Advertisement
Gautam Adani

আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে পতন, বাংলায় তাদের সংস্থার প্রকল্পের কী হবে, প্রশ্ন বিরোধীদের

প্রকল্প বানচাল হলে ক্ষতি হবে রাজ্যেরই। বিজেপির বিরুদ্ধে যে আদানি-কাণ্ডকে হাতিয়ার করছে বিরোধীরা, এখানে বিরোধী বিজেপি সেই অস্ত্রই পাল্টা ব্যবহার করে রাজ্যের প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

গৌতম আদানি। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৪৮
Share:

আদানি শিল্প-গোষ্ঠীর শেয়ারে পতন এবং তাদের সম্পত্তি মূল্য কমে যাওয়ার রিপোর্ট নিয়ে হইচই বেধেছে দেশ জুড়ে। সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিরোধীরা এই বিষয়ে সম্মিলিত ভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারকে চেপে ধরতে উদ্যোগী। এই প্রেক্ষিতে বাংলায় আদানি গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। রাজ্য সরকার বা শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে কেউ অবশ্য এখনও এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

পূর্ব মেদিনীপুরে তাজপুরের বন্দর এবং বীরভূমে ডেউচা পাঁচামির খনি প্রকল্পে আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগ করার কথা। তাজপুরে রাজ্য আদানিদের হাতে ইচ্ছাপত্র দিয়েছে, এখন সমীক্ষার কাজ চলছে। ডেউচা পাঁচামিতে আদানিরা আগ্রহ দেখিয়েছে, কারণ সেখানে প্রচুর গ্রানাইটের সন্ধান মিলছে। কৃষিভিত্তিক শিল্পেও আদানিদের আগ্রহ আছে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে সম্প্রসারণের প্রকল্পেও তারা যুক্ত। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আদানিদের উপস্থিতি বড় করে তুলেও ধরা হয়েছিল সরকারের তরফে। আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেও এ রাজ্যের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথা টেনে সরব হয়েছে সিপিএম। তাদের মতে, শেষ পর্যন্ত আদানিদের জন্য প্রকল্প বানচাল হলে ক্ষতি হবে রাজ্যেরই। আর কেন্দ্রের শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে যে আদানি-কাণ্ডকে হাতিয়ার করছে বিরোধীরা, এখানে বিরোধী বিজেপি সেই অস্ত্রই পাল্টা ব্যবহার করে রাজ্যের প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানে নাম না করেও আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার পতন এবং সেই শেয়ার বাঁচানোর জন্য শিল্পপতিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের প্রসঙ্গ তুলেছেন। আর কলকাতায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আদানি ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেখিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমি কিছু বলব না। যা উত্তর দেওয়ার এই ছবিটা দেবে!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি ভাবিত আমাদের তাজপুর গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে। আমি ভাবিত ডেউচা পাঁচামির পাথর কে কিনবে, তা-ই নিয়ে। ভাইপো নতুন বন্ধু নিয়ে এসেছিল। এ বার নির্বাচনী বন্ড কোথা থেকে আসবে?’’

আদানি-কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি আগেই তুলেছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেছেন, ‘‘সাগরে গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রকল্প প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল বাম আমলে। পরে সরিয়ে নেওয়া হয় তাজপুরে। রাজ্যের উন্নয়নের প্রশ্ন, আমরা তাজপুরে সরানো নিয়ে কিছু বলিনি। কিন্তু মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি আদানি সেখানে এল। ডেউচা পাঁচামিতে আদানিরা উৎসাহী বলেই রাজ্য সরকার পরিবেশ, জনজাতিদের প্রতিবাদের সব প্রশ্ন উপেক্ষা করে ওটা নিয়ে উঠেপড়ে লাগল। এখন আদানিরা ডুবলে ক্ষতিটা রাজ্যের হবে। তার দায় সরকার নেবে না?’’ বারাসতে এ দিনই বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্মেলনে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আদানি ও রাজ্যের শাসকদের আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

Advertising
Advertising

রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং অর্থ দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে রাজ্য অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, আদানির প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কিছু বলা না গেলেও সংশয় থাকছে। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘শেয়ারের বাজারের প্রতিক্রিয়া খুব দ্রুত ও একতরফা হয়। কোনও গোষ্ঠী বা সংস্থা সম্পর্কে তা থেকে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না, তার জন্য অন্যান্য তথ্য বিবেচনা করতে হয়। কিন্তু এটাও সত্যি যে, আদানিদের উত্থান শেয়ারের সূত্রেই। তারা কিন্তু টাটার মতো গোষ্ঠী নয়। তাই এই পরিস্থিতিতে তাদের প্রকল্পের কী হবে, সেটা বলা না গেলেও সংশয়ের জায়গা থাকছেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও পড়ুন
Advertisement