শিলিগুড়িতে দলীয় সভায় রাহুল সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে পরিবর্তনের পরে যে বাস টার্মিনাস, থেকে সিটুর সংগঠন উঠে গিয়েছিল, বুধবার বিকেলে সেখানে ফের কমিটি গঠন করে পতাকা তুলল সিটু। আর একই সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির তিনটি-সহ লাগোয়া কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে ডান-বাম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা দলে যোগদান করিয়ে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পার্টি অফিস উদ্বোধন করল বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের উপস্থিতিতে এ দিন যোগদানকারীদের মধ্যে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদেরই সংখ্যা বেশি ছিল বলে বিজেপির দাবি। একই দিনে দুই ঘটনা শিলিগুড়িতে শাসক দলের ‘শক্তিক্ষয়ে’র প্রবণতাই প্রমাণ করছে বলে বিরোধীদের দাবি।
এ দিন সন্ধ্যায় যে ওয়ার্ডে বিজেপির পার্টি অফিস উদ্বোধন হয়েছে এবং যে ওয়ার্ডগুলি থেকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা দলে যোগদান করেছে বলে বিজেপির দাবি সেগুলি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেবের বিধানসভা এলাকায় অর্ন্তভুক্ত। তাঁর বক্তব্য, “বিজেপির বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। তবে তৃণমূল ছেড়ে অন্য কোনও দলে কেউ গিয়েছে বলেও জানি না। শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত করা যাবে না।”
বিজেপি জানিয়েছে, পার্টি অফিসের উদ্বোধন করে, দলে যোগদানকারীদের হাতে পতাকা তুলে দিয়ে রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবু ফিরে যাবেন। এমনই একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করে জন্য ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের আইটিআই রোডে ছোট্ট সভামঞ্চ বাঁধা হয়েছিল। এ দিন বিকেল থেকেই ভিড়ের জেরে সরু রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভিড়ের চাপে মঞ্চের মাঝখানে কয়েকটি পাটাতন ভেঙেও যায়। বিজেপির দাবি, এ দিন দলে যোগদান করা গীতা আরোরা খান, নবীন ছেত্রী, অশোক চক্রবর্তী, মনোজ দাস সঞ্জয় মুর্মু সহ একাধিক তৃণমূল নেতা শতাধিক কর্মীদের নিয়ে দলে যোগদান করেছেন। ভিড় দেখে রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “এতো দেখছি জনসভার আকার নিয়েছে। এই ভিড়ই প্রমাণ করেছে, তৃণমূলের বিদায় চলে এসেছে। মনে রাখবেন, আগামী ২০১৬তে রাজ্যে বিজেপির সরকার প্রতিষ্ঠা করলেই কাজ শেষ হবে না। রাজ্যকে ভারতের মধ্যে সেরা করাই আমাদের লক্ষ্য।”
সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর জেলা নেতারা এ দিন দাবি করেছেন দু’বছরের বেশি সময় পরে এ দিন পিসি মিত্তল বাস টার্মিনাসে লাল পতাকা উড়ল। বাম আমলে একসময়ে সিটু ছাড়া অন্য কোনও সংগঠন ছিল না টার্মিনাসে। রাজ্যে পালাবদলের পরে চিত্রটা পুরোপুরি পাল্টে যায়। সিটু প্রভাবিত বাস ওয়ার্কাস ইউনিয়েনর নেতা-সদস্য সকলেই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনে যোগ দেন। সংগঠনের অফিসটিও দখলে চলে যায় তৃণমূলের। বুধবার বিকেলে সিটুর দার্জিলিং জেলা নেতা তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠকের উপস্থিতিতি আইএনটিটিইউসির ৫৫ জন নেতা-কর্মী সিটুতে ফিরে আসেন। নতুন কমিটিও গঠন হয়েছে এ দিন।
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির নেতা অলোক চক্রবর্তী পাল্টা দাবি করে বলেন, “যাঁরা এ দিন সিটুতে গিয়েছে, ওদের বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। সে জন্য সকলকেই নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল। এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।” সিটুর ডাবগ্রাম জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “যাঁরা ন্যায্য দাবি দাওয়া করেন, তাঁদের তৃণমূলে নিষ্ক্রিয়ই করে রাখা হয়। এরপরে গোটা দলটিই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। যার শুরু পিসি মিত্তিল বাস স্ট্যান্ড থেকে।”