organ donation

অঙ্গ বদলের কর্তৃত্ব নিয়ে দড়ি টানাটানি

অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দায়িত্ব নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন ও রিজিওনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অথরিটি বা রোটো-র দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৫:০১
Share:

মল্লিকা মজুমদার

পরপর কয়েক জন গ্রহীতার মৃত্যুর পরে রাজ্যে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তারই মধ্যে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দায়িত্ব নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন ও রিজিওনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অথরিটি বা রোটো-র দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এসে গেল। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব রীতিমতো ‘হাইজ্যাক’ বা ছিনতাই করার অভিযোগ উঠছে।

Advertisement

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে কোনও রোগীর ‘ব্রেন ডেথ’ বা মস্তিষ্কের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের নির্দিষ্ট কমিটির। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে জানাবেন। স্বাস্থ্য ভবন জানাবে রোটো-কে। রোটো-র সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তোলার দায়িত্বটুকুই রয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের হাতে। এর পরে কোন অঙ্গের গ্রহীতা কে হবেন, কোথায় অস্ত্রোপচার হবে— সেই সব সিদ্ধান্তই নেবে রোটো।

অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করার জন্য রোগীর পরিবারের সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসকদের আলোচনার আগেই স্বাস্থ্যকর্তারা চাপ দিতে থাকেন। ব্রেন ডেথের পরে রোগীর কোন অঙ্গের গ্রহীতা কে হবেন, সেই সিদ্ধান্তও নেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন থেকে। এর জেরে অনেক সময় সিদ্ধান্তে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ভুগতে হচ্ছে রোগী ও পরিজনদের। কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের রোগীদের গ্রহীতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা অদিতিকিশোর সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘যার যে-দায়িত্ব পালন করার কথা, সেটাই নিয়মমাফিক হচ্ছে। গোলমাল নেই।’’

Advertisement

কিন্তু অভিযোগের শেষ নেই। সম্প্রতি মল্লিকা মজুমদার নামে শিলিগুড়ির এক কিশোরীর মস্তিষ্কের মৃত্যুর পরে তার অঙ্গদান নিয়ে দুই কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ, মল্লিকার অঙ্গদানে তার বাবার সম্মতি ছিল না। কিন্তু প্রচণ্ড চাপের মুখে তাঁকে শেষ পর্যন্ত মেয়ের অঙ্গদানে রাজি হতে হয়।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে বিস্তর আইনি জটিলতা রয়েছে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে অবৈধ ব্যবসার নজির অসংখ্য। তাই বাড়তি সতর্কতা জরুরি। এক রাজ্যের রোগীর অঙ্গ ভিন্‌ রাজ্যের রোগীকে দান করা যেতে পারে। সেই প্রক্রিয়াকে বিধিসম্মত করার জন্যই তৈরি হয়েছে ন্যাশনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অথরিটি বা নোটো। আর প্রতিটি রাজ্যে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ সফল ভাবে করতে নোটো-র অধীনে গড়া হয়েছে রোটো।

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাড়তি দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নে নজরদারির অভাব দেখা দিচ্ছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগের পর্বের সমন্বয়ের কাজ রোটো-র। কিন্তু অস্ত্রোপচার-পরবর্তী চিকিৎসা পরিষেবায় নজরদারির দায়িত্ব রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের। অভিযোগ, সমন্বয় নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তাদের তৎপরতা থাকলেও অস্ত্রোপচার-পরবর্তী নজরদারি ও পরিষেবা কী হবে, সেই বিষয়ে তাঁদের তেমন উৎসাহ নেই। তার জেরেই অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের হার বাড়লেও তাতে সাফল্যের হার কম। প্রতিস্থাপনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যুতে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে রাজ্যের অস্ত্রোপচার-পরবর্তী চিকিৎসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন