একজোট বিরোধীরা। অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিতদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার পথে নামলেন সুজন চক্রবর্তী, সুনন্দ সান্যাল, অসীম চট্টোপাধ্যায়, আব্দুল মান্নান, সমীর পুততুণ্ড-সহ অনেকেই।—নিজস্ব চিত্র।
সারদা-কাণ্ডে রাজ্য সরকার এবং শাসক দল যখন কোণঠাসা, সেই সময়ে প্রতারিত আমানতকারীদের নিয়ে একযোগে ফের ময়দানে নামলেন বিরোধীরা। প্রতারিতদের নিয়ে নতুন উদ্যমে রাজপথে দেখা গেল সিপিএম ও কংগ্রেস নেতাদের। সঙ্গে আরও কিছু ছোট দলের নেতারাও।
‘চিটফান্ড সাফারার্স ইউনিটি ফোরাম’ নামে যৌথ মঞ্চের ডাকে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজ স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মিছিলে ভিড় উপচে পড়েছিল। টাকা ফেরতের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে সরব হলেও ভুক্তভোগীদের এত বড় জমায়েত এর আগে হয়নি। কেবল টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েই ওই মঞ্চের নেতারা থেমে থাকেননি। সারদা-চক্রের রাজনৈতিক পাণ্ডাদের শাস্তি দাবি করেছেন। শুধু সারদা নিয়েই নয়, সমস্ত বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধেও তদন্ত করার কথা বলেছেন তাঁরা। পুজোর পরে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে বিভিন্ন বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতারিত আমানতকারীরা একজোট হয়েছিলেন। তাঁরা টাকা ফেরতের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তখনই গড়ে উঠেছিল ওই মঞ্চ। সারদা নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়ার পরে অবশ্য তাঁদের আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত ছিল। কিন্তু তৃণমূলের একের পর এক নেতাকে সিবিআইয়ের জেরা, প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা রজত মজুমদারের মতো শাসক দলের নেতাকে গ্রেফতারের পর অস্বস্তিতে পড়া মমতা-সরকারের উপর চাপ বাড়াতে এ দিন নতুন করে রাস্তায় নামলেন প্রতারিত আমানতকারীরা। পাশাপাশি, তৃণমূল-বিরোধিতার পরিসর যখন অনেকটাই বিজেপি দখল করে নিচ্ছে, সেই সময়ে বাম ও কংগ্রেস আমানতকারীদের নিয়েই নতুন করে সরব হতে চেয়েছে। যদিও অতীতে এই মঞ্চের ডাকে বিজেপি নেতারাও এসেছেন। ভুক্তভোগী মানুষদের সঙ্গে এ দিনের মিছিলে হাঁটেন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, নির্বেদ রায়, আব্দুল মান্নান এবং শিখা মিত্র, সিপিএমের শ্যামল চক্রবর্তী, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব, পিডিএস নেতা সমীর পূততুণ্ড, প্রবীণ শিক্ষক সুনন্দ সান্যাল। মিছিলের পরে প্রতিবাদ-সভা থেকে তৃণমূল সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন তাঁরা। শ্যামলবাবু বলেন, “চোরেদের পাণ্ডা যাঁরা, নবান্ন ও মহাকরণে এখনও যাঁরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন, তাঁদের না ধরা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” প্রদীপবাবু, মান্নান জানিয়ে দেন, প্রতারিতদের টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা থামবেন না। মঞ্চের আহ্বায়ক, প্রাক্তন নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় জানান, এর পরে জেলায় জেলায় সমাবেশ হবে। তার পরে আবার সকলকে নিয়ে কলকাতায় আন্দোলন হবে। তিনি বলেন, “আমনতকারীদের টাকা ফেরত এবং চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সকলের শাস্তির দাবি করছি আমরা।” সদ্যপ্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শিখার মন্তব্য, “বাম জমানায় বিড়াল মরলেও সিবিআইয়ের দাবি হতো! আর এখন দুর্নীতির তদন্ত করতেই সততার প্রতীকেরা ষড়যন্ত্র দেখছেন!”
চৌরঙ্গি ও বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রাক্কালে এ দিনের এই মিছিল ও জমায়েতকে প্রত্যাশিত ভাবেই ভাল চোখে দেখেনি রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূলের মহাসচিব এবং রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “দলের পতাকা ছাড়া সব বাতিল-হওয়া নেতারা এ দিন মিছিলে এসেছিলেন! তাঁদের অনেকেই চিট ফান্ড মালিকদের বলেছিলেন, তোমরা করে খাও। এখন আসল দোষীদের আড়াল করতে ওই বিরোধী নেতারা সব একত্রিত হয়েছেন!” পার্থবাবুর অভিযোগ, ১৯৮০ সাল থেকে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কারবার চলছে জেনেও কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার, পরে বিজেপি-র জোট সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাঁর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের নেতৃত্বে তৃণমূল বিধানসভায় বিরোধী দল থাকার সময়ে এবং সরকারে আসার পরে অর্থলগ্নি সংস্থার বেআইনি কারবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, পার্থবাবুর এই দাবি এবং বাস্তবের ঘটনায় ‘পার্থ-মুকুল রায় সমান’ দূরত্ব!
শাসক দলকে বেকায়দায় পেয়ে বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার বেআইনি কারবারে সর্বস্বান্ত মানুষদের নিয়ে আন্দোলনের চাপ বাড়াচ্ছে সকলেই। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মিছিলের ডাক দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। তাদের দাবি, সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার দুর্নীতিতে জড়িত নেতা-মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে হবে। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ভুক্তভোগী মানুষদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনও রবিবার রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, বাজার, আদালত চত্বরে ধিক্কার কর্মসূচি পালন করবে।