জোরালো উত্তুরে হাওয়ার হাত ধরে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে নামতে শুরু করেছে পারদ। আবহ দফতরের খবর, মঙ্গলবার দক্ষিণবঙ্গে বেশির ভাগ জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি নীচে ছিল। পুরুলিয়া এবং কৃষ্ণনগরে তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নেমেছে।
দুর্গাপুজো মিটতেই হেমন্তের আমেজ মিলেছিল দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু কালীপুজোর আগে ঘূর্ণিঝড় কিয়ান্তের দাপটে আবহাওয়া বিগড়ে যায়। তার পিছু পিছু হাজির হয় সাগরের গভীর নিম্নচাপ। যার জেরে কার্তিকেও শ্রাবণের মতো বৃষ্টি হয়েছে এ বার। ওই গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশে চলে যেতেই ফের উত্তুরে হাওয়া ঢুকতে শুরু করেছে দক্ষিণবঙ্গে।
কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু অনেকেই বলছেন, গভীর রাতে বা ভোরে শীতের অনুভূতিটা যেন বেশি হচ্ছে। কেন? আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ঝাড়খণ্ড, বিহারের বহু জায়গাতেই রাতের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির কাছাকাছি নেমেছে। সেই সব এলাকার উপর দিয়ে উত্তুরে হাওয়া জোরালো ভাবে বয়ে আসছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় দিনের বেলা মাটি গরম হচ্ছে এবং রাত নামতেই মাটি থেকে তাপের বিকিরণ হচ্ছে দ্রুত। ফলে দিনে-রাতে তাপমাত্রার ফারাকও বেশি হচ্ছে। মঙ্গলবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন ১৮.৬। অর্থাৎ দুপুরের দিকে পারদ ৩০-৩১ ডিগ্রির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করলেও শেষরাতে বা ভোরের দিকে তা ১৮-১৯-এ নেমে আসছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘আগামী দিন দুই দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জায়গায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচে থাকবে। এমন শীত-শীত ভাবটাও মিলবে।’’
জমিয়ে শীত পড়তে আর কত দিন? আবহবিদেরা অবশ্য এখনই শীতের বার্তা দিচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, পাকাপাকি ভাবে শীত আসতে এখনও দেরি। স্বাভাবিক নির্ঘণ্ট মেনে চললেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে শীত থিতু হতে হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যাবে। কারণ, শীত কিন্তু বর্ষার মতো কোনও নির্দিষ্ট দিনক্ষণ মেনে আসে না। তাপমাত্রা ওঠা-নামা করতে করতে কলকাতার রাতের পারদ ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থিতু হলে দক্ষিণবঙ্গে শীত পড়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। এ দিন মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮.৬ ডিগ্রি নেমেছে বটে। কিন্তু ১৪ ডিগ্রির কাছাকাছি নামতে দেরি আছে।
কখনও সখনও ডিসেম্বরের শুরুতেও শীত পড়ে যায়। যেমন ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। আবার ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর জোরালো উত্তুরে হাওয়ায় মহানগরের রাতের তাপমাত্রা ১৪.১ ডিগ্রিতে নেমেছিল। কিন্তু তা থিতু হয়নি। আবহবিদদের কেউ কেউ বলছেন, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকেই উত্তুরে হাওয়ার দাপট কমতে পারে। সাগর থেকে জোলো হাওয়া ঢুকে দক্ষিণবঙ্গে রাতের তাপমাত্রা বাড়াবে। আলিপুর অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছে, তাতেও তাপমাত্রা বেশি বা়ড়বে না। স্বস্তি কমারও আশঙ্কা নেই।