শিল্প বেড়েছে মোহিতনগরে

পাঁচ বছর আগেও মোহিতনগর এলাকা থেকে অরবিন্দ পঞ্চায়েতের কোষাগারে কর বাবদ বছরে ৫০-৮০ হাজার টাকা জমা পড়ত। এখন সেই অঙ্গ কয়েক গুণ বেড়ে গড়পরতা ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কেন এই বিপুল পরিবর্তন?

Advertisement

অনির্বাণ রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৯
Share:

জাতীয় সড়কের ধারে দোকান। ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।

পাঁচ বছর আগেও মোহিতনগর এলাকা থেকে অরবিন্দ পঞ্চায়েতের কোষাগারে কর বাবদ বছরে ৫০-৮০ হাজার টাকা জমা পড়ত। এখন সেই অঙ্গ কয়েক গুণ বেড়ে গড়পরতা ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কেন এই বিপুল পরিবর্তন? গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গেল, বর্ধিত করের সবটাই এসেছে বাণিজ্যিক এবং ছোট-মাঝারি শিল্পোদ্যোগ থেকে। বসবাসের জন্য যে কর গ্রাম পঞ্চায়েতকে দিতে হয় তা সামান্যই। কিন্তু বাণিজ্যিক কোনও উদ্যোগের ক্ষেত্রে অথবা শিল্প-কারখানা তৈরি করলে হলে জমা দেওয়া করের হার অনেকটাই বেশি। গত কয়েক বছরে এলাকায় ছোট এবং মাঝারি কারখানার সংখ্যা বেড়েছে, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোষাগারের জমাও।

Advertisement

৮০ বিঘা জমিতে দেশের একটি নামী ‘ব্র্যান্ডের’ সিমেন্ট প্রস্তুুতকারী সংস্থার কারখানার কাজ শুরু হয়েছে মোহিতনগরে। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, মোহিতনগরের কারখানায় তৈরি সিমেন্ট উত্তরবঙ্গ সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো হবে। সম্প্রতি সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকরা বেশ কয়েকদিন এলাকায় থেকে গিয়েছেন। প্রথমে ছোট মাপের কারখানা তৈরির প্রস্তুতি হলেও, পরবর্তীতে ‘প্রজেক্টের’ আয়তন বেড়েছে। সংস্থা সূত্রের খবর, এলাকার যোগাযোগ পরিকাঠামো, অন্য সুবিধে দেখেই শীর্ষ কর্তারা কারখানার আয়তন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

অনেক ফাঁকা জমি থাকায় শিল্প কারখানা স্থাপনে উদ্যোগীদের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই হয় মোহিতনগরের। জলপাইগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় প্রথম হিমঘর এবং চা পাতা তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে মোহিতনগরেই। তৈরি হয় একটি বড় মাপের পানীয় জলের প্লান্ট এবং চালের কল। মোহিতনহর কলোনি তৈরির সময়েই এই কারখানাগুলি গড়ে ওঠে। তারপর থেকে হিমঘর এবং চা পাতা তৈরির কারখানার সংখ্যা বেড়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন চাল-কল, বেকারি, কাঠের সামগ্রিক প্রস্তুতের কারখানা। মোহিতনগরের পাশেই রয়েছে একটি ঠান্ডা পানীয় প্রস্তুতকারী সংস্থার বটলিং প্ল্যান্ট। এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কিশোর বাগচি বলেন, “প্রথম থেকেই মোহিতনগরে কল-কারখানা গড়ে ওঠার একটা প্রবণতা ছিল। যার জেরে শহরের অর্থনীতিও বদলেছে।” যদিও পরিকল্পনামাফিক সেই পরিবর্তন হয়নি বলে আক্ষেপ জানালেন কিশোরবাবু, তাঁর মতে যেই এলাকায় কল কারখানা হয়েছে, তার আশেপাশে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু পরিকাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে। একই অভিযোগ বাসিন্দাদেরও। দীর্ঘদিন পঞ্চায়েতের সদস্য থাকা মোহিতনগরের বাসিন্দা বাপি গোস্বামী বলেন, “নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে পথবাতির ব্যবস্থা করেন মোহিতনগরের বাসিন্দারা। সে উদ্যোগ যদি সুসংহত ভাবে প্রশাসনের তরফে নেওয়া হত তবে মোহিতনগর আরও সেজে উঠত। মোহিতনগরকে পুরসভা এলাকা ঘোষণার সময় এসেছে।”

Advertisement

পুরসভা ঘোষণার বিষয়ে অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের যে সম্মতি রয়েছে, তা বছর খানেক আগেই জেলা প্রশাসনকে লিখিত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মৌ সূত্রধরের কথায়, “প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছি একবছর আগে। এরই মধ্যে মোহিতনগরের বদলে যাওয়া বেশ টের পেয়েছি। যতদিন না মোহিতনগর পুর এলাকার মর্যাদা পায়, তত দিন গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফেই এলাকায় শিল্পস্থাপনে নির্দিষ্ট সুসংহত পরিকল্পনা করার চেষ্টা করছি। মনে রাখা দরকার, আমাদের এলাকার জনসংখ্যা ৪০ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। রাজ্যে এর চেয়ে ছোট পুরসভা আছে।”

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন