প্রকাশ্যে চলছে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ।
সমবায় সমিতির নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়াল তৃণমূল ও বিজেপি। মঙ্গলবার দুপুরে এই ঘটনার জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার রাজারহাট এলাকা। অভিযোগ, পুলিশের সামনেই দু-পক্ষ একে অপরের উপর লাঠি, কাঠের বাটাম নিয়ে চড়াও হয়। এক চিত্র সাংবাদিক-সহ দুই জনের মাথা ফেটে গিয়েছে। জখম হয়েছেন ১০ জন।
পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে সমিতির ক্ষমতায় রয়েছে শাসক দল। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি মাসে সমিতির নির্বাচন। এ দিন ছিল মনোনয়ন পত্র তোলার দিন। অভিযোগ দু’পক্ষই এ দিন লাঠি, বাটাম নিয়ে সমবায় সমিতির দুই পাশে আলাদা আলাদা ভাবে জড়ো হয়। মাঝে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে। অভিযোগ, বিজেপির কর্মীরা মনোনয়নপত্র তুলে সমিতির দিকে এগোতে শুরু করলেই হামলা চালায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। পুলিশের সামনেই চলতে থাকে মারধর। বিজেপির একটি পার্টি অফিসও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। সেই সময় বিজেপির তরফেও পাল্টা হামলা হয় বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। বিজেপি সমর্থক উত্তম দাস-সহ বেশ কয়েকজন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এর পরেই তৃণমূল এলাকার দখল নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় আহত ৪ জনকে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
গোলমালের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই হামলা চলে বলে অভিযোগ। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছি। সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।”
ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে শাসক দলেও। বনমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বিনয় বর্মন বলেন, “হিংসার রাজনীতি আমরা পছন্দ করি না। যাঁরাই হামলা চালাক, কাউকে বরদাস্ত করা হবে না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিজেপি ঘটনার পিছনে রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে। পরিকল্পনা মাফিক চিত্র সাংবাদিককে জখম করা হয়েছে। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
আহতদের এক জন। কোচবিহারের রাজারহাট
এলাকায় হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।
তৃণমূল ওই ঘটনার দায় বিজেপির উপরে চাপানোর চেষ্টা করলেও বিজেপি বা বামেরা তা মানতে নারাজ। বিজেপির অভিযোগ, “রাজারহাট কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচন ঘিরে বেশ কয়েকদিন ধরেই তৃণমূল উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছিল। নির্বাচনে যাতে বিজেপি প্রার্থী না দেয়, সেই হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।”
অভিযোগ, পুলিশের সামনেই সংঘর্ষ হলেও পুলিশ তা থামানোর কোনও চেষ্টাই করেনি। বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “তৃণমূল পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। চিত্র সাংবাদিকরা হামলার ছবি তোলায় তাঁদের মারধর করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।” তিনি জানান, সংঘর্ষের সময় চারজন চিত্র সাংবাদিক ছবি তুলছিলেন। অভিযোগ, সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর চিত্র সাংবাদিকদের হাত থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তৃণমূলের কর্মীরা। একজনের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এক পুলিশ অফিসার-সহ পুলিশ কর্মীদের সামনেই ঘটনা চলতে থাকে। আচমকা তৃণমূলের কয়েকজন দুষ্কৃতী লাঠি দিয়ে চিত্র সাংবাদিকদের পেটাতে শুরু করে। এক চিত্র সাংবাদিকের মাথায় বাঁশের লাঠি দিয়ে কয়েকটি আঘাত করা হয়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “তৃণমূল নির্বাচনকে ভয় পায়। সে জন্য তা বানচাল করতে এমন হামলা চালানো হয়।” পরে হাসপাতালে যান সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দা সাহা। তিনি বলেন, “এতদিন রাজনৈতিক দলের উপরে হামলা হচ্ছিল। এবারে সংবাদমাধ্যমের উপরে হামলা চালাল শাসক দলের কর্মীরা।” পরে হাসপাতালে যান তৃণমূলের জেলার সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ, বিজেপির আইনজীবী নেতা রাজু রায়, ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। সকলেই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান।