বিধায়ক খুনে কি পুরনো রাগ, ইঙ্গিত তদন্তে

নদিয়ার হাঁসখালিতে ওই খুনের ঘটনায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে মঙ্গলবার তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৩
Share:

নিহত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস (ইনসেটে)।

কার্যকারণ নিয়ে যত জল্পনাই থাক, ‘পুরনো বিবাদে’র জেরে অভিযুক্ত স্থানীয় যুবকেরাই তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসকে খুন করেছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা। যদিও তার সঙ্গে রাজনীতির যোগ এখনও খুব পরিষ্কার নয়। মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ পুণ্ডারীকে ধরা যায়নি।

Advertisement

নদিয়ার হাঁসখালিতে ওই খুনের ঘটনায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে মঙ্গলবার তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান। এই সপ্তাহেই বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে আগাম জামিনের মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ দিন দিল্লিতে মুকুল দাবি করেন, অন্য এক মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট জানিয়ে রেখেছে যে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছে তিনি বাড়তি নিরাপত্তার আর্জিও জানিয়েছেন। মুকুলের দাবি, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময়ে তাঁর উপরে হামলার আশঙ্কা রয়েছে।

বিধায়ক খুনে অভিযুক্ত পাঁচ জনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত দু’জন গ্রেফতার হয়েছে। ধৃত সুজিত মণ্ডল ও কার্তিক মণ্ডলকে পুলিশ হেফাজতে দফায়-দফায় জেরা করছেন অফিসারেরা। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি: জেরায় সুজিত জানিয়েছে, মাস কয়েক আগে হাঁসখালি থানা এলাকার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম থেকে আঠারো হাজার টাকায় তারা দু’টি ওয়ানশটার ও চারটি কার্তুজ কিনেছিল। ছক ছিল, বিধায়ককে খুনের সময়ে দেহরক্ষী বাধা দিতে এলে তাঁকেও গুলি করা হবে। কিন্তু দেহরক্ষী ছুটিতে ছিলেন।

Advertisement

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, আগেও কয়েক বার বিধায়ককে খুনের চেষ্টা করেছে দু’জনে। কিন্তু সফল হয়নি। শনিবার রাতে সত্যজিৎ যখন ফুলবাড়ি গ্রামে বাড়ির কাছে সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠান দেখছেন, অভিজিৎ আচমকা তাঁকে গুলি করে। তার পর মাঠের এক জায়গায় আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে সাইকেল নিয়ে পালায়। জঙ্গলমহলের দিকে কোথাও সে পালিয়ে গিয়েছে বলে তদন্তকারীদের কাছে খবর। সুজিতও বাদকুল্লার দিকে পালানোর চেষ্টা করেছিল। তার আগেই পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। তার সঙ্গে থাকা ওয়ানশটারের খোঁজ অবশ্য মেলেনি।

গোড়া থেকে পুলিশের একাংশের সন্দেহ ছিল, কোনও স্থানীয় যুবক নয়, বরং এটা পেশাদার খুনির কাজ হতে পারে। কেননা অনুষ্ঠান মঞ্চের কাছে যে ভাবে ওয়ানশটার থেকে গুলি করে নিরাপদে পালিয়ে গিয়েছে আততায়ী, তার জন্য দক্ষতা ও ভিতরের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ প্রয়োজন। কিন্তু অন্য একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, মূলত ওই দু’জনই খুনে যুক্ত। ষড়যন্ত্রের সঙ্গী ছিল আরও কয়েক জন।

পুলিশ সূত্রের দাবি: সুজিত জেরায় জানিয়েছে, একদা বগুলা কলেজের টিএমসিপি নেতা অভিজিৎ কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ‘কিছু গড়বড়’ করেছিল। বছর আড়াই আগে বিধায়কের দলবল তাকে ধরে পেটায়। গত বছর পুজোর সময়ে অন্য একটি ঘটনায় বিধায়কের সামনেই তাঁর লোকজন অভিজিৎকে মারধর করে। তার পরেই সে নাকি ঠিক করে ফেলে, সত্যজিৎকে সরিয়ে দিতে হবে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক সুজিতও রাগ পুষে রেখেছিল। চাকরির জন্য বিধায়কের কাছে গেলেও তিনি দুর্ব্যবহার করে তাকে ফিরিয়ে দেন বলে অভিযোগ।

অভাবের তাড়নায় সুজিত লরির খালাসির কাজ করছিল। মানসিক অসুখেও ভুগছিল। পুলিশের দাবি: জেরায় সুজিত জানিয়েছে, সত্যজিৎকে খুন করে সে নিজে বিধায়ক হবে এবং তাকে চাকরি দেবে বলে অভিজিৎ আশ্বাস দিয়েছিল। তাতে সুজিত রাজি হয়ে যা। এ দিন সকালে এলাকার কিছু লোকজন সুজিতের বাড়ি ভাঙচুর করে। তাদের দাবি, সেই সময়ে একটি জং ধরা ভোজালি, নরেন্দ্র মোদীর ছবি ও আরএসএস-এর কাগজপত্র পাওয়া যায়। ফলে, এই খুনের সঙ্গে বিজেপির যোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন