হাসপাতাল চত্বরেই তোলাবাজি, মালদহে অভিযুক্ত তৃণমূল

হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই তোলাবাজির অভিযোগ উঠল মালদহে তৃণমূলের কয়েকজন স্থানীয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। বুধবার রাতের এই ঘটনায় রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর নামও জড়িয়ে গিয়েছে। কৃষ্ণেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠ বাপি দেবের অনুগামী মধু ঘোষ ও তাঁর দাদা শ্যাম সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্মল সরকার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৯
Share:

মালদহ মেডিক্যালে ভর্তি নির্মল সরকার। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই তোলাবাজির অভিযোগ উঠল মালদহে তৃণমূলের কয়েকজন স্থানীয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। বুধবার রাতের এই ঘটনায় রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর নামও জড়িয়ে গিয়েছে।

Advertisement

কৃষ্ণেন্দুবাবুর ঘনিষ্ঠ বাপি দেবের অনুগামী মধু ঘোষ ও তাঁর দাদা শ্যাম সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্মল সরকার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। নির্মলবাবুর দাবি, বুধবার রাতে তাঁর মা-কে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে বাড়ি ফেরার সময় মর্গের সামনে তাঁদের পথ আটকে অভিযুক্তেরা বর্ষবরণের পার্টির জন্য মদ কেনার টাকা চান। নির্মলবাবুরা তা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নির্মলবাবুরা জানিয়েছেন, হামলার সময়ে ‘আমরা মন্ত্রীর লোক’ বলেও তাঁদের শাসানো হয়েছিল।

যে হাসপাতালের তিনিই রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, সেখানে তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য চলে কী ভাবে? তোলা আদায়ের টাকা দলের উপর মহলেও যায় বলে হাসপাতালে কেন কানাঘুষো চলছে? এই প্রশ্ন ওঠায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী তথা ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুবাবু। তিনি বলেন, “যাঁদের নামে অভিযোগ হয়েছে তাঁদের কাউকে চিনি না। অহেতুক আমার নাম জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।” তবে বাপিকে তৃণমূল কর্মী হিসেবে তিনি চেনেন বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণেন্দুবাবু। সেই বাপি এ দিন মধুকে পাশে রেখেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে দাবি করেন, “মধুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওই ব্যক্তিরা নিজেরাই মারপিট করছিল। মধু বরং তাদের সরিয়ে দিয়েছে।” তবে কৃষ্ণেন্দুবাবু জানান, পুলিশকে তিনি বুধবার রাতের ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কিন্তু তারপরেও বৃহস্পতিবার সারা দিনে অভিযুক্তদের একজনও গ্রেফতার হয়নি। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি চলছে।” কিন্তু অভিযুক্তদের বহাল তবিয়তে এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

পেশায় মাছ ব্যবসায়ী নির্মলবাবুর বক্তব্য, ওই দিন গভীর রাতে তাঁর মা বাসন্তীদেবী অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করিয়ে ফেরার সময় নির্মলবাবুর সঙ্গে ছিলেন এলাকার এক রিকশাচালক রঞ্জিত দত্ত ও বন্ধু সুজিত মন্ডল। তাঁদের অভিযোগ, মর্গের সামনে অভিযুক্তেরা মদ্যপ অবস্থায় তাঁদের পথ আটকায়। নির্মলবাবু অভিযোগ করেন, “মধু ও শ্যামের নেতৃত্বেই ওই যুবকেরা আমাদের আটকে নিউ ইয়ার পার্টির জন্য মদের টাকা চায়। টাকা দিতে পারব না বলায় মোবাইল কেড়ে নিতে চায়। তখন বাধা দিলে ওরা আমাদের মারধর করে।” তখন এক জন ছুটে গিয়ে এলাকায় খবর দিলে লোকজন ছুটে আসেন। তার পরেই অভিযুক্তেরা পালায়।

এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, কৃষ্ণেন্দুবাবু রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হওয়ার পরে তাঁর ঘনিষ্ঠ বাপিকে নিয়মিত এই হাসপাতালে দেখা যায়। বাপির ছায়াসঙ্গী হিসেবে দেখা যায় মধু সহ কয়েকজনকেও। এলাকার দোকানদার, হকারদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরের ব্যবসায়ীদের একাংশের কাছ থেকে নিয়মিত তোলা আদায় করাও হয়ে থাকে। সেই টাকা মধুরা কোথায় পাঠায়, তা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ শোনা যায় হাসপাতালের অন্দরে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “দল তোলাবাজিকে প্রশ্রয় দেয় না। এমন হলে পুলিশ পুলিশের কাজ করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন