তরুণ দেবনাথের তোলা ছবি।
সংস্কারের অভাবে গত পাঁচ বছর ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতরের অধীনস্থ রায়গঞ্জ ট্যুরিস্ট লজ। প্রতিদিনই কুলিক পক্ষিনিবাসে বেড়াতে আসা বহু পর্যটক ট্যুরিস্ট লজে না থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের রায়গঞ্জ শহরের বিভিন্ন হোটেলে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ১৯৮২ সালে রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাস সংলগ্ন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে পাঁচ বিঘা জমির উপর ট্যুরিস্ট লজটি গড়ে ওঠে। ট্যুরিস্ট লজ রক্ষণাবেক্ষণের এবং পর্যটকদের দেখাশোনার জন্য কর্মী ও আধিকারিক মিলিয়ে ১০ জন রয়েছেন।
ট্যুরিস্ট লজে ম্যানেজার সুশান্ত দাস বলেন, “সংস্কারের অভাবে গত পাঁচ বছর ধরে ট্যুরিস্ট লজের একটি বড় অংশ বেহাল হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন হাতেগোনা কয়েকজন পর্যটক এখানে রাত কাটাচ্ছেন। এতে লজের অফিসার, কর্মীদের একাংশ দিনভর বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।” তিনি জানান, কয়েকমাস আগে রাজ্য পর্যটন দফতরে লজের পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রস্তাব পাঠানো হয়। পক্ষিনিবাসে পরিযায়ী যখন থাকে না, সেই সময় পর্যটকেরা যাতে আসেন তাই বন দফতরের কাছে পক্ষিনিবাসে ময়ূর, নীলগাঁই, হরিণ, কচ্ছপ, খাঁচাবন্দি বিদেশি পাখি, বানর, হনুমান রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুরের বনাধিকারিক দ্বিপর্ণ দত্ত বলেছেন, “পক্ষিনিবাসের ক্যানালে কিছুদিন আগে ৭০০টি কচ্ছপ ছাড়া হয়েছে। অন্য পশুপাখিও ছাড়া হবে।” রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য জানান, পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে শীঘ্র লজের সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।
প্রতি বছর জুন মাস নাগাদ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ওপেন বিলস্টক, নাইট হেরণ, করমোন্যান্ট, ইগ্রেট সহ নানা প্রজাতির পাখি পক্ষিনিবাসে আসে। প্রজননের পর ডিসেম্বর মাস নাগাদ তারা ফিরে যায়। বর্তমানে পক্ষিনিবাসে পরিযায়ী পাখিদের আসা শুরু হলেও প্রতিদিন গড়ে চার জন বেশি পর্যটক থাকছেন না। অনেকেই প্রতিদিন ট্যুরিস্ট লজ ঘুরে দেখে অসন্তুষ্ট হয়ে শহরের বিভিন্ন হোটেলে চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
সরকারি সূত্রের খবর, গত পাঁচ বছর ধরে প্রতিমাসে ট্যুরিস্ট লজের গড়ে ৩ লক্ষ টাকা আয় হলেও কর্মী আধিকারিকদের বেতন, বিদ্যুতের বিল ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতিমাসে খরচ হচ্ছে ৪ লক্ষ টাকা। পর্যটকদের থাকার জন্য ট্যুরিস্ট লজের একতলা ও দোতলা মিলিয়ে সাতটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর-সহ ১১টি ঘর রয়েছে। পর্যটকদের জন্য সেখানে রয়েছে রেঁস্তোরা ও পানশালাও। চারটি ঘরের দেওয়াল ও মেঝেতে ফাঁটল ধরার পাশাপাশি স্যাতসেঁতে হয়ে পড়েছে। কনফারেন্স হল ঘরেরও একই দশা হওয়ায় সেটি বন্ধ। দুটি রেঁস্তোরার মধ্যে একটি জীর্ণ হওয়ায় বন্ধ। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটরের অভাবে লোডশেডিং চলাকালীন পর্যটকদের থাকার ঘরগুলিতে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র চালু রাখা সম্ভব হয় না। সন্ধ্যার পর লোডশেডিং হলে ২০ কেবি ক্ষমতাসম্পন্ন একমাত্র জেনারেটরটিও মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে পড়ায় ট্যুরিস্ট লজ নিষ্প্রদীপ হয়ে যায়।