর্চার আন্দোলন চলার সময়ে অবরোধ, ভাঙচুর সহ নানা জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রয়েছে। মোর্চার তরফে আইনজীবী তরঙ্গ পণ্ডিত বলেন, “অভিযুক্তদের কারও বিরুদ্ধে ৩টি কারও বা ৭টি করে মামলা রয়েছে। তবে অনেক মামলাই জামিন যোগ্য। হাইকোর্টের মামলার নথি পেলে নিম্ন আদালতেও আবেদন করা হবে।” মোর্চার তরফে অবশ্য এই সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। সাধারণ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ বলেন, “বিচারাধীন বিষয়ে কিছু বলব না।”