North Bengal University

ইস্তফাই দিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, ব্রাত্যের বৈঠকে রাজ্যপালের ‘নিষেধাজ্ঞা’ই কি কারণ?

সূত্রের দাবি, শুধু উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছেই রেজিস্ট্রারকে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে যেতে নিষেধ করার বার্তা এসেছে রাজভবন থেকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৪৮
Share:

(বাঁ দিকে) ব্রাত্য বসু, নূপুর দাস এবং সিভি আনন্দ বোস। —নিজস্ব চিত্র

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন নূপুর দাস। ৮ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার দুপুর ২টোয় বিকাশ ভবনে ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তার আগেই ইস্তফা দিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। নূপুরের ইস্তফার খবরটি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য রথীন বন্দোপাধ্যায় দাবি করেন, রেজিস্ট্রারকে শিক্ষামন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে যেতে ‘নিষেধ’ করা হয়েছিল। রাজভবন থেকে সেই বার্তা পাওয়ার পর নূপুরকে তা জানানোও হয়েছিল। নূপুরও শিক্ষামন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে না যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার পদটি ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। নূপুর স্রেফ ওই পদের দায়িত্ব পালন করছিলেন। মেয়াদ ছিল আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তার আগে নূপুর রেজিস্ট্রার পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন। এ ব্যাপারে নূপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সূত্রেরই দাবি, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। রথীন বলেন, ‘‘আমি ইস্তফাপত্র পেয়েছি। কিন্তু সেটা এখনও দেখা হয়নি।’’

উপাচার্যই জানান, বৃহস্পতিবার সকালে নূপুরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। তাঁকে জানানো হয়, আচার্য চাইছেন রেজিস্ট্রার যাতে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে না যান। রথীনের কথায়, ‘‘রাজভবন থেকে পাওয়া ওই বার্তা আমি শুধু রেজিস্ট্রারের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম। উনিও (নূপুর) আমায় জানালেন যে, উনিও যেতে চান না। যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে, এই চাপ উনি নিতে পারছেন না। তখনই ইস্তফার কথা জানিয়েছিলেন। আমি পুনর্বিবেচনা করতে বলেছিলাম। কিন্তু উনি ওই পদে থাকতে চাইছেন না।’’

Advertisement

শুধু উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছেই রেজিস্ট্রারকে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে যেতে নিষেধ করার বার্তা রাজভবন থেকে এসেছে বলে সূত্রের দাবি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুকে ব্রাত্যের বৈঠকে যেতে বারণ করেছেন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। ঘটনাচক্রে, নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, সেখানকার রেজিস্ট্রারও বৃহস্পতিবার থেকে ছুটিতে গিয়েছেন। তবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে রাজভবন থেকে কোনও বার্তা এসেছে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি।

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ এবং পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে সম্প্রতি রাজভবনের তরফে একের পর এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে একটিতে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নেই, সেখানে জরুরি পরিস্থিতিতে অন্তবর্তিকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করবেন তিনিই। অন্য দিকে, রাজ্যপাল বোস আইনের বাইরে হাঁটছেন বলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তার পরও রাজভবনের তরফ থেকে ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তবর্তিকালীন উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। এই টানাপড়েনের মধ্যে মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান থেকে মুখ খোলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখন আমাদের এখানে বসে রয়েছেন এক জন মাননীয় রাজ্যপাল। তিনি বলছেন, আমি স্কুল দেখব। আমি কলেজ দেখব। আমি বিশ্ববিদ্যালয় দেখব। আমি বলি, আইন মেনে চলুন। আমার কোনও আপত্তি নেই।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘টাকা দেব আমরা, পলিসি করব আমরা, আর আপনি খবরদারি করবেন!” তিনি আরও বলেন, “আমরা ইলেক্টেড (নির্বাচিত), আপনি কনভেনশনাল নমিনেটেড পোস্টে। উনি কী ভাবছেন মুখ্যমন্ত্রীর থেকেও বড়? সে উনি বড় হতেই পারেন।”

এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ নিয়েও রাজ্যপালকে নিশানা করেছেন তিনি। বলেছেন, “এ রকম যদি চলতে থাকে, যদি কোনও বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর (রাজ্যপাল) কথা মতো চলে, তা হলে আমি বলে রাখছি আমি অর্থনৈতিক বাধা তৈরি করব... আপনি (রাজ্যপাল) যদি মনে করেন, আমি চিফ মিনিস্টারের থেকেও বড়! কিন্তু মনে রাখবেন সমস্ত পলিসি ঠিক করে রাজ্য সরকার, আপনি নন। আপনি যদি কোনও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন, আর কোনও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় আপনার কথায় চলে, আমি অর্থনৈতিক বাধা তৈরি করব। কারণ আমি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে দেব না।’’ ওই সময়ই শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ব্রাত্যকে বলব কলেজের প্রিন্সিপাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে মিটিং করুন। প্রাক্তন উপাচার্যরাও থাকবেন। আপনারা আগামিদিনেও থাকবেন। কে কী করবেন, আমি দেখছি।” এর পরেই ৮ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রারদের নিয়ে বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন