স্ত্রীকে খুন করে স্বামী আত্মঘাতী

স্ত্রীকে গলা কেটে খুন করে নিজেও সিলিং থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন এক যুবক। রবিবার সকালে শিলিগুড়ি থানার রবীন্দ্রনগরে ওই দম্পতির দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশের অন্তত এমনটাই অনুমান। ওই দম্পতির নাম সুস্মিতা সরকার (২৩) এবং প্রাণেশ সরকার (২৬)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৪২
Share:

স্ত্রীকে গলা কেটে খুন করে নিজেও সিলিং থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন এক যুবক। রবিবার সকালে শিলিগুড়ি থানার রবীন্দ্রনগরে ওই দম্পতির দেহ উদ্ধারের পরে পুলিশের অন্তত এমনটাই অনুমান। ওই দম্পতির নাম সুস্মিতা সরকার (২৩) এবং প্রাণেশ সরকার (২৬)। দাম্পত্য কলহের জেরেই ঘটনা বলে পুলিশের ধারণা। মৃতদেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই ঘর থেকে হাতে লেখা কাগজের টুকরোও উদ্ধার হয়েছে। তাতে বাংলায় লেখা ‘আমি মারলাম’। নিহতের বাপের বাড়ির লোকজনের দাবি, সেটি মৃতার স্বামীর হাতের লেখা।

Advertisement

এ দিন এলাকায় যান শিলিগুড়ি পুলিশের এডিসিপি ভোলানাথ পাণ্ডে, এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার এবং শিলিগুড়ি থানার আইসি অচিন্ত্য গুপ্ত। এডিসিপি বলেন, “ওই যুবক স্ত্রীকে খুন করেই আত্মঘাতী হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। ময়নাতদন্ত হচ্ছে। দুই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।” পুলিশ একটি খুন ও একটি আত্মহত্যার মামলা রুজু করছে। নিহত মহিলার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মৃতের দাদা-বৌদি, বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেও বধূ নির্যাতনের মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে সুস্মিতা ও প্রাণেশের বিয়ে হয়। তাদের দুই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। গত দু’দিন ধরে সে এলাকাতেই দাদুর বাড়িতে ছিল। প্রাণেশের আদি বাড়ি কোচবিহারের বাণেশ্বরে। শিলিগুড়ি বিধানমার্কেট এলাকায় তাঁর স্টেশনারি দোকান রয়েছে। সুস্মিতার বাড়ি শিলিগুড়িরই রবীন্দ্রনগরে। তবে প্রাণেশ ও তাঁর দাদা ভক্তিনগরের সুকান্তনগরে ভাড়া থাকতেন। বিয়ের পর দম্পতি সেখানেই থাকতেন। সুস্মিতার পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে টাকার জন্য অত্যাচার শুরু হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসে প্রাণেশের বিরুদ্ধে ভক্তিনগর থানায় একটি বধূ নির্যাতনের মামলা হয়। গ্রেফতারও হয়েছিলেন প্রাণেশ। পরে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনায় বসে বিবাদ তখনকার মতো মিটিয়ে নেওয়া হয় বলেও প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। এর পরে সুস্মিতার পরিবারের লোকজন মেয়ে জামাইকে রবীন্দ্রনগর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে এনে রাখেন।

Advertisement

সুস্মিতার বাবা সুভাষ দত্ত বলেন, “বিয়ের পর থেকেই মারধর করত জামাই। কখনও টাকার দাবি, কখনও জিনিসের দাবিতে। চাহিদা মতো সমস্ত মিটিয়ে দেওয়ার পরেও অত্যাচার কমেনি। জামাইয়ের অবৈধ সম্পর্ক ছিল বলে জেনেছিলাম। মেয়ের কথা ভেবে সব মেনে নিই। শনিবার বিকেলেও মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়। অস্বাভাবিক কিছু ছিল না।”

প্রাণেশের দাদা কুমুদরঞ্জনবাবু বলেন, “ভাইয়ের অবৈধ সম্পর্কের কথা মিথ্যা।” এদিন ঘটনার খবর পেয়ে কুমুদরঞ্জনবাবু ওই বাড়িতে গেলের সুস্মিতার পরিবারের লোকজন তাঁর উপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ তাঁকে সরিয়ে দেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাড়া বাড়ির একতলায় থাকতেন ওই দম্পতি। বাড়িতে ঢোকার একটি রাস্তা রয়েছে। সেখানে লোহার গেট রয়েছে। বাইরের লোক ঢুকতে গেলে ওই রাস্তাটিই ব্যবহার করতে হয়। তার একটি চাবি ছিল ওই দম্পতির কাছে। এদিন সকালে ১০টা নাগাদ জলের মিস্ত্রি কাজ করতে এলে গেট বন্ধ থাকায় ডাকাডাকি করেও সাড়া পাননি। তিনি দোতলায় থাকা বাড়ির মালিককে ডাকলে তিনি নীচে নেমে ওই গেট খুলে দেন। বাড়ির মালিক আরতি সাহা জানান, সাড়া না পেয়ে প্রাণেশের মোবাইলে ফোন করা হয়। তাও বেজে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, “সুস্মিতার বাবাকে এর পরে টেলিফোন করি। শনিবার কখন ওরা ঘরে ঢুকেছিল, খেয়াল করিনি।”

পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িওয়ালার কাছ থেকে খবর পেয়ে সস্ত্রীক সুভাষবাবু মেয়ের ভাড়া বাড়িতে এসে দরজা ভাঙেন। সুস্মিতার দেহ বিছানায় উপুড় হয়ে পড়েছিল। রক্ত ভেসে গিয়েছিল বিছানা। মাথার পিছনেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। পাশেই সিলিং থেকে নাইলনের দড়ি দিয়ে ঝুলছিল প্রাণেশের দেহ। দুই জনের শরীরে জামাকাপড় ঠিকঠাক ছিল না। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ রক্তমাখা ফল কাটার ধারাল ছুরি এবং কাঠের বাটাম উদ্ধার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন