হিমঘর থেকে মামলা বেরোচ্ছে মোর্চার বিরুদ্ধে

দার্জিলিং পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বনধ ডাকা এবং বন্ধ তুলে নেওয়ার বছর গড়িয়ে গিয়েছে। পাহাড় এখন শান্ত। কিন্তু ওই বনধ চলাকালীন তাকে কেন্দ্র করে দাখিল হওয়া আদালত অবমাননার একটি মামলা মঙ্গলবার ফের উঠল কলকাতা হাইকোর্টে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০২:৩৪
Share:

দার্জিলিং পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বনধ ডাকা এবং বন্ধ তুলে নেওয়ার বছর গড়িয়ে গিয়েছে। পাহাড় এখন শান্ত। কিন্তু ওই বনধ চলাকালীন তাকে কেন্দ্র করে দাখিল হওয়া আদালত অবমাননার একটি মামলা মঙ্গলবার ফের উঠল কলকাতা হাইকোর্টে। প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, আজ বুধবার আবেদনকারীর বক্তব্য শোনা হবে।

Advertisement

বছরখানেক আগে মামলাটি দাখিল করেছিলেন রমাপ্রসাদ সরকার নামে এক আইনজীবী। এ দিন তিনিই মামলার শুনানি শুরুর আর্জি জানান হাইকোর্টে। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের প্রার্থী-প্রশ্নে শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে মোর্চার সম্পর্ক আচম্বিতে ধাক্কা খেয়েছে। মোর্চা নেতৃত্ব জানিয়েছেন, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি আসনে তাঁরা বিজেপি-র প্রার্থীকে সমর্থন করবেন। বস্তুত মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের এই ঘোষণার পরেই প্রায় ঠান্ডা ঘরে চলে যাওয়া মামলাটিকে জিইয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে, যার মধ্যে তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন আইনজীবী মহলের একাংশ।

গত বছরের গোড়ার দিকে মোর্চা পাহাড়ে লাগাতার বন্ধ ডেকেছিল। বন্ধে সেখানকার স্বাভাবিক জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। তখন রমাপ্রসাদবাবু হাইকোর্টে জনস্বার্থ-মামলা দায়ের করে পাহাড়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনার আবেদন জানান। রাজ্যও জানায়, বন্ধের দরুণ সরকারের পঞ্চাশ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সওয়াল-জবাব শুনে বনধ ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে হাইকোর্ট কয়েকটি নির্দেশ দেয়। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ মোর্চা মানছে না এই অভিযোগে এর পর রমাপ্রসাদবাবু আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন।

Advertisement

ক’দিনের মধ্যে পরিস্থিতি বদলে যায়। সরকারের সঙ্গে আলোচনার ফলশ্রুতিতে মোর্চা বনধ প্রত্যাহার করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ে গিয়ে বৈঠক করেন মোর্চা নেতৃত্বের সঙ্গে। মোর্চা নেতারাও মহাকরণে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। দু’পক্ষে সম্পর্কের বরফ দৃশ্যতই গলতে থাকে। এমনকী মোর্চার যে সব কর্মী-সমর্থক সক্রিয় ভাবে বনধ সফল করতে নেমে গ্রেফতার হয়েছিলেন, তাঁদের জামিনও দেওয়া হয়। প্রায় অচল হয়ে পড়া জিটিএ-র কাজকর্ম ফের চালু হয়।

এমতাবস্থায় রমাপ্রসাদবাবুর রুজু করা আদালত অবমাননার মামলাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। হাইকোর্টের খবর, আবেদনকারী এত দিন মামলার শুনানি শুরু করার কোনও আর্জিও জানাননি। রাজের তরফেও তেমন চাড় দেখা যায়নি। অন্য দিকে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চও মামলাটি নিয়ে মাথা ঘামায়নি। আইনজীবী মহলের ব্যাখ্যা, এমনিতেই হাইকোর্টে বকেয়া মামলার পাহাড় জমেছে। তাই পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসায় আদালত অবমাননার মামলাটি নিয়ে আদালত আর সময় নষ্ট করতে চায়নি।

কিন্তু সরকার-মোর্চা সম্পর্কে আবার চোনা ফেলেছে লোকসভা ভোট। মোর্চার দাবি: ঠিক হয়েছিল, লোকসভা ভোটে দু’দল সহমতের ভিত্তিতে পাহাড়ের প্রার্থী ঠিক করবে। তা সত্ত্বেও মোর্চার সঙ্গে আলোচনা না-করে ভাইচুং ভুটিয়াকে তৃণমূল একতরফা ভাবে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে গুরুঙ্গের অভিযোগ। এই কারণেই পুরনো মামলাটি নিয়ে ফের নড়াচড়া শুরু হয়। এ দিন রমাপ্রসাদবাবু মামলাটি শোনার জন্য কোর্টে আবেদন পেশ করলে বেঞ্চ তাঁকে বলে বিষয়টি মোর্চা নেতৃত্বকে জানাতে। সেই মতো রমাপ্রসাদবাবু মোর্চার কৌঁসুলি অয়নাভ রাহাকে আদালতের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছেন। আজ শুনানি শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন