যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার অসমের তরুণী

‘যে ভাবেই হোক আমাকে খালপাড়ার যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করুন। বাঁচান। প্লিজ’....এ টুকু বলেই নিজের নামটা জানিয়ে ফোন কেটে দিয়েছিলেন তরুণীটি। শিলিগুড়ির কমিউনিটি পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোনটি আসার পরে তার বিবরণ থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যে মোবাইল থেকে ফোনটি এসেছিল, তা বেশির ভাগ সময়ে বন্ধ থাকায় পুলিশ লক্ষস্থলে পৌঁছতে পারছিল না।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩২
Share:

‘যে ভাবেই হোক আমাকে খালপাড়ার যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করুন। বাঁচান। প্লিজ’....এ টুকু বলেই নিজের নামটা জানিয়ে ফোন কেটে দিয়েছিলেন তরুণীটি। শিলিগুড়ির কমিউনিটি পুলিশের ১০০ নম্বরে ফোনটি আসার পরে তার বিবরণ থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যে মোবাইল থেকে ফোনটি এসেছিল, তা বেশির ভাগ সময়ে বন্ধ থাকায় পুলিশ লক্ষস্থলে পৌঁছতে পারছিল না। তিন দিন ধরে ২৪ ঘন্টা নজরদারি চালিয়ে অবশেষে শুক্রবার গভীর রাতে খালপাড়ার যৌনপল্লিতে অভিযান চালিয়ে অসমের ওই তরুণীকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। শনিবার আদালতের নির্দেশে তাকে একটি হোমে রাখা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, রবিবার তরুণীকে কাউন্সেলিং করানো হবে। ইতিমধ্যেই তাঁর অসমের ডিমাপুরের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে।

শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, ওই তরুণীকে কাজের টোপ দিয়ে ফুঁসলে নিয়ে এসে যৌনপল্লিতে বিক্রির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২ মহিলা সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের একজনের বাড়ি অসমের ডিমাপুরে। অন্য দুজন শিলিগুড়ির খালপাড়ার যৌনপল্লির বাসিন্দা। পুলিশি অভিযানের আগেই শিলিগুড়ির দু’জন পালিয়ে গিয়েছে। ডিমাপুরের অভিযুক্তকে ধরতে অসম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শিলিগুড়িতেও তল্লাশি চলছে।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মাস তিনেক আগে ওই ১৯ বছর বয়সী তরুণীকে অসমের গুয়াহাটিতে ভাল কাজ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে একজন মহিলা ট্রেনে করে শিলিগুড়িতে এনে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন। প্রথম দিকে পালানোর চেষ্টা করায় তরুণীটিকে নজরবন্দি করা হয়। মাসখানেক পরে তরুণীর উপরে নজরদারি কিছুটা কমে। সেই সময়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল সংগ্রহ করেন তরুণীটি। তাঁর কাছ থেকেই কী ভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে সেটা জানতে চান। এর পরেই ১০০ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাওয়ার ছক কষেন তিনি। সুযোগ বুঝে একদিন রাতে ১০০ নম্বরে ফোন করেন ওই তরুণী। কিন্তু, নজরদারি থাকায় মাঝপথেই কথাবার্তা বন্ধ করে মোবাইলটি অফ করে দিতে বাধ্য হন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, বিষয়টি জানতে পেরে শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ভোলানাথ পান্ডেকে জানান অফিসাররা। এডিসিপি ওই ফোনের উপরে নজরদারি চালিয়ে তরুণীকে উদ্ধারের নির্দেশ দেন। শিলিগুড়ির সহকারী পুলিশ কমিশনার (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার ও আইসি অচিন্ত্য গুপ্ত ওই মোবাইল নম্বরের উপরে নজরদারি শুরু করেন। ফোনটির অবস্থান খালপাড়ায় বলে তাঁরা নিশ্চিত হন। শুক্রবার গভীর রাতে ফোনটি ফের সচল হওয়ার খবর পায় পুলিশ। রাত ১১টা নাগাদ এসিপি, আইসির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী খালপাড়ার পতিতাপল্লিতে হানা দেয়। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হইচই পড়ে যায়। পুলিশ ওই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে একটি ঘর থেকে খুঁজে পায় তরুণীটিকে। পুলিশ সূত্রের খবর, গোড়ায় ওই তরুণী স্বেচ্ছায় এই পেশায় এসেছেন বলে কয়েকজন দাবি করেন। কিন্তু পুলিশকে তরুণীটি জানান, তিনি বাড়ি ফিরতে চান। রাতে তাঁকে শিলিগুড়ির মহিলা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই তরুণী জানিয়েছেন, ডিমাপুরের গ্রামে তাঁদের বাড়ি। পরিবারে অভাব থাকায় তিনি ছোটখাট চাকরি করতেন। এলাকার এক মহিলা তাঁকে গুয়াহাটির একটি বড় সংস্থায় ভাল মাইনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পুলিশ ওই মহিলার নাম-ঠিকানাও পেয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন