নাতনিকে নিয়ে ঠাকুরদা যাচ্ছিলেন স্কুলে, ট্রেনের ধাক্কায় বরাহনগরে দু’জনেই শেষ

সকালে ঠাকুরদার হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছিল আট বছরের নাতনি। ট্রেন আসতে দেখে সে বলেওছিল, ‘দাদু, ট্রেন আসছে।’ পরক্ষণেই লোকাল ট্রেনের ধাক্কায় ঠাকুরদা-নাতনি, দু’জনেই শেষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:১৮
Share:

জুঁই ধর

মঙ্গলবার ছিল পরীক্ষা!

Advertisement

তাই সকালে ঠাকুরদার হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছিল আট বছরের নাতনি। ট্রেন আসতে দেখে সে বলেওছিল, ‘দাদু, ট্রেন আসছে।’ পরক্ষণেই লোকাল ট্রেনের ধাক্কায় ঠাকুরদা-নাতনি, দু’জনেই শেষ।

সেই দৃশ্য দেখে স্থানীয়েরা যখন চিৎকার করছেন, পাশের রাস্তা দিয়ে চার বছরের ছেলেকে নিয়ে ফিরছিলেন এক মহিলা। অন্যদের মতো তিনিও জানতে পারেন, ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন দু’জন। ভিড়ের মধ্যে গিয়ে তিনি দেখেন, ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়া বালিকা তাঁর মেয়ে। আর বৃদ্ধ তাঁর শ্বশুর!

Advertisement

সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই দুর্ঘটনা ঘটে দমদম ও বেলঘরিয়া স্টেশনের মধ্যে বরাহনগর এলাকায়। রেল পুলিশ জানায়, বালিকার নাম জুঁই ধর, তার ঠাকুরদার নাম রাজশেখর ধর (৭০)। ঘটনার পরে রেললাইনের দু’দিকের বাসিন্দারা প্রায় দু’ঘণ্টা রেল লাইন অবরোধ করেন। রেল পুলিশ, আরপিএফ এবং বরাহনগর থানার বাহিনী ঘটনাস্থলে এলেও স্থানীয়েরা মৃতদেহ তুলতে বাধা দেন। তাঁদের দাবি, ওই রেললাইন পারাপারের জন্য আন্ডারপাস কিংবা ফুটওভার ব্রিজ করতে হবে। অফিসের সময়ে শিয়ালদহ মেন শাখায় অবরোধে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরে স্থানীয় কাউন্সিলরেরা এবং আরপিএফ, রেল পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। পুলিশি পাহারায় দেহ দু’টি এলাকা থেকে বার করা হয়।

আরও পড়ুন: সন্তানদের মুখ চেয়ে ‘শত্রুতা’ ভুলে বিয়ের পিঁড়িতে

বরাহনগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বনহুগলি জিএস-২-এর ডাক্তার বাগানে ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতেন রাজশেখরবাবু। তাঁর ছেলে তারাশঙ্করের বড় মেয়ে জুঁই। সে বরাহনগরের তীর্থভারতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এ দিন ছিল বাংলা পরীক্ষা। ডাক্তার বাগানের বাসিন্দা পাপিয়া মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার ছেলেও ওই স্কুলে পড়ে। জুঁইও আমার সঙ্গেই রোজ স্কুলে যেত। কয়েক দিন ধরে বাচ্চাটা ঠাকুরদার সঙ্গে যাচ্ছিল। জুঁইয়ের ঠাকুরদা অসুস্থ এবং কানেও কম শুনতেন।’’

পাপিয়া আরও জানান, এ দিন সকালে চার বছরের ছেলেকে প্লে-স্কুল থেকে আনার জন্য রেললাইন পার করেই বরাহনগরের সতীন সেন নগরে গিয়েছিলেন জুঁইয়ের মা বিভা। যাওয়ার সময় মেয়েকে ডাক্তার বাগানের একটি দোকানে বসিয়ে রেখে ছিলেন। সেখান থেকেই ঠাকুরদার সঙ্গে বেরিয়েছিল বালিকা। পাপিয়া বলেন, ‘‘বিভা-ই ছেলেকে নিয়ে ফেরার সময় মেয়ে ও শ্বশুরকে লাইন পার করে দিতেন। কিন্তু এ দিন দাদু-নাতনি আগেই চলে এসেছিল।’’

প্রত্যক্ষদর্শী নোয়াপাড়া শ্রীপল্লির বাসিন্দা নমিতা বাগ বলেন, ‘‘ওঁরা দু’নম্বর রেল লাইন পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটায় দমদমমুখী ট্রেন এসে যায়। আর তখন এক নম্বর লাইনেও দমদমের দিক থেকে ট্রেন একেবারে সামনে এসে গিয়েছে। দাদু-নাতনি তখন এক নম্বর লাইনে। বাচ্চাটা বলছিল, ট্রেন আসছে। বৃদ্ধ বোধহয় বুঝতে পারেননি।’’

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, আপ শিয়ালদহ-বর্ধমান লোকালের ধাক্কায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দা তারক চৌধুরী বলেন, ‘‘এখানে আন্ডারপাস বা ওভারব্রিজ কিছুই নেই। লাইনের এ পারের এলাকা থেকে ও পারে যেতে হলে অন্তত তিন কিলোমিটার ঘুরতে হয়।
ফলে লোকজন বাধ্য হয়েই লাইন পারাপার করেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন