সবার চোখ এড়িয়ে একরকম চুপিসারে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র সংসদের দখল নিশ্চিত করল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেল ছাত্র পরিষদ ও এসএফআইয়ের। ঘটনায় তারা এতই দিশাহারা যে রাত পর্যন্ত কে কীভাবে অভিযোগ করবেন, কোথায় যাবেন, আদালতে মামলা করবেন কি না তা ঠিক করতে উঠতে পারেনি। এতদিন এসএফআইয়ের দখলে ছিল এই ছাত্র সংসদ।
ঠিক কী ভাবে ঘটল ঘটনাটি? সোমবার বিকেল সাড়ে চারটের সময় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে নোটিশ দিয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের কথা জানানো হয়। সেই নোটিশেই বলা হয়, মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে দু’টো পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র দেওয়া হবে। এদিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ১৭ টি আসনের মধ্যে সব কটিতে মনোনয়নপত্র তোলে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এসএফআই, ছাত্র পরিষদ, বা বিজেপি’র ছাত্র সংগঠন অখিলভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের ছাত্র নেতারা বিষয়টি জানার পর আর তাদের সদস্যদের একত্র করে মনোনয়ন পত্র তোলার ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি। এতদিন পর্যন্ত সংগঠনের কয়েকজন প্রতিনিধি প্রয়োজনীয় সংখ্যক মনোনয়ন তুলতে পারতেন। কিন্তু এখন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের যোগসাজসের অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, মনোনয়ন তোলার আগে অন্তত ২৪ ঘন্টা সময় কেন দেওয়া হল না? এ দিন বেলা দু’টোয় বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতা-সমর্থকেরা যখন কপাল চাপড়াচ্ছেন, ততক্ষণে আইন বিভাগের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকেরা উত্তরবঙ্গ ক্যাম্পাসে স্লোগান দিয়ে বিজয় মিছিল শুরু করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ বলেন, “২৪ ঘন্টা আগে নোটিশ দিতে হবে এমন নিয়ম নেই। তা ছাড়া সোমবার বিকেলে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো সমস্ত বিষয়টি দেখছে ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন। তাঁরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।” তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক নরেন্দ্র নাগরওয়াল জানান, নিয়ম মাফিক নোটিশ দিয়েই এ দিন মনোনয়নপত্র বিলি করা হয়েছে।
এ দিন আইন বিভাগের মনোনয়ন পত্র তোলা ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার দিন ছিল। সকাল থেকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ছাত্র নেতাদের অনেকেই। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়, পাহাড়ের তৃণমূল নেতা বিন্নি শর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে বিষয়টি পরিচালনা করেন। পাহাড়ের বহু ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেই সুবাদে তাদের সামিল করাতে বিন্নি শর্মাকে দলের তরফেই পাঠানো হয় বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা নির্ণয় বলেন, “নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা।” অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক অনুপ কুমার ভাদানির অভিযোগ, “কর্তৃপক্ষ শাসক দলের হয়ে কাজ করেছে বলে সব হাতের বাইরে চলে গিয়েছে।”
এসএফআই’য়ের জেলা সম্পাদক সৌরভ দাস বলেন, “ আমরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছি।” ক্ষুব্ধ ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রোনাল্ড দে বলেন, “কী আর করব! বাইরে থেকেই আমাদের কাজ করতে হবে এটা বেশ বুঝতে পারছি।”