শিলিগুড়ি হয়ে পাচার হচ্ছে বিদেশের সুপুরি, অভিযোগ

নকশালবাড়ি থেকে শিলিগুড়িগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেন। যাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট কামরাতেই রয়েছে সুপুরির বস্তা। সেগুলির গায়ে লেখা ‘বিএল’, ‘বিপিএস’, ‘বিপি’ এমন নানা সঙ্কেত। আর তার আড়ালেই বিদেশ থেকে আসা সুপুরি পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

সংগ্রাম সিংহ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪২
Share:

এ ভাবেই ট্রেনে নিয়ে যাওয়া হয় বস্তা।—নিজস্ব চিত্র।

নকশালবাড়ি থেকে শিলিগুড়িগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেন। যাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট কামরাতেই রয়েছে সুপুরির বস্তা। সেগুলির গায়ে লেখা ‘বিএল’, ‘বিপিএস’, ‘বিপি’ এমন নানা সঙ্কেত। আর তার আড়ালেই বিদেশ থেকে আসা সুপুরি পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

পুলিশ, শুল্ক দফতর, কেন্দ্রীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর ও সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) একাংশ আধিকারিকেরাই জানাচ্ছেন শিলিগুড়ি লাগোয়া পানিট্যাঙ্কির ভারত-নেপাল সীমান্ত দিয়ে বেআইনি বিদেশি সুপুরি পাচার বাড়ছে। ওই দফতরগুলির অফিসারদের অনেকেরই দাবি, নিয়মিত অভিযান হয়। মাঝেমধ্যেই বেআইনি সুপুরি ধরা পড়ে। কিন্তু, তাও চোরাগোপ্তা সুপুরি পাচার যে চলছে তা অনেক অফিসারই মানছেন।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার সুপুরিই নেপাল হয়ে ভারতে ঢুকছে। বিদেশী সুপুরি দামে অনেক সস্তা। ৩০ থেকে ৪০ টাকা প্রতি কেজি। সেখানে ভারতীয় সুপুরি ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি। বিদেশী সুপুরি মানে অনুন্নত। এগুলো মূলত উত্তরপ্রদেশ বিহার, মহারাষ্ট্রে চলে যায় শিলিগুড়ি হয়ে। এখানে গুটখা ও পানমশলায় এই কম দামের সুপুরিই ব্যবহার হয়। তাই এ দেশে ওই সুপুরির চাহিদা রয়েছে।

Advertisement

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ভারত--নেপাল সীমান্তে কড়াকড়ি কম থাকায় এই সীমান্তকেই বেছে নিচ্ছে পাচারকারীরা। এখানে এসএসবি ও শুল্ক দফতরের নজর এড়িয়ে ভিতরে ঢোকে সুপুরি। অভিযোগ, নকশালবাড়ি স্টেশন লাগোয়া এলাকায় পুলিশের নজর এড়িয়ে ট্রেনে বস্তা বোঝাই হয়ে শিলিগুড়িতে পৌঁছয় সেগুলি। পাচারের কাজে মূলত মহিলাদের ব্যবহার করা হয়। নকশালবাড়ি থেকে শিলিগুড়িগামী ট্রেনে সুপুরির বস্তার দাপটে যাত্রীরা ঠিক মত দাঁড়াতেও পারেন না বলে অভিযোগ। নকশালবাড়ি থেকে শিলিগুড়িতে যে ক’টি ট্রেন আসে তার সবগুলোকেই পাচারের কাজে ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ। তার মধ্যে রয়েছে, নিউ জলপাইগুড়ি-বুনিয়াদপুর, নিউ জলপাইগুড়ি-আলুয়াবাড়ি রোড প্যাসেঞ্জার, নিউ জলপাইগুড়ি-রাধিকাপুর ডেমু প্রভৃতি ট্রেন।

পুলিশ জানতে পেরেছে, নির্দিষ্ট কিছু সাংকেতিক শব্দ ওই সুপারির বস্তায় স্কেচ পেন দিয়ে লেখা থাকে। তা দেখলে সেগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয় না বলে অভিযোগ পেয়েছেন পুলিশের কর্তারাদের অনেকেই। নর্থ বেঙ্গল বিটল নাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাবলু পালের অভিযোগ, “বস্তার উপরে ওই মার্কাগুলো আসলে ব্যবসায়ীদের নাম লেখা থাকে। এতে বোঝা যায় কার মাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” দার্জিলিংয়ের এসপি অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “স্থানীয় স্তরে অনেক সময় এমন হয়। তবে আমার কাছে কেউ এ ধরণের অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এসএসবি, পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর, শহরের একাধিক বড় ব্যবসায়ী ও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাও পাচারের কাজে যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ মিলেছে। এই বেআইনি ব্যবসার ফলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার কেন্দ্রীয় রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন নর্থ বেঙ্গল বিটল নাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাবলু পাল। তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠনের অধীনে প্রায় ৫০০ ব্যবসায়ী রয়েছেন। তার বাইরে বেশ কিছু বেআইনি সুপারির ব্যবসা হচ্ছে। এতে আমাদের মত যাঁরা কর দিয়ে ব্যবসা করছি তাঁদের প্রচুর টাকা ক্ষতি হচ্ছে।” এর আগে বহুবার শুল্ক দফতরে তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এসএসবির গাফিলতি, পুলিশের একাংশের যোগসাজশে শিলিগুড়িকে করিডর করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে ওই সুপুরি।

শুল্ক দফতরের শিলিগুড়ির সহকারী কমিশনার ইফতিকার হালিম দাবি করেন, অভিযান চালিয়ে এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “আমাদের লোকবল কম। মাঝে মধ্যে নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। তাতে অনেক সময় কিছু পরিমাণ সুপারি ধরাও হয়েছে। কিন্তু সব সময় তা সম্ভব হয় না। এতে রাজস্ব ক্ষতি হলেও আমাদের কিছু করার থাকে না।” শিলিগুড়ির এসআরপি দেবাশিস সরকার বলেন, “বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখব। এমন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন