Durga Puja 2022

এত আড়ম্বর কীসের, প্রশ্নে সরব বিরোধীরা

র্নীতি এবং কেলেঙ্কারি থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই সরকার এই ভাবে উৎসবে নেমে পড়েছে বলে এক সুরে সমালোচনায় সরব বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৩৮
Share:

দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর দেওয়া স্বীকৃতি উদ্‌যাপনে জোড়াসাঁকো থেকে রেড রোডের উদ্দেশে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ায় ইউনেস্কো-কে ধন্যবাদ জানাতে রাজ্য সরকারের আয়োজনে শোভাযাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা। দুর্নীতি এবং কেলেঙ্কারি থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই সরকার এই ভাবে উৎসবে নেমে পড়েছে বলে এক সুরে সমালোচনায় সরব বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস। তাদের প্রশ্ন, চাকরি-প্রার্থীরা যখন রাস্তায় বসে, সরকারি কর্মচারীরা যখন মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন, সেই সময়ে এমন আড়ম্বরের কী প্রয়োজন ছিল? শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অবশ্য পাল্টা বলা হচ্ছে, বাংলার গর্ব দুর্গাপুজোকে সারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার পিছনে অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব রয়েছে। দুর্গাপুজোর সঙ্গে বাঙালির আবেগ না বুঝেই বিরোধীরা অহেতুক সরকারের সমালোচনায় নেমেছে।

Advertisement

বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় বৃহস্পতিবার টুইট করে দাবি করেছেন, ইউনেস্কো-র যে স্বীকৃতির জন্য উৎসব করতে রাজ্য সরকার শোভাযাত্রায় নেমেছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও কৃতিত্ব নেই। কেন্দ্রের সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির প্রচেষ্টার জন্যই এই স্বীকৃতি মিলেছে। মালবীয়তে সমর্থন করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘দুর্নীতি এবং কেলেঙ্কারি থেকে নজর ঘোরানোর জন্য এই শোভাযাত্রা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মরিয়া চেষ্টা। বাঙালিরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান এবং তাঁরা জানেন, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির (কেন্দ্রের) প্রচেষ্টার জন্যই দুর্গা পুজো ইউনেস্কো-র হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে।’’ পাশাপাশিই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ইউনেস্কো-র স্বীকৃতির নেপথ্যে তপতী গুহ ঠাকুরতার গবেষণার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের বক্তব্য, পুজোকে ঘিরে আবেগ-উদ্দীপনা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু দীর্ঘ কাল ধরে যা বাঙালির সর্বজনীন উৎসব, তাকে ‘সরকারি উৎসবে’ পরিণত করার চেষ্টা কেন? সেলিমের কথায়, ‘‘স্কুল ছুটি দিয়ে, পুরসভাকে কাজে লাগিয়ে, লোকজন নিয়ে এসে বিরাট আয়োজন। যেন আগে দুর্গাপুজো ছিল না! এত আড়ম্বর কীসের? নিয়োগ না পেয়ে চাকরি-প্রার্থীরা রাস্তায় বসে আছেন, শিক্ষক, পুলিশ থেকে শুরু সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) হচ্ছে না। সরকারি কর্মচারীরা ডিএ-র জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। আদালতে সরকার হলফনামা দিয়ে বলছে, কোষাগারে টাকা নেই। সেই সরকারই শোভাযাত্রা করছে!’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের সংযোজন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল থেকে শুরু করে শাসক দলের নেতাদের কুকীর্তি, সম্পদের ফিরিস্তি যখন মানুষের সামনে আসছে, সেই সময় উৎসব করে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা! সেই রোমান সাম্রাজ্যের আমলের কৌশল।’’ তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের বঙ্গ বিভূষণ বা ওই ধরনের সম্মান দেওয়া উচিত ছিল তপতীকে।

Advertisement

একই সুরে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘আমরা কেউই মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে কম গর্বিত বা আনন্দিত নই। স্বীকৃতির পিছনে মূল কৃতিত্ব ওই গবেষকের। বাংলার নানা প্রান্তে যাঁরা দুর্গাপুজোর বিভিন্ন ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ প্রাপ্য। এর জন্য এত আয়োজন জরুরি ছিল? যেখানে রাজ্যের এই পরিস্থিতি? অনেক ছোট আকারেও অনুষ্ঠান করা যেত। এর পরে আবার কার্নিভাল হবে!’’

রাজ্যের মন্ত্রী এবং তৃণমূলের নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য পাল্টা এক হাত নিয়েছেন সমালোচকদের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা সারা পৃথিবীর কাছে ভারতের গর্ব। আর এটা তৈরি করে দিয়েছেন আমাদের দিদি, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ এসেছেন। এ ছাড়া টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়াতেও মানুষ দেখছেন। এটা একটা অন্য মেজাজ। যারা রাজনীতি করছে করুক। বৈদিক ভিলেজে খেয়েছে, ঢেঁকুর তুলুক, ওরা বুঝবে না!’’ তাঁর মতে, ‘‘এটা অনুভবের, উপলব্ধির। বাংলার মানুষ, ভারতবর্ষের মানুষ এটা বুঝতে পারছেন। বিরোধীরা এটা বুঝতে পারবে না। তাদের অভ্যাস সমালোচনা করা!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement