Chhatradhar Mahato

রদবদলে ফিকে ছত্রধরের ছায়া

এ দিন দুপুরে শহরের একটি বেসরকারি অতিথিশালায় সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল ও যুব তৃণমূলের নতুন জেলা ও ব্লক কমিটির পদাধিকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ হয়। সেখানে ছিলেন না ছত্রধর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:০৩
Share:

সাংবাদিক বৈঠকে। নিজস্ব চিত্র

সবসময় জঙ্গলমহলের হাসিমুখ দেখতে চান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পঞ্চায়েত, লোকসভা ভোটের ফল দেখিয়েছিল, চাপা হাসির পিছনে রয়েছে মাপা কান্না। তারপরে জঙ্গলমহল পুনরুদ্ধারে ছত্রধর মাহাতোকে দলে সক্রিয় করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে দেওয়া হয়েছে দলের রাজ্য সম্পাদকের পদ। তবে বুধবার তৃণমূলের জেলা পদাধিকারীদের নাম ঘোষণার পর দেখা গেল, সেই ছত্রধরের ক্ষমতা বেঁধে রাখা হয়েছে মাত্র দু’টি ব্লকে। নতুন কমিটির ঘোষণার পরে ক্ষোভ-বিক্ষোভও শুরু হয়ে গেল দলের মধ্যে।

Advertisement

এ দিন দুপুরে শহরের একটি বেসরকারি অতিথিশালায় সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল ও যুব তৃণমূলের নতুন জেলা ও ব্লক কমিটির পদাধিকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ হয়। সেখানে ছিলেন না ছত্রধর। পরে তিনি ফোনে বলেন, ‘‘এ দিন সাংবাদিক বৈঠক হওয়ার খবর আমার জানা ছিল না। তবে নতুন কমিটির কথা শুনলাম। দল যা ভাল বুঝেছে করেছে।’’ প্রকাশ্যে বেশি কিছু বলতে না চাইলেও দলের নয়া সাংগঠনিক তালিকা নিয়ে তিনি যে সন্তুষ্ট নন, তা ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়ে দিয়েছেন ছত্রধর।

ঝাড়গ্রাম ব্লক তৃণমূলের নতুন সভাপতি হয়েছেন মাওবাদী পর্বে ছত্রধরের আন্দোলনের সঙ্গী নরেন মাহাতো। লালগড় ব্লক যুব সভাপতি করা হয়েছে রাজু হাঁসদাকে। ছত্রধর অনুগামী রাজুও জনসাধারণের কমিটির আন্দোলনের প্রাক্তন সক্রিয় কর্মী। এই দু’জন ছাড়া ছত্রধর অনুগামীদের সেভাবে নতুন করে পদপ্রাপ্তি হয়নি। ঝাড়গ্রাম জেলায় সবপক্ষকে ‘সন্তুষ্ট’ রাখতে গিয়েই ছত্রধরের দাবি বেশি মানা হয়নি। নতুন কমিটি দেখে এমনই মনে করছেন জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা।

Advertisement

সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম, জামবনি ও লালগড় ব্লকে তাঁর পছন্দের লোকজনের নাম ব্লক সভাপতি ও ব্লক যুব সভাপতির জন্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েছিলেন ছত্রধর। ঝাড়গ্রাম শহর সভাপতি পদেও বদল চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঝাড়গ্রাম শহর সভাপতি পদে প্রশান্ত রায়কেই রেখে দেওয়া হয়েছে। জেলার চার প্রভাবশালী নেতা-নেত্রীর (দুলাল মুর্মু, বিরবাহা সরেন, উজ্জ্বল দত্ত ও অজিত মাহাতো) অনুগামীরাই বেশিরভাগ পদ পেয়েছেন। জেলার আটটি ব্লকের মধ্যে চারটির সভাপতি বদল করা হয়েছে। ছত্রধরের ঘনিষ্ঠ গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক সভাপতির পদ থেকে শঙ্করপ্রসাদ হাঁসদাকে সরিয়ে নতুন ব্লক সভাপতি করা হয়েছে হেমন্ত ঘোষকে। এই হেমন্ত আবার জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মুর অনুগামী। আগেই জেলার কো-অর্ডিনেটর হয়েছেন উজ্জ্বল দত্ত। তাই তাঁকে নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে তাঁরই অনুগামী শ্রীজীবসুন্দর দাসকে আনা হয়েছে। সাঁকরাইল ব্লক সভাপতি পদ থেকে সোমনাথ মহাপাত্রকে সরিয়ে ওই ব্লকের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ কমল রাউতকে আনা হয়েছে। সাঁকরাইল ব্লকের যুব সভাপতি পদ থেকে অনুপ মাহাতোকে সরিয়ে দলের ব্লক সহ-সভাপতি করা হয়েছে। আটটি ব্লকের মধ্যে ৭টিতে একজন করে সহ-সভাপতি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কেবল লালগড় ব্লক সভাপতি শ্যামল মাহাতোই আছেন। ওই ব্লকে কোনও সহ সভাপতি দেওয়া হয়নি। নতুন জেলা টিএমসিপি সভাপতির নামও ঘোষণা করা হয়েছে এ দিন। সেই পদে এসেছেন আর্য ঘোষ।

৯৮ জনের দীর্ঘ জেলা কমিটির তালিকায় রয়েছেন ছত্রধর, জেলার তিন বিধায়ক, দলের দুই জেলা মুখপাত্র উমা সরেন ও সুব্রত সাহা, তৃণমূল থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের সব সদস্য, ৮টি ব্লকের সভাপতি সহ আরও অনেকে। ঠাঁই পেয়েছেন রিঙ্কা মুখোপাধ্যায়, শ্যামল দে-র মতো সাধারণ কর্মীরাও। আটটি ব্লকের মধ্যে ঝাড়গ্রাম শহর ও পাঁচটি ব্লকে যুব সভাপতি বদল করা হয়েছে। ফাঁস হওয়া প্রাথমিক তালিকার সঙ্গে চূড়ান্ত তালিকার খুব বেশি পরিবর্তন নেই। নতুন কমিটি প্রকাশের পরেই জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের খবর পাওয়া গিয়েছে। অনেকে দলের কাছে নিজেদের বর্তমান পদ থেকে ইস্তফা চেয়ে চিঠিও দিয়েছেন। তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল অবশ্য বলছেন, ‘‘সাময়িক অভিমানে কেউ হয়তো এরকম করছেন। তবে কেউই দল ছাড়বেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন