মিরজাফর কে কোথায়, নীরবে চলছে অঙ্ক

হাটে-বাজারে ছোট ছোট সভা করে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নানেরা মোবাইলে অডিও টেপ শোনাচ্ছেন। যেখানে মানসবাবুর গলায় শোনা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বেইমানি’র জন্য তীব্র সমালোচনা! একই কথা বলছেন সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র, তরুণ রায়েরা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

সবং শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১০
Share:

বেইমান! বিশ্বাসঘাতক! মিরজাফর!

Advertisement

শীতের বাতাসে সবংয়ের এ মাথা থেকে ও মাথায় সেই ময়না পর্যন্ত ভেসে বেড়াচ্ছে এই শব্দগুলো। বিরোধীদের আক্রমণ আবর্তিত হচ্ছে বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনিকে ঘিরেই।

বাংলার নবাবি ইতিহাসের মতো বিশ্বাসঘাতকতার এই কাহিনিতে ষড়যন্ত্রের মোচড়ও আছে! বিরোধী দলের নিশানার মুখে শাসক দলের সর্বাত্মক রুখে দাঁড়ানো পশ্চিম মেদিনীপুরের এই জনপদে অনুপস্থিত। বরং, কাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কে কোথায় চক্রান্ত করছে, তার জল্পনাই ভেসে বেড়াচ্ছে ইতিউতি!

Advertisement

যাঁকে ঘিরে এত কিছুর ঘুরপাক, তিনি নিজে অবশ্য ভোটে নেই। কিন্তু সবং বিধানসভা উপনির্বাচনটা আসলে তাঁরই। বাংলার রাজনীতিকে তিনিই এত কাল শিখিয়ে এসেছেন, সবং মানেই মানস ভুঁইয়া! মাত্র দেড় বছর আগে বামেদের সমর্থন নিয়ে কংগ্রেসের প্রতীকে জিতে সেই মানসবাবু যখন দল বদলে তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভায় গিয়েছেন এবং সবংয়ের গড় ধরে রাখার লক্ষ্যে বিধানসভায় প্রার্থী হিসাবে এগিয়ে দিয়েছেন স্ত্রী গীতারানিকে, তখন বিরোধীদের আক্রমণের মুখে তাঁকে পড়তে হবেই। হাটে-বাজারে ছোট ছোট সভা করে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নানেরা মোবাইলে অডিও টেপ শোনাচ্ছেন। যেখানে মানসবাবুর গলায় শোনা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বেইমানি’র জন্য তীব্র সমালোচনা! একই কথা বলছেন সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র, তরুণ রায়েরা। চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছে সবং।

মায়ের নির্বাচনী যুদ্ধে পাশে থাকতে সবংয়ে হাজির ভুঁইয়া দম্পতির মার্কিন প্রবাসী চিকিত্সক-পুত্রও। নিজস্ব চিত্র।

এই যখন বিরোধীদের চাল, শাসকের ঘরোয়া অস্বস্তিও নেহাত কম নয়। গত বিধানসভা ভোটের সময়ে সবং কেন্দ্রে এক তৃণমূল কর্মীর খুনের ঘটনায় নাম জড়ানো হয়েছিল মানসবাবুর। পরিস্থিতির ফেরে সেই নেতাই অভিযোগকারীদের সঙ্গে এক দলে! নতুন দলে এসেই রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে আবার বিধায়ক করতে চাইছেন নিজের পরিবার থেকে! স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ বলে বেড়াচ্ছেন, ‘‘আমাদের এখানকার দাদারা এত দিন ধরে খেটে কী পেলেন?’’ এই বিক্ষুব্ধ অংশ ভোটের দিন কী করে বসে, সেই আশঙ্কায় মানসবাবুর পাশে পাশে, কখনও বাইকে চেপে বাড়তি পথ পরিক্রমা করতে হচ্ছে গীতাদেবীকে।

আরও পড়ুন: রামমন্দির পরিকল্পনা ঘোষণা বছর শেষে

দু’হাতে পাঁচটা ফোন সামলাতে সামলাতে মানসবাবু মেনে নিচ্ছেন, ‘‘১৯৮২ সাল থেকে এত জটিল, কঠিন ভোটের মুখোমুখি হইনি! তবে ব্যবধান যা-ই হোক, জয় আমাদেরই হবে।’’ মায়ের নির্বাচনী যুদ্ধে পাশে থাকার জন্য ভুঁইয়া-দম্পতির মার্কিনপ্রবাসী চিকিৎসক-পুত্র কৌশিকও আপাতত সবংয়ে। আর প্রচারে বেরিয়ে প্রার্থী গীতা বলছেন, ‘‘এত দিন আপনারা ডাক্তারবাবুর উপরে ভরসা রেখেছেন। এ বার আমাকে আশীর্বাদ করুন।’’

বিরোধীদের ভরসা আবার বিক্ষুব্ধ মন। প্রচারের শেষ লগ্নে সবংয়ে এসে সিপিএমের সূর্যবাবু বলে গিয়েছেন, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই নয়। তৃণমূল-বিজেপি’কে রুখতে হবে এবং বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি দিতে হবে। কোনও জোট ছাড়াই সবংয়ে বামেদের ৬৪-৬৫ হাজার নিজস্ব ভোট ধরে রাখার তাগিদে ভাঙা সাইকেল নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন জেলা পরিষদের বিরোধী নেত্রী এবং সিপিএম প্রার্থী রীতা মণ্ডল জানা। দলের কর্মী হোক বা সাধারণ মানুষ, রীতাদেবীর সাফ কথা— ‘‘কেউ কোথাও ভয় দেখালে আমাকে খবর দিন! আমি পৌঁছে যাব।’’ আবার কংগ্রেস প্রার্থী চিরঞ্জীব ভৌমিক বলছেন, ‘‘আমি ওকালতি করে খাই। মামলার ভয়ে দল বদলে পালিয়ে যাব না!’’

‘দলবদলু’ অস্ত্রে শান দেওয়া অবশ্য বিজেপি-র হচ্ছে না। কারণ, তাদের প্রার্থী, প্রাক্তন জেলা পরিষদ সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য এসেছেন সিপিএম থেকে। অন্তরাদেবীরা সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির কথা বলছেন। আর মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষেরা অঙ্ক কষছেন তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেস থেকে কত ভোট ছিটকে আসে গেরুয়া বাক্সে।

কার দিকে কত ‘গদ্দার’, হিসেব করছে সবং!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন