ভেঙেছে ঘরের দেওয়াল।—নিজস্ব চিত্র।
হাতির হানার পর তিন দিন কেটে গেলেও এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আশঙ্কায় রাত জাগছেন শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া শতাধিক ঘরের বাসিন্দারা। যাঁদের বাড়ি-দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের আতঙ্ক খানিকটা বেশিই। রাতে ঘুমোলেই শঙ্কা, ফের বুঝি কোণের দিক থেকে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে ঘর। অন্য দিকে শুক্রবার সকালে আমবাড়ি এলাকায় আরেক হাতির হানায় জখম বনকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ভাল আছেন বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজ সুপার নির্মল বেরা।
কারও ঘরের চাল নেই। ত্রিপল টাঙিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। রাত কাটাচ্ছেন পড়শির ঘরে। কারও বাড়ির পাঁচিল ভেঙেছে হাতি। কারও আবার শৌচাগার ভেঙে পালিয়েছে গজরাজ। অথচ সরকারি বিধি নিয়মের গেরোয় কবে পাবেন ক্ষতিপূরণ তা জানেন না তাঁরা। তাঁদের দাবি, তাঁরা জানতেও চান না কী আইন রয়েছে। তাঁরা জঙ্গলেও যাননি। জঙ্গল থেকে দূরে লোকালয়ে ডুকে হাতি তাঁদের ঘর ভেঙেছে। তাই সমস্যার সঙ্গে আপস করতে রাজি নন তাঁরা। ফল, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভ বাড়ছে শিলিগুড়িতে। তিন দিন পরেও কেন প্রধান বা এলাকার পঞ্চায়েতের বাইরে কেউ এলেন না, তা বুঝতে পারছেন না তাঁরা। তাই অনেকেই নির্বাচনে কোনও দলকেই ভোট দেবেন না বলেও হুমকি দিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী শহরের বাইরে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বন দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবু তিনি শহরে ফিরলে এলাকায় যাবেন। এটি তাঁর বিধানসভা এলাকা। শহরের বাইরে থাকায় এলাকায় যেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, ‘‘আমি রবিবার শহরে ঢুকেই এলাকায় যাব। সবার সঙ্গে কথা বলব। তবে আমাদের প্রতিনিধিদের যেতে বলেছি। তাঁরা কথা বলছে।’’ তবে বন দফতরের এ বিষয়টিকে ব্যতিক্রম ঘটনা বলে দেখে দ্রুত সরকারি প্রক্রিয়া চালু করার দাবি জানান তিনি। বৈকুণ্ঠপুরের ডিএফও পিআর প্রধান বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত প্রক্রিয়া সারতে বলেছি কর্মীদের। আমরাও চাই দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক। পরদিন হাতির হানায় গাড়ি উল্টে জখম বনকর্মীরা সুস্থ রয়েছে বলে আমার কাছে খবর।’’
বুধবার ভোর ৬টা নাগাদ হঠাৎ রান্নাঘরের দিক থেকে বিকট কড়মড় আওয়াজে চমকে ওঠেন পাপিয়াপাড়ার অনিতা পাল ও তাঁর পরিবার। ওই সময় ঘরে ঘুমিয়েছিলেন পরিবারের সঙ্গে। তখন সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। উঠে দেখেন বেড়ার রান্নাঘর গোটাটাই ধুলোয় মিশে গিয়েছে। আর এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে গজরাজ। তারপর থেকে একচিলতে ঘরে শোয়া, খাওয়া সহ সমস্ত কাজ চলছে। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাঁর দাবি, দ্রুত রান্নার ব্যবস্থা সরাতে না পারলে মুশকিল। সঞ্জয় বাঁশমালির বাড়ি চয়নপাড়া এলাকায়। তার বাড়ির একপাশের পাঁচিল ভেঙে দিয়েছে হাতি। তিনি দাবি করেছেন, মাত্র ৬ মাস আগেই বহু দিনের পুরনো বেড়ার সীমানা সরিয়ে ইঁটের গাঁথনি দেওয়া হয়েছিল। ফের দেওয়াল বানানোর সামর্থ্য নেই। এখন ভরসা বন দফতরই।