লাড্ডু, যজ্ঞে মোদীর শপথ উদযাপন উত্তরে

দু’দিন আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। রবিবারের মধ্যে আয়োজনও সমস্ত সেরে ফেলা হয়। সোমবার সকাল থেকেই শামিয়ানার নিচে উপকরণ সাজিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজো-পাঠ শুরু করলেন পুরোহিত। চণ্ডীপুজো, শান্তিযজ্ঞ থেকে প্রসাদ বিলি ঘটা করে সমস্তই করা হল। যাঁর জন্য শিলিগুড়ির বাঘা যতীন কলোনিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের এত আয়োজন দিল্লির তখ্তে বসতে তাঁর শপথ গ্রহণ পর্বের জন্য তখন অপেক্ষার শেষ প্রহর গুনছিলেন সকলে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৪ ০১:৫১
Share:

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণের দিনের নানা ছবি। শিলিগুড়িতে যজ্ঞ।

দু’দিন আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। রবিবারের মধ্যে আয়োজনও সমস্ত সেরে ফেলা হয়। সোমবার সকাল থেকেই শামিয়ানার নিচে উপকরণ সাজিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করে পুজো-পাঠ শুরু করলেন পুরোহিত। চণ্ডীপুজো, শান্তিযজ্ঞ থেকে প্রসাদ বিলি ঘটা করে সমস্তই করা হল। যাঁর জন্য শিলিগুড়ির বাঘা যতীন কলোনিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের এত আয়োজন দিল্লির তখ্তে বসতে তাঁর শপথ গ্রহণ পর্বের জন্য তখন অপেক্ষার শেষ প্রহর গুনছিলেন সকলে। শপথ গ্রহণের সেই অনুষ্ঠান দেখতে যজ্ঞস্থলের পাশেই জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানোও হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে এ ভাবেই রাজ্যের অন্যান্য অংশের সঙ্গে মেতে উঠল শিলিগুড়িও। বিকেলে বাঘা যতীন কলোনি থেকে ২, ৪৫, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয় মিছিল বার করা হয়। রাতে ছিল দলের কর্মী-সমর্থক ও পরিচিতদের জন্য নৈশভোজের ব্যবস্থাও। বিকেলে রবীন্দ্রনগর এলাকায় ‘ভারত মাতা’র পুজো করে মোদীর শপথ গ্রহণ এবং তাঁর মঙ্গল কামনা করেন শিলিগুড়ি পুরসভার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি নেতৃত্ব। বিজয় মিছিল এবং লাড্ডু বিলি করাও হয়।

Advertisement

কোচবিহার, জলপাইগুড়ির বিভিন্ন এলাকাতেও এ দিন বিজেপি’র কর্মী-সমর্থকেরা লাড্ডু বিলি, জায়ান্ট স্ক্রিনে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখা নিয়ে আনন্দ করেন। সন্ধ্যায় কোচবিহারে ব্যাঙচাতরা রোডে বিজেপি’র জেলা দফতরের সামনে জায়েন্ট স্ক্রিনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান দেখানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। পথচারী, সাধারণ বাসিন্দাদের অনেকেই সেখানে ভিড় করেন। অভ্র, আবির নিয়ে অকাল হোলিতে মেতে ওঠেন দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা। রাস্তায় স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়। দলের কর্মী সমর্থকেরা পথচারীদের মিষ্টি মুখ করাতে লাড্ডু বিলি করেন। এ দিন প্রতিটি ব্লক অফিসে লাড্ডু বিলি করেন বিজেপি’র কর্মীরা। দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “তিন হাজারের বেশি লাড্ডু বিলি করা হয়েছে।”

জলপাইগুড়িতে বৃষ্টি সেই আনন্দে কিছুটা জল ঢেলেছে। তালমা, মোহিতনগর, ঝাবাড়ি মোড়, বেরুবাড়ি এলাকাতে দলের স্থানীয় কর্মীরা বিকেলের পর ভিন করেন। লাড্ডু বিলি চলে। তালমায় ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক বাপি গোস্বামী। বৃষ্টি হলেও ঘরে বসে থাকতে পারেননি বলেন রায়, রণজি রায়, বিমল সরকার, আনোয়ার হোসেনের মতো ঝা বাড়ি এলাকার বাসিন্দারা। বিমলবাবু লাড্ডু হাতে নিয়ে বলেন, “এটা স্বপ্নের লাড্ডু, উন্নয়নের লাড্ডু। বৃষ্টির জন্য জলপাইগুড়ির বউ বাজারে জায়েন্ট স্ক্রিন বসানো যায়নি। বিজেপি’র জেলা সভাপতি দীপেন প্রামাণিক বলেন, “প্রচুর মানুষ ফোন করে জানতে চান কোথায় অনুষ্ঠান হচ্ছে। বৃষ্টি বাদ সাধল। তার মধ্যেই সকলে আনন্দ করেছেন।”

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ ঘিরে পাহাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে। জিটিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ তথা মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ-সহ তাদের পাঁচ জনের একটি দল এ দিন দিল্লিতে মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকতে পারার জন্য তিনি গর্বিত বলে জানান। পাহাড়ে সিপিআরএম’র এর মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রী মনে করেন বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা পাহাড়বাসীর দাবিদাওয়া আদায়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে। যদিও অখিল ভারতীয় গোর্খালিগের নেতারা দাবি করেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলেও পাহাড়ে বিশেষ কিছু পরিবর্তন হবে না। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি বলেন, “নরেন্দ্র মোদী শিলিগুড়িতে এসেযা বলেছিলেন তাতেই স্পষ্ট তিনি পাহাড়ের বাসিন্দাদের জন্য তিনি বিশেষ কিছু করবেন না।”

শিলিগুড়িতে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ দলের যুব সংগঠনের তরফে শহরের মায়ের ইচ্ছা কালীবাড়িতে নরেন্দ্র মোদীর শতাযূ কামনায় পুজো দেওয়া হয়। মন্দির চত্বরে থাকা দুঃস্থ বাসিন্দাদের মধ্যে কাপড় বিলি করা হয়। ব্যানারে আঁকা মোদীর ছবিতেই চন্দনের টিপ পড়িয়ে ধূপধূনো দিয়ে পুজো-অর্চনা করেন মন্দিরের পুরোহিত। দলের যুব সংগঠনের নেতা বাপি পাল বলেন, “নরেন্দ্র মোদী দীর্ঘজীবী হন। তাঁর শতয়ূ কামনায় আজ সকালে আমরা পুজো দিলাম। তিনি সুস্থ থেকে দেশের মঙ্গলে কাজ করুন আমরা সেই কামনা করি।”

বাঘা যতীন কলোনিতে স্থানীয় বিজেপি নেতা বিদ্যুৎ মজুমদারের বাড়ির কাছে পুজো, যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল। ব্যবসায়ী বিদ্যুৎবাবু ছাড়া তন্দন সাহা, রাম বণিক, দেবাশিস সাহা, অসীম চক্রবর্তীরা সকাল থেকেই পুজোর তোড়জোড় করছিলেন। গেরুয়া কাপড়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল পুজোর জায়গা। ১২ ফুটের অতিকায় মোদীর ছবির সামনে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। পর পর সাজানো রয়েছে মোদীর মুখের আরও অনেকগুলি ছবি। পুরোহিত সন্দীপ চক্রবর্তীর সঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণ করলেন। পুরোহিত সন্দীপবাবু বলেন, “নরেন্দ্র মোদী এবং দেশবাসী সুস্থ এবং মঙ্গলকামনায় এই যজ্ঞ। তার আগে চণ্ডীপুজো, শিবপুজো, নারায়ণ পুজো হয়েছে। নিয়মমেনেই যজ্ঞ এবং পুজোর সমস্ত কিছু হয়েছে।”

প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে এ দিন পুজো, যজ্ঞ এবং খাওয়া-দাওয়ায় আয়োজন হয়েছিল বলে দলের তরফে জানানো হয়। দুপুরে ফল প্রসাদের সঙ্গে ছিল ঘিয়ে ভাজা লুচি, পায়েসের বন্দোবস্ত। উদ্যোক্তাদের অন্যতম বিদ্যুৎবাবু বলেন, “মোদীজী যখম মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন তখনও তাঁর বিজয় কামনায় ঘটা করে যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি জয়ী হয়েছেন। এখন তিনি যাতে সুস্থ সবল ভাবে থেকে দেশের মঙ্গল করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করা হল।”

আলিপুরদুয়ার চৌপথি, লিচুতলা-সহ বিভিন্ন এলাকায় জায়েন্ট স্ক্রিন অথবা টিভি বসিয়ে অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। চৌপথি এলাকায় ভিড় করেন পথচলতি মানুষ। বাজি পুড়িয়ে, মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ করেন বিজেপি সমর্থকেরা। আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলার-সহ সভাপতি মানিক সাহা জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় ১ হাজার সমর্থক বিজেপিতে যোগদান করেছেন। রাখিবন্ধন উৎসবও পালন করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন