এ চিত্র নিত্যদিনের। নিজস্ব চিত্র।
পুলিশের টহলদারি আছে। সাদা পোশাকের পুলিশও এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। তা সত্ত্বেও সন্ধে নামলেই শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্ক ও লাগোয়া এলাকায় বিয়ারের আসর বসছে বলে অভিযোগ। পার্ক ও লাগোয়া এলাকায় সারি সারি বাইক দাঁড় করিয়ে যুবক-যুবতীদের একাংশ ওই নেশার আসর বসাচ্ছেন বলে অভিযোগ পৌঁছেছে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে। এলাকার বাসিন্দা ও খুচরো ব্যবসায়ীদের অনেকেরই অভিযোগ, নেশার আসরকে কেন্দ্র করে প্রায়ই মারামারি হচ্ছে। কখনও নেশায় আচ্ছন্ন কিশোরী, তরুণীকে পার্কের চেয়ারে ফেলে রেখে বন্ধুরা চলে গিয়েছে, এমন ঘটনা বাসিন্দাদের নজরে পড়ে। এলাকার বাসিন্দাদের সহায়তায় বাড়ির লোকজন নেশাগ্রস্ত কিশোরী-তরুণীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।
এই ঘটনায় শহরের অভিভাবকদের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, টিউশনি পড়ার নাম করে বাঘা যতীন পার্কে গিয়ে নেশার আসরে ঢুকে পড়ার কয়েকটি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এলাকার বাসিন্দাদের কয়েকজন প্রতিবাদ করে বিপাকে পড়েছেন। কখনও প্রবীণ বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি করা হয়েছে। আবার কখনও গভীর রাতে প্রতিবাদকারী কোনও গৃহবধূর ফ্ল্যাটের সামনে আছড়ে বিয়ারের বোতল ভাঙার অভিযোগও রয়েছে। স্বভাবতই বাসিন্দারও অনেকে আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকার কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা নানা সময়ে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের কাছে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। আশ্বাস মিললেও কাজের কাজ হয়নি। তবে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহন বলেছেন, “আমার কাছে স্পষ্ট কোনও অভিযোগ কখনও আসেনি। যাই হোক যে অভিযোগ এখন শুনছি তা অত্যন্ত গুরুতর। শিলিগুড়ি থানাকে যথাযথ পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছি।”
পুলিশ আশ্বাস দিলেও বাসিন্দাদের উদ্বেগ, আতঙ্ক কমছে না। কারণ, বাঘা যতীন পার্ক লাগোয়া এলাকায় যখন পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে, সেই সময়ে বাইকে বসে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে দেখা যাচ্ছে যুবকদের একাংশকে। পুলিশ গিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের একাংশের যুক্তি, কয়েকবার নেশার আড্ডা বন্ধ করতে গিয়ে পুলিশকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে প্রভাবশালী মহল থেকে তাঁদের ‘ক্ষমা করে দেওয়ার’ অনুরোধও মিলেছে বলে পুলিশের একাংশের দাবি। সে জন্যই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে পুলিশ অফিসারদের একাংশ দাবি করেছেন।
বাঘা যতীন পার্কে নেশার আসর বসানোর অভিযোগ সম্পর্কে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। তবুও খোঁজ নেব। এটা তো পুলিশের দেখা উচিত। আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের একাংশকে বিপথগামী করতে একটি চক্র সক্রিয় বলে সন্দেহ করছেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, “এটা অত্যন্ত উদ্বেগর বিষয়। পুলিশ-প্রশাসন কড়া হাতে পরিস্থিতি সামলা দিতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে জানি না। আমাদের আমলে তো ওই এলাকায় এমন ঘটেনি। আমরাও পুলিশ-প্রশাসনকে বলব।” এলাকার বাসিন্দাদের কয়েক জনের দাবি, পার্কে কী ঘটছে সেই ব্যাপারে বিশদে অভিযোগ জানানো হয়েছে পুরসভার বরো কমিটির চেয়ারম্যান তথা কাউন্সিলর নিখিল সাহানিকে। এর পরে বেশ কয়েকবার পার্কে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। পুলিশ পাহারাও বসানো হয়েছিল। এখন ফের নেশার আসরের রমরমা শুরু হয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। বরোর চেয়ারম্যান নিখিলবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।