সংস্কারে কেন্দ্র-রাজ্য দোষারোপ, বন্ধ পড়ে জাতীয় সড়ক

গত চার বছর ধরে বন্ধ শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাতায়াতের অন্যতম রাস্তা ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কটি। কেন তা সারাতে দেরি হচ্ছে, তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে দোষারোপ করা হলেও গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) এবং দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার অভিযোগের তির রাজ্যের দিকে। অহলুওয়ালিয়া বলেন, “রাস্তাটি পূর্ত দফতর দেখভাল করছে। এখনও পাহাড়ের এই রাস্তাটি জিটিএতে হস্তান্তর হয়নি। পূর্ত দফতরেরও ঢিলেমি ছিল। দ্রুততার সঙ্গে কাজ হয়নি বলে মনে হচ্ছে।”

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪৩
Share:

শিলিগুড়ি-দার্জিলিং যাওয়ার ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক বেহাল। —ফাইল চিত্র।

গত চার বছর ধরে বন্ধ শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাতায়াতের অন্যতম রাস্তা ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কটি। কেন তা সারাতে দেরি হচ্ছে, তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে দোষারোপ করা হলেও গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) এবং দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার অভিযোগের তির রাজ্যের দিকে। অহলুওয়ালিয়া বলেন, “রাস্তাটি পূর্ত দফতর দেখভাল করছে। এখনও পাহাড়ের এই রাস্তাটি জিটিএতে হস্তান্তর হয়নি। পূর্ত দফতরেরও ঢিলেমি ছিল। দ্রুততার সঙ্গে কাজ হয়নি বলে মনে হচ্ছে।” ইতিমধ্যে আগামী সেপ্টেম্বরে দার্জিলিঙে আসার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি। রাস্তার কাজ দ্রুত শুরু করার ব্যাপারে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন বলে দাবি অহলুওয়ালিয়ার। রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, ২০১৫ সালের পুজোর আগেই খুলতে পারে রাস্তাটি। সাংসদ জানান, গত ৭ এবং ১৩ অগস্ট দিল্লিতে কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই আরেক দফা বৈঠক হবে। তার পরে দার্জিলিঙে আসবেন গড়কড়ী।

Advertisement

চলতি মাসেই দিল্লিতে গিয়ে জিটিএ-র প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানিয়েছে। জিটিএ সদস্য তথা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “আমরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চার বছর ধরে রাস্তার বন্ধের কথা জানিয়েছি। রাজ্য সরকার যতটা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা করেনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিষয়টি দেখছেন। আমরা আশাবাদী, এবার দ্রুত কাজ হবে।” তবে রাজ্যের অভিযোগ, রাস্তাটি কেন্দ্রের অধীনে থাকলেও রাজ্য পূর্ত দফতর কাজ করে। টাকা বরাদ্দ থেকে শুরু করে টেন্ডার, মূল্যায়ন, বিশেষজ্ঞদের দিয়ে দেখানো, রিপোর্ট তৈরি করতে কেন্দ্র দেরি করেছে। এর মধ্যেই ধস ও ভূমিকম্পের জেরে ওই দুই এলাকায় যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে কোনওভাবেই রাস্তা টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। একাধিকবার সংস্কারের কাজ বিফলেও গিয়েছে। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে চির ধরে প্রচুর জল ঢুকে যাওয়ায় বিভিন্ন সময়ই তা ধসে পড়ে যাচ্ছে। জিটিএ-র এক সদস্যেরও দাবি, টাকার সমস্যার জন্য কাজে দেরি হচ্ছে। রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের মধ্যস্থতায় জাপানের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চাওয়া হয়। সম্প্রতি জাপান সরকারের ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’র বা জিকা’র একটি প্রতিনিধি দল দার্জিলিং ঘুরে গিয়েছেন। এলাকায় টয় ট্রেনের লাইন উড়ে গিয়েছে এবং তিনধারিয়া ওয়ার্কশপ বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গিয়েছে। ফলে রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব রয়েছে। রাজ্যের পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়কর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার নির্মল মণ্ডল বলেন, “আমরা যখন যা হয়েছে কেন্দ্রকে জানিয়েছি। টাকা, টেন্ডার, বিশেষজ্ঞ নিরীক্ষণ সবাই কেন্দ্র থেকে হয়েছে। শেষবার প্রকল্পের খবচ-সহ বিস্তারিত রিপোর্ট জুন মাসে পাঠানো হয়েছে। আমাদের তরফে কোনও ঢিলেমি নেই।” তবে আগামী বছরের আগে রাস্তাটি খোলা সম্ভব নয় বলেও এদিন তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। তিনধারিয়া-মহানদী এলাকার জিটিএ সদস্য প্রভা ছেত্রী বলেন, “যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তা যথাযথ ছিল না। এই নিয়ে বর্তমান কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে কথা চলছে। পূর্ত দফতরের বাস্তুকাররা জানিয়েছেন, বৃষ্টি কমলে কাজ শুরু হবে।”

২০১০ সালের জুনে ওই জাতীয় সড়কের পাগলাঝোরায় প্রায় ৪৫০ মিটার এলাকা ধসে যায়। প্রায় ২২ কোটি টাকা দিয়ে কাজ শুরু হয়। রাস্তা খোলাও হয়। কিন্তু ২০১১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে তিনধারিয়ায় ভূমিকম্পে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা পুরোপুরি উড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় দার্জিলিঙগামী ওই জাতীয় সড়ক। ২০১৩ সালে ফের পাগলাঝোরার ধসে ক্ষতি হয়। সে জন্য বর্তমানে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সাড়ে ৩ কোটি টাকায় কাজ চলছে। তিনধারিয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক ৮৩ কোটি টাকা মঞ্জুর করায় কাজ শুরু হয়। তবে বর্তমানে এলাকার যা অবস্থা তাতে পুরো জাতীয় সড়কটি স্বাভাবিক করতে বরাদ্দ পরিমাণ বেড়ে ১৭৪ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন