সুবর্ণ জয়ন্তীতে উদ্বেল দৃষ্টিহীনদের স্কুল

কেউ মুম্বইয়ে বিমান সংস্থায় কর্মরত। কেউ মধ্যপ্রদেশে বেসরকারি সংস্থার প্রকল্প আধিকারিক। কেউ কোচবিহারে হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। সকলেই দৃষ্টিহীন। দু-দশকের বেশি সময় পরে ফের তাঁরা ফিরে এলেন তাঁদের ছেলেবেলায় তাঁদের পড়াশোনার জায়গায়। চেনা স্পর্শে যেন ফিরে এল ফেলে আসা দিনগুলো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৪
Share:

কেউ মুম্বইয়ে বিমান সংস্থায় কর্মরত। কেউ মধ্যপ্রদেশে বেসরকারি সংস্থার প্রকল্প আধিকারিক। কেউ কোচবিহারে হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। সকলেই দৃষ্টিহীন। দু-দশকের বেশি সময় পরে ফের তাঁরা ফিরে এলেন তাঁদের ছেলেবেলায় তাঁদের পড়াশোনার জায়গায়। চেনা স্পর্শে যেন ফিরে এল ফেলে আসা দিনগুলো।

Advertisement

শনিবার কোচবিহারের এনইএলসি দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উত্‌সব শুরু হয়। ওই স্কুলেই পড়াশোনা করতেন তাঁরা সকলে। স্কুলের উত্‌সবে যোগ দিয়ে আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠলেন তাঁরা। বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের উত্‌সাহিত করলেন। অধ্যক্ষ মনবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “স্কুলের ৫০ বছর পুর্তি উপলক্ষে যে আমরা বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের এক করতে পেরেছি, তাতে আমরা আপ্লুত। এখনকার পড়ুয়ারাও যাতে ভবিষ্যতে ভাল কিছু করতে পারেন সে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” সুইডেন থেকে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন লিয়েনা নামে এক মহিলা। তিনি বলেন, “দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য স্কুলটি যেভাবে কাজ করছে তাতে আমি খুব খুশি। স্কুলের পাশে সবসময় থাকতে চাই।”

১৯৬৫ সালে ১০ জানুয়ারি স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয়। নরওয়ের বাসিন্দা হোডেন দেশে এসে দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু করার তাগিদে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন স্কুলে ছিল ৪ জন ছাত্র এবং এক জন শিক্ষক। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সংখ্যা। পরে সুইডেনের একটি সংস্থা ওই স্কুলের দায়িত্ব নেয়। নানা জায়গা থেকে সহযোগিতা মিলতে থাকে। মনবাহাদুরবাবু ওই স্কুলের সরকারি স্বীকৃতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেন। ২০০৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রাথমিক পর্যন্ত ওই স্কুলের অনুমোদন দেয়। স্কুলে এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ৬৯ জন ছাত্রছাত্রীকে পড়ান ২২ জন শিক্ষক। তবে প্রাথমিকের বাইরে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের দায়িত্ব স্কুলেরই। মনবাহাদুরবাবু বলেন, “অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকের কাছেই সাহায্য চাইছি। তার উপরেই চালাতে হচ্ছে।”

Advertisement

১৯৬৫ সালের শুরুতেই স্কুলে ছাত্র ছিলেন জীবনকুমার দাস। তিনি এখন আলিপুরদুয়ার সুবোধ সেন স্মৃতি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। আরেক ছাত্র বিপদতারন দাস ভোগারকুঠি হাইস্কুলের সহকারি শিক্ষক। তাঁরা বললেন, “এই স্কুলকে ভুলতে পারি না। সেই ছোটবেলায় এখানে এসেছি। এখানেই ছিল পড়াশোনা খাওয়াদাওয়া, রাতে ঘুমানো সবই। শিক্ষক-শিক্ষিকারা সবাই যেন মায়ের মতো স্নেহ করতেন।” স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র জয়দেব দাস বৈষ্ণব মুম্বইয়ে একটি বিমান সংস্থায় কর্মরত। তিনি বলেন, “আমাদের যে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে সেই শিক্ষা তো এই স্কুল থেকেই পেয়েছি। চাই এখনকার ছাত্রছাত্রীরাও সকলেই প্রতিষ্ঠিত হোক।”

এ দিন নাচ, গান-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন