মানস ভৌমিক
শিশু পাচার কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তীর আর একটি হোম ‘আশ্রয়’-এও এ দিন তালা ঝুলিয়ে দিল সিআইডি। একই সঙ্গে এই হোমটির বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগে এফআইআর করা হয়েছে। তল্লাশি চলেছে চন্দনার বাড়িতে। গ্রেফতার করা হয়েছে চন্দনার ভাই মানস ভৌমিককেও।
সব মিলিয়ে, চন্দনার চারদিক থেকে জাল গুটিয়ে আনতে চাইছে সিআইডি। এই কাজে এ দিন তারা কাজে লাগিয়েছে সিডব্লিউসি-র সদস্য সুবোধ ভট্টাচার্যকেও। গত বছর জুলাইয়ে সুবোধবাবুই চন্দনার হোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে তদন্ত করে হোম কর্তৃপক্ষকে গত মাসেই শো-কজ করে রাজ্য সরকার। এ দিন, বৃহস্পতিবার সুবোধবাবুর সামনে চন্দনাকে জেরা করে সিআইডি।
এ দিনের জেরায় উঠে এসেছে এক জনপ্রতিনিধির নামও। শিশু দত্তক নিতে ওই জনপ্রতিনিধিকে মোটা টাকা দিতে হয়েছিল বলে জেনেছে সিআইডি। তাঁকেও জেরায় ডাকা হতে পারে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। এ দিন দুপুরে সিআইডি হোমের এক কর্মী ও চন্দনার ভাই মানসকে জেরা করে সিআইডি। মানসকে প্রথমে হোমে ও পরে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে গিয়ে জেরা করা হয়। রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মানসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পাচার চক্রে সরাসরি জড়িত। এ ছাড়াও হোমের বেশ কিছু নথি সরানোরও চেষ্টা করেন তিনি। এ দিন জেরা করা হয় চন্দনার আর এক আত্মীয়কেও। একটি ক্লিনিকের সঙ্গে ওই আত্মীয়ের যোগসাজশ পেয়েছে তদন্তকারীরা। চন্দনার বিরুদ্ধে এ দিন মুখ খুলেছেন তাঁর এক প্রাক্তন সহযোগীও। নর্থ বেঙ্গল পিপলস ডেভেলপমেন্ট কমিটির শিশুদের হোমটির প্রাক্তন প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট ওই মহিলার অভিযোগ, একবার একটি শিশু ও তাঁর মাকে নিয়ে চন্দনা শিলিগুড়ি যাচ্ছিলেন৷ লাটাগুড়ির কাছে একটি জঙ্গলে গিয়ে চন্দনা গাড়িতে থাকা আরেক ব্যক্তিকে নির্দেশ দেন গাড়ি থেকে শিশুর মাকে নামিয়ে দিতে৷ এরপর শিশুটিকে নিয়ে গাড়িটি ছুটতে থাকে৷ চন্দনার এমন বহু কাজ সহ্য করতে না পেরেই তিনি সংস্থা ছাড়েন বলে দাবি ওই মহিলার৷
নর্থ বেঙ্গল পিপলস ডেভেলপমেন্ট কমিটির শিশুদের হোমটি আগেই ‘সিল’ করেছিল সিআইডি। এ বার অভিযুক্ত সংস্থার পরিচালনায় থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের ‘আশ্রয়’ হোমও প্রশাসনের নজরদারি শুরু হল। মঙ্গলবার রাতে মহকুমাশাসকের নেতৃত্বে আশ্রয় হোমে পরিদর্শন হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের হোমে খোঁজ মেলে নাবালিকাদের। আবাসিকদের অনেকের নাম হোমের খাতায় মেলেনি। খাতায় যাদের নাম আছে, তাদের দেখা মেলেনি। খোঁজ মেলে দুই অন্তঃসত্ত্বারও। তখনই এই হোমের সঙ্গে শিশু বিক্রির যোগাযোগ রয়েছে বলে সন্দেহ হয় প্রশাসনের। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক রচনা ভগৎ বলেন, সব সিআইডিকে জানানো হয়েছে।’’