মুখে কালি লাগিয়ে দেওয়া হয় স্বাস্থ্যকর্তার। —নিজস্ব চিত্র।
মালদহের সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের মুখে কালি লাগিয়ে দেওয়া হল। এ দিন চাঁচল হাসপাতালের সুপারকে বদলি করা নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে ক্ষোভ জানাতে গিয়েছিল চাঁচল নাগরিক মঞ্চ। তাঁরা স্বাস্থ্যকর্তাদের স্মারকলিপিও দেন। প্রায় ৫ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখা হয় স্বাস্থ্যকর্তাদের। সেই সময়েই কয়েকজন সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন বিশ্বাসের মুখে কালি লাগিয়ে দেয়। নাগরিক মঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকর্তার মুখে কালি লাগানোর ঘটনায় তাঁরা যুক্ত নন। বরং তাঁদের বদনাম করার জন্যই এমন কাজ করা হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মন্ডল অবশ্য বলেন, “আন্দোলনের নামে যা হল, তা নোংরামি ছাড়া কিছু নয়। এসব মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনকেও জানানো হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে। সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে তা জানানো হয়েছে।”
গত বছর অক্টোবরে চাঁচল হাসপাতালে সুপার পদে কাজে যোগ দেন সুবর্ণ গোস্বামী। তিন মাস পরে তাঁর বদলির নির্দেশ ঘিরে আন্দোলনে নামে অরাজনৈতিক ওই মঞ্চ। তাঁরা দাবি করেন, কাজের মানুষ সুবর্ণবাবুকে বদলি করা যাবে না। তাঁর বদলি রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি জাতীয়, রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও হয়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি চাঁচল হাসপাতালে এসিএমওএইচ, বিএমওএইচকে ঘেরাও করে টানা বিক্ষোভও হয়। তার জেরে সুপারের বদলি রদ করা হল বলে প্রশাসনের তরফে মাইকে ঘোষণা করে তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের সময় সুবর্ণবাবুকে বাঁকুড়ায় ডেপুটি সিএমওএইচ পদে বদলি করে দেওয়া হয়। তিনি সেখানে কাজে যোগও দিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েও কেন সুপারের বদলি হল, কেন নতুন সুপার নিয়োগ হল না সেই দাবি-সহ হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে এদিন স্মারকলিপি দিতে যায় নাগরিক মঞ্চ।
হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, নাগরিক মঞ্চের লোকজনের মধ্যেই থাকা কয়েকজন ওই সময়ে সেই স্বাস্থ্যকর্তার ঘরে ঢুকে তাঁর মুখে কালি লাগিয়ে কার্যত দৌড়ে বার হয়ে যায় বলে অভিযোগ। যাঁরা কালি লাগিয়েছে তাদের দাবি ছিল, সুপারকে বদলি করার ব্যাপারে ওই স্বাস্থ্য কর্তা কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বলেই তাঁর মুখে কালি মাখানো হয়েছে। স্মারকলিপিকে ঘিরে আইন শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখতে সেই সময় হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ ছিল। তবে ওই স্বাস্থ্যকর্তার ঘরের সামনে বা কাছে কোনও পুলিশ ছিল না বলে হাসপাতাল কর্মীরা জানান। চাঁচল থানার আইসি তুলসীদাস ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। আর এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগও জমা পড়েনি।”
পরে ঘটনার জেরে হতভম্ব স্বপনবাবু শুধু বলেন, “যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেই বলব। সেখান থেকে নির্দেশ মেনে কাজ করব। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারছি না।” ঘটনার নিন্দা করেছেন চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে-ও। তিনি বলেন, “বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন হতেই পারে। কিন্তু আন্দোলনের নামে কারও মুখে কালি লেপে দেওয়ার ঘটনাকে কখনওই সমর্থন করা যায় না। স্বাস্থ্য কর্তারা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন।” নাগরিক মঞ্চের আন্দোলনে এদিন যোগ দিতে যান চাঁচলের কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মেহবুবও। তিনি হাসপাতালে ঢোকার আগেই ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেন, “হাসপাতালে ঢুকেই ঘটনার কথা শুনেছি। মঞ্চের দাবি দাওয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে। তাই হাসপাতালে যাই। কিন্তু যা হয়েছে অত্যন্ত নিন্দ্যনীয়।”
আর বাঁকুড়া থেকে হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার সুবর্ণবাবু বলেন, “বিষয়টি শুনে খুব খারাপ লাগছে। খুব বাজে ব্যাপার। এটা কোনও আন্দোলন হতে পারে না।” সব অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়ে ষড়যন্ত্রের পাল্টা অভিযোগ করেছেন নাগরিক মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক দেবব্রত ভোজ ও মনওয়ারুল আলম। তাঁরা বলেন, “কাজে যোগ দিয়েই হাসপাতালের চেহারা অনেকটাই পাল্টে দিয়েছিলেন সুপার সুর্বণবাবু। কিন্তু আশ্বাস দেওয়ার পরও নির্বাচনের মধ্যে ষড়যন্ত্র করেই সুপারকে বদলি করা হয়েছে। তাই এদিন কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য যাই। কারা স্বাস্থ্যকর্তার মুখে কালি লাগিয়েছে আমরা তা জানি না। মঞ্চের নাম বদনাম করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা কেউ করেছে বলে মনে হচ্ছে। তদন্ত হওয়া দরকার।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপবাবু জানান, সুপারের বদলি ঘিরে তাঁর বা এসিএমওএইচের কোনও ভূমিকা নেই। সবই স্বাস্থ্যভবন থেকেই করা হয়েছে। ওখানে ভবন তৈরির কাজ চলছে। ভবন হলেই চিকিৎসক সহ বাকি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর আশ্বাস, নতুন সুপার নিয়োগের বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে।