রাসমেলায় এখনও রয়েছে বিধূভূষণের জিলিপির টান

দেখতে দেখতে দুই দশক পেরিয়েছে। মারা গিয়েছেন বিধূভূষণ নন্দী। মৃত্যু হয়েছে তাঁর বড় ছেলে দিলীপবাবুর। তাঁদের স্মৃতি রয়ে গিয়েছে কোচবিহারের রাসমেলায়। সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতেই বংশ পরম্পরায় কোচবিহারের রাসমেলায় জিলিপি বিক্রি করতে চান নন্দী পরিবার। মেলা শুরুর দিন থেকেই জিলিপির পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন ভেটাগুড়ির বিশ্বজিত্‌ নন্দী, অসিত নন্দী।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৩
Share:

কোচবিহারের রাসমেলায় ভাজা হচ্ছে ভেটাগুড়ির জিলিপি। শুক্রবার হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

দেখতে দেখতে দুই দশক পেরিয়েছে। মারা গিয়েছেন বিধূভূষণ নন্দী। মৃত্যু হয়েছে তাঁর বড় ছেলে দিলীপবাবুর। তাঁদের স্মৃতি রয়ে গিয়েছে কোচবিহারের রাসমেলায়। সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতেই বংশ পরম্পরায় কোচবিহারের রাসমেলায় জিলিপি বিক্রি করতে চান নন্দী পরিবার। মেলা শুরুর দিন থেকেই জিলিপির পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন ভেটাগুড়ির বিশ্বজিত্‌ নন্দী, অসিত নন্দী। বছরের সারা সময় অন্য ব্যবসা নিয়েই মেতে থাকেন তাঁরা। রাসমেলা শুরুর সময় হতেই সব বন্ধ করে দিয়ে শুরু হয়ে যায় রাসমেলায় যাওয়ার প্রস্তুতি। তাঁরা বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি ভুলে যেতে চাই না। তাঁদের হাত ধরেই এই দোকানে আসতাম। দীর্ঘ রাত পর্যন্ত বসে থাকতাম। তাঁদের স্মৃতি ধরে রাখতেই এখনও মেলায় দোকান করি।” সেই দোকান থেকে অবশ্য লাভও হয়। অকপটে অসিতবাবু বলেন, “ভেটাগুড়ির জিলিপির প্রতি মানুষের একটা ভালবাসা আছে। তাই ভিড় হয়, বিক্রিও হয় প্রচুর।”

Advertisement

এবারে তাঁরা দশটি উনুনে জিলিপি ভাজার কাজ করছেন। দোকানে ২০ জনের উপরে কর্মী রয়েছেন। অসিতবাবুরা জানান, ইতিমধ্যেই মেলা জমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভিড়। এখন প্রতিদিন ১২ কুইন্টাল জিলিপি বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের মতো এবারেও জিলিপি ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মেলা দশ দিন পার করলে ওই বিক্রি আরও বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, মেলার শেষের দিকে প্রতি বছর ১৫ কুইন্টাল জিলিপি প্রতিদিন বিক্রি হয়। সারা দিন বিক্রির পরিমাণ একটু কম থাকলেও সন্ধ্যের পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। রাত ১২ টা পর্যন্ত দোকানে বসার জায়গা পেতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।

বৃহস্পতিবার রাতে পরিবারের সঙ্গে মেলায় গিয়েছিলেন টাপুরহাটের বাসিন্দা রতন দাস। তিনি জানান, বাড়ির সবাই বিশেষ করে ছেলেমেয়েরা জেদ ধরেছিল, ভেটাগুড়ির জিলিপি খাবে। তিনি ওই দোকানে নিয়ে যান। তিনি বলেন, “বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, বসার জায়গা পাচ্ছিলাম না।” দিনহাটার আরেক বাসিন্দা আশিস রায় বলেন, “প্রতি বছর মেলায় ভেটাগুড়ির জিলিপির দোকানে যাই। একটা টান তৈরি হয়ে গিয়েছে।”

Advertisement

বিধূভূষণবাবু বহু বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ভেটাগুড়িতে আসেন। তিনি সেখানে জিলিপি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর জিলিপির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। দশ থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরের মানুষ ওই জিলিপি খাওয়ার জন্য ভেটাগুড়িতে যাতায়াত শুরু করেন। বাসিন্দাদের অনেকে জানান, বিধুবাবুর জিলিপি তৈরির নিজস্ব একটা ফমুর্লা ছিল। সেটা তিনি গোপন রেখেছিলেন। সে জন্য তাঁর হাতে তৈরি জিলিপির স্বাদ হয়ে ওঠে অন্যরকম। তিনি রাসমেলায় দোকান দেওয়া শুরু করেন। তাতে নাম আরও ছড়িয়ে পড়ে। দু’দশক আগে বিধুবাবু মারা যান। তাঁর ছেলে দিলীপবাবু সেই দোকানের ভার তুলে নেন। ছয় বছর হল তিনিও মারা গিয়েছেন। এখন তাঁর ছোট ভাই বিশ্বজিত্‌বাবু এবং ছেলে অসিতবাবু ওই দোকান চালান। অসিতবাবু বলেন, “একসময় ভেটাগুড়িতে মিষ্টির দোকান ছিল। আমরা অন্য ব্যবসায় চলে যাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাসমেলা আমাদের টেনে নিয়ে আসে। ওই স্মৃতিগুলো হারাতে চাই না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন