হাত বাড়িয়েছেন মমতা

সৌজন্যে মমতা, কোটি টাকার কৃত্রিম হাত রাজ্যে মিলবে নিখরচায়

কৃত্রিম রোবোটিক হাত বিদেশ থেকে এনে দেহে লাগাতে খরচ হয় প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা। তেমনই হাত কলকাতায় বসে এ বার মিলবে নিখরচায়।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৫
Share:

কৃত্রিম রোবোটিক হাত বিদেশ থেকে এনে দেহে লাগাতে খরচ হয় প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা। তেমনই হাত কলকাতায় বসে এ বার মিলবে নিখরচায়। বিদেশের মতোই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসএসকেএম হাসপাতালকে এই হাত তৈরি করে দেবে আইআইটি খড়্গপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। ওই হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে সেই চুক্তি পাকা হয়ে গিয়েছে আইআইটি-র।

Advertisement

এ রাজ্যে কৃত্রিম হাত বা পায়ের জন্য হাসপাতালের তালিকায় নাম লিখিয়ে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় কাটানোটাই অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল প্রতিবন্ধী মানুষদের। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে এঁদের মধ্যে হাতেগোনা ক’জনের ভাগ্যে যে হাত বা পা জুটত, তা-ও ছিল নিতান্ত সাধারণ মানের। দৃষ্টিগত ভাবে প্রতিবন্ধকতাকে কিছুটা আড়াল করলেও তা দিয়ে তেমন কোনও কাজ করা যেত না। এ ব্যাপারে পরপর বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতেই গত এক বছরে ভোজবাজির মতো বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি।

কৃত্রিম অঙ্গ প্রদানের ব্যবস্থা যে এ রাজ্যে কখনওই ছিল না, তেমন নয়। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পরে নতুন পরিকাঠামো নিয়ে খুলেছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে রাজ্যের এক মাত্র সরকারি কৃত্রিম অঙ্গ প্রদান কেন্দ্রটি। সেখান থেকেই গত এক বছরে কিছু কৃত্রিম অঙ্গ ও সহযোগী যন্ত্রাংশ মিলেছে। সেই পরিষেবা বাড়াতেই এ বার এসএসকেএম থেকে আধুনিক হাত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী মার্চ মাসেই পাইলট প্রকল্প হিসেবে সেখানে ১০ জন প্রতিবন্ধীর দেহে এই হাত লাগানো হবে।

Advertisement

স্বাস্থ্যকর্তারাই স্বীকার করছেন, নীলরতনের কেন্দ্রটি শোচনীয় অবস্থায় থাকায় এত দিন বনহুগলিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট ফর অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপড’ (এনআইওএইচ) ছিল রাজ্যের দরিদ্র রোগীদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেখান থেকেও কৃত্রিম হাত বা পা পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হত অধিকাংশকেই। এত দিনে ওই কেন্দ্রের উপর নির্ভরতা কাটতে চলেছে রাজ্যে। তা ছাড়া, এসএসকেএম থেকে যে হাত পাওয়া যাবে, তার মানও আরও উন্নত।

এসএসকেএমের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান রাজেশ প্রামাণিকের কথায়, ‘‘এনআইওএইচ বা এনআরএস থেকে এখন যে হাত বা পা দেওয়া হয়, তা মাংসপেশির মাধ্যমে অল্পবিস্তর নাড়ানো যায়। কিন্তু এসএসকেএম থেকে যে হাত দেওয়া হবে, তা স্নায়ু-নিয়ন্ত্রিত। এর মাধ্যমে জিনিসপত্র মুঠো করে ধরা, লেখা, কম্পিউটার চালানোর মতো অনেক কাজ করা যাবে।’’

পাইলট প্রকল্পে প্রথম যে ১০ জনকে এসএসকেএম থেকে আধুনিক হাত দেওয়া হবে, তাঁদের বাছাও হয়েছে অভিনব কায়দায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এঁরা প্রত্যেকেই নকল হাতের জন্য বহু বছর ধরে চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর্থিক ভাবে তাঁরা প্রত্যেকেই পিছিয়ে পড়া। সম্প্রতি এসএসকেএমে তাঁরা এসেছিলেন নিজেদের কোনও না কোনও নিকটাত্মীয়কে দেখানোর জন্য। হাজার হাজার রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের মধ্যে থেকে তাঁদের চিহ্নিত করার মতো অসাধ্য সাধন করেছেন ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসকেরা। বর্ধমানের কেতুগ্রামের আগরডাঙা গ্রামের তন্ময় মণ্ডল, নদিয়ার করিমপাড়ার সেনপাড়া গ্রামের রামগোপাল সরকার, বেহালার সরশুনার দীপক বেড়ার মতো মানুষেরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে অবশেষে তাঁরা কৃত্রিম হাত পেতে চলেছেন।

নীলরতনের কৃত্রিম অঙ্গ প্রদান কেন্দ্রের ইন-চার্জ আবীর মিত্র জানান, ২০১৫ সাল পর্যন্ত বন্ধ থাকার পরে ২০১৬-এ তাঁদের কেন্দ্রটি ফের খোলা হয়েছে। ২০১০-১১ সালে এই কেন্দ্র থেকে ৬২টি কৃত্রিম হাত ও পা দেওয়া হয়েছিল। ২০১৬-১৭ সালে নতুন করে খোলার পরে দেওয়া হয়েছে ১৯৭টি (এর মধ্যে কৃত্রিম হাত ৬৭টি) হাত ও পা। শুধু তা-ই নয়, গত এক বছরে প্রতিবন্ধীদের ক্যালিপার, বেল্ট, লাঠি, কলার প্রভৃতি মিলিয়ে ৬৬৪টি প্রস্থেটিক্স ও অর্থোটিক্স দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন