সিটি অটোর দৌরাত্ম্যে নাজেহাল শহরবাসী

সিটি অটোর দৌরাত্ম্য বেড়ে চললেও পুলিশ নির্বিকার বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনের বেলা হিলকার্ট রোড, সেবক রোডের মতো ব্যস্ততম রাস্তায় একাংশ অটো চালক অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে চলাফেরা করেন বলে অভিযোগ। রাত হলে তো ৮ জনের অনুমতি থাকা অটোতে ১৫ জন যাত্রী চাপিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। প্রধান সড়কের উপরে দাঁড় করিয়ে চলে যাত্রী ওঠানো-নামানো। ‘বাইরের লোক’ বুঝতে পারলে অতিরিক্ত হারে ভাড়া আদায় করা হয়।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৫
Share:

নিয়মের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মতো তোলা হয় যাত্রী। নিজস্ব চিত্র।

সিটি অটোর দৌরাত্ম্য বেড়ে চললেও পুলিশ নির্বিকার বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনের বেলা হিলকার্ট রোড, সেবক রোডের মতো ব্যস্ততম রাস্তায় একাংশ অটো চালক অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে চলাফেরা করেন বলে অভিযোগ। রাত হলে তো ৮ জনের অনুমতি থাকা অটোতে ১৫ জন যাত্রী চাপিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। প্রধান সড়কের উপরে দাঁড় করিয়ে চলে যাত্রী ওঠানো-নামানো। ‘বাইরের লোক’ বুঝতে পারলে অতিরিক্ত হারে ভাড়া আদায় করা হয়। যে দূরত্বের ভাড়া ৭ টাকা সেখানে ১০ টাকা, আবার ১৫ টাকা দূরত্বের ভাড়া ২০ টাকা আদায় করা হয় বলেও অভিযোগ। অনেকে রুট মেনে চলাচল করে না। কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টে হুমকির মুখে পড়তে হয় বলেও দাবি।

Advertisement

শিলিগুড়িতে গত দুর্গা পুজোর সময় থেকে সিটি অটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি। আরও অভিযোগ উঠেছে, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই এমন সব ঘটনা ঘটলেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয় না। বিশেষ করে এনজেপিগামী অটোগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা বেশি। কী কারণে ট্রাফিক পুলিশ গা ছাড়া মনোভাব নিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, কয়েক মাস আগেও ট্রাফিক পুলিশ নিয়ে সিটি অটো চালকদের মধ্যে একটা ভয় ছিল। বেআইনি কাজ করলে ট্রাফিক ব্যবস্থা নেবে এই আশঙ্কায় আইন মেনে চলতেন চালকরা। যাত্রীদের ওই অভিযোগ মেনে নিয়েছেন সিটি অটো মালিক-চালকদের বিভিন্ন সংগঠন। অটো চালক ও মালিকদের সংগঠনের পক্ষে থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, প্রশাসনের তরফে ভাড়ার কোনও চার্ট দেওয়া হব না। তারা নিজেরাই বাস ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অটো ভাড়ার তালিকা তৈরি করেছেন।

এনজেপিতে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গেই অধিকাংশ অটো চালক ও মালিকরা রয়েছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে যাত্রীদের অভিযোগ নিয়ে একটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। সংগঠনের নেতা বিজন নন্দী বলেন, “ফোন নম্বর সহ লিফলেট বিভিন্ন জায়গায় সেঁটে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে কথাও বলেছি। কোনও যাত্রীকে যাতে হয়রানির মধ্যে পড়তে না হয়। সেটা আমরা দেখছি।” শিলিগুড়ি সিটি অটো অপারেটর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক নির্মল সরকার বলেন, “একাধিক বার প্রশাসনের কাছে ভাড়ার তালিকা প্রকাশের জন্য দরবার করেছি। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে নিজেরাই তালিকা তৈরি করেছি। আর অটো চালকদের আইন ভাঙার ব্যাপারে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এক জনের জন্য অনেক চালকের বদনাম হচ্ছে।” শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যাম সিংহ বলেন, “সর্বত্রই ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে। কি কারণে এমন অভিযোগ উঠছে তা খতিয়ে দেখা হবে।” শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক দীপাপ পিয়া বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

শিলিগুড়িতে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার অটো চলাচল করে। কিছু অটো কোর্ট মোড় থেকে চলাচল করে। আবার কিছু অটো এনজেপি থেকে চলাচল করে। প্রতিদিন এনজেপি থেকে কয়েক হাজার মানুষ অটো চেপে শিলিগুড়িতে যান। তার মধ্যে অনেক পযর্টক থাকেন। যারা শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং, সিকিমে যাতায়াত করেন। অটো চালকদের একাংশ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নেন বলে অভিযোগ। এনজেপি থেকে এনটিএস মোড়ের ভাড়া কারও কাছ থেকে ৭ টাকা আবার কারও কাছ থেকে ১০ টাকা নেন। এনজেপি থেকে হাসমি চকের ভাড়া ভাড়া কারও কাছ থেকে ১০ টাকা, কারও কাছে ১৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড়ের ভাড়াও কখনও ১৫ কখনও ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একাংশ অটো বাগডোগরা পরিবর্তে দার্জিলিং রুটে যাতায়াত করে। একই ভাবে অনেকে শালুগাড়ার পরিবর্তে দুই মাইল পর্যন্ত চলাচল করে। মালদহ থেকে এক যাত্রী অমিত দাস এনজেপি হয়ে শিলিগুড়ি যান। তিনি বলেন, “একে তো গাড়িতে ১৫ জন যাত্রী তোলা হয়েছিল। তার উপর হাসমি চক পর্যন্ত ১৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হল। ভাড়া বেড়েছে কি না জিজ্ঞেস করে কোনও উত্তর পেলাম না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন