লোকসভা ভোটের জোটসঙ্গীদের সঙ্গে নিয়েই শিলিগুড়ি পুরসভা এবং মহকুমা পরিষদের ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিজেপি। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, কেপিপি এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী বিজেপিকে সমর্থন করেছিল। শিলিগুড়ির ভোট নিয়ে ইতিমধ্যেই তিন দলের সঙ্গে দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বের আলোচনা হয়েছে। শনিবার শিলিগুড়িতে এমনই জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।
বিজেপির ঘোষণার পরেই অন্য দলগুলি মোর্চার গোর্খাল্যান্ড অথবা কেপিপির পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবি নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে। তবে রাহুলবাবুদের দাবি, এলাকার উন্নয়ন এবং নাগরিক পরিষেবার দাবিতেই জোটের প্রার্থীরা ভোটে লড়বে। যদিও দল সূত্রের খবর, মোর্চার সমথর্ন প্রশ্নে, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে সমতলে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তারপরেই দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে গোর্খাল্যান্ডের বিরোধিতা করে বিবৃতি দেওয়া হয়। সে কারণেই লোকসভা ভোটে শিলিগুড়ির সমতল এলাকায় দলের ফল ‘যথেষ্ট’ ভাল হয়েছে বলে দলের নেতাদের দাবি। এ দিন দলের রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবু বলেন, “যে কোনও দলের স্থানীয় বিষয় বা নিজেদের মতো দাবি থাকতেই পারে। জোট মানেই এমন নয় যে সব দাবি মেনে নেওয়া হবে। উন্নয়ন এবং বাসিন্দাদের নাগরিক পরিষেবাই আমাদের মূল দাবি।”
তবে দলেরই একাংশের দাবি, পুরসভায় মোর্চার সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করলে দলকে বিপাকে পড়তে হবে। বিরোধী দলগুলি গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ তুললে, মোর্চাকে পাশে নিয়ে সরাসরি বিরোধিতা করা কখনওই সম্ভব হবে না বলে তাঁদের যুক্তি। বিজেপি সূত্রের খবর, দিল্লির বৈঠকে, শিলিগুড়ির কোন এলাকায় কাদের সংগঠন কেমন রয়েছে, তার সমীক্ষার কথা বলা হয়েছিল। সব দলই নিজেদের মতো মূল্যায়ণ করে আগামী মাসে শিলিগুড়িতে বৈঠকে বসবে। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এ দিন বলেন, “শিলিগুড়ির দুই ভোটে বিজেপির সঙ্গে লড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত ফের বৈঠক হবে।” পুরসভা বা মহকুমা পরিষদের ভোটে গোর্খাল্যান্ডের দাবির পরিবর্তে শুধু উন্নয়নের দাবি তুলে ধরা হবে কিনা, এ প্রশ্নে অবশ্য রোশনবাবু বলেন, “এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।” কামতাপুরি নেতা অতুল রায় অবশ্য এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, “পুরসভা বা পরিষদের ভোটে পৃথক রাজ্যের কোনও সম্পর্ক নেই। এই ভোটে জিতলেও কেউ পৃথক রাজ্য পাবে না। উন্নয়নের দাবিতেই ভোটে লড়া হবে।”
আগামী মাসেই আসন বণ্টনের প্রাথমিক খসড়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আগামী মাসেই উত্তরবঙ্গে প্রশিক্ষণ শিবির করবে বিজেপি। দলে নতুন যাঁরা যোগ দিয়েছেন, তাদের দলের নীতি এবং কার্যক্রম জানাতেই এই উদ্যোগ বলে রাহুলবাবু জানিয়েছেন। তবে তৃণমূল এবং কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বিজেপির জোটসঙ্গীদের নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতমবাবুর কটাক্ষ, “রাহুলবাবুর জোটসঙ্গীরা পৃথক রাজ্যের দাবি থেকে সরে এসেছে বলে আমার জানা নেই। বিজেপিও বাংলাকে ভাগ করতে চায় কিনা আগে পরিষ্কার করুক।” গত মে মাসে শিলিগুড়ি পুরবোডর্র্ থেকে সরে আসে কংগ্রেস। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “২০০৯ সালে লোকসভাতেও রামধনু জোট করে বিজেপি দার্জিলিং লোকসভা জিতেছিল, তারপরে আর দলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই রাহুলবাবুরা আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখলে আমাদের কিছু করার নেই।”