পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়

র‌্যাগি‌ং নিয়ে কথা বলতেও ভয় পড়ুয়াদের

যে কোনও সময় ডাক পড়তে পারে। এমনই আশঙ্কা গ্রাস করেছে পড়ুয়াদের। তাই প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাগিংয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সোমবার ক্যাম্পাস ছিল পুরোপুরি থমথমে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:০২
Share:

যে কোনও সময় ডাক পড়তে পারে। এমনই আশঙ্কা গ্রাস করেছে পড়ুয়াদের। তাই প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাগিংয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সোমবার ক্যাম্পাস ছিল পুরোপুরি থমথমে।

Advertisement

ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে অ্যান্টি র‌্যাগিং সেলের সদস্যরা ছাত্রছাত্রীদের অভয় দেওয়ার কাজ করেছেন। ছাত্রছাত্রীরা যাতে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন সে ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। কেউই র‌্যাগিংয়ের বিষয় নিয়ে কিছু বলতে রাজি হয়নি। পাশাপাশি ওই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি করে সরব হয়েছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ কোচবিহারের নাগরিকেরাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র‌্যাগিং সেলের আহ্বায়ক তথা রেজিস্ট্রার দেবকুমার মুখোপাধ্যায় এ দিনও বলেন, “এমন ঘটনা আমরা বরদাস্ত করব না। কারও সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে আমাদের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানাতে বলেছি। পাশাপাশি আমরাও নজর রাখছি। কোনও তথ্য হাতে পেলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

এক ছাত্র বলেন, “বার বার সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে আমাদের। কেউ মুখ খুললে পড়াশোনায় ইতি পড়ে যেতে পারে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাই ওই বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না।” শিক্ষকদের অনেকেই অবশ্যই জানিয়েছেন, যদি কারও সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে থাকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র‌্যাগিং সেলে অভিযোগ জানাতে পারেন। সবাই তাঁর পাশে থাকবেন। তাহলে আগামী দিনে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।

গত ২৬ অগস্ট পঞ্চানন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া দিল্লিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অ্যান্টি র‌্যাগিং সেলে অভিযোগ জানান। তাঁর উপরে মানসিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। অভিযোগ, ফাঁকা ক্লাসে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের ডেকে নিয়ে গিয়ে অশ্লীল নাচ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। না পারলেই দিতে হচ্ছে জরিমানা। সিনিয়রদের কয়েক জনের সঙ্গে বহিরাগতরা ওই ঘটনায় অভিযুক্ত বলে দাবি। গত বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং জেলা পুলিশকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরেই শোরগোল পড়ে যায়। অ্যান্টি র‌্যাগিং সেল ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। পুলিশও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত ২৫ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ভবনে পঠনপাঠন শুরু হওয়া উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই দিন ক্লাস ঘরগুলি ফাঁকা ছিল। সে সময়ই প্রথম ঘটনা ঘটে। পরের দুদিনও এমন ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ভবন তৈরির কাজ এখনও চলছে। এর মধ্যেই গত মাসে ১৮ টি ঘর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই ঘরগুলিতে ক্লাস নেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু পাকাপাকি ভাবে স্থায়ী ভবনে উঠতে গেলে আরও ঘর প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের। তাই পুন্ডিবাড়িতেও উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে কাজ চালাতে হচ্ছে তাঁদের। সেখানে অফিসের পাশাপাশি দুটি বিষয়ের ক্লাসও নেওয়া হচ্ছে। তাতে শিক্ষকদের কেউ পুন্ডিবাড়িতে থাকছেন, কেউ স্থায়ী ভবনে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই ফাঁকা ক্লাসে র‌্যাগিং করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কোচবিহার জেলা সভাপতি সাবির সাহা চৌধুরী বলেন, “এমনটা হয়ে থাকলে ঠিক হয়নি। কারা এর সঙ্গে যুক্ত তা খুঁজে বের করা দরকার। আমরা ছাত্রছাত্রীদের পাশে রয়েছি।” এসএফআইয়ের কোচবিহার জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি গোস্বামীর অভিযোগ, “এই আমলে র‌্যাগিং শিক্ষা ব্যবস্থার অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরাই এমন ঘটনার মদত দিচ্ছেন। সে জন্যই ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে মুখ খুলছে না। এক্ষেত্রে প্রশাসন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিক। না হলে আমরা রাস্তায় নামব।” টিএমসিপি অবশ্য ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের দাবি, বাম আমলেই এসব হত। এখন হচ্ছে না। কোথাও এমন অভিযোগ উঠলেই কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন