child home

কল্যাণ সমিতি নেই, হোমেই ঠাঁই শিশুদের

আইন অনুযায়ী চাইল্ডলাইন তাদের নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারে মাত্র ২৪ ঘণ্টা। অথচ বাস্তবে এই নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে না। চাইল্ডলাইনের অফিসে কোথাও ১৫ দিন, কোথাও বা ২০ দিন পর্যন্ত রাখা হচ্ছে ওই সব শিশু, নাবালিকাকে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৫:২২
Share:

ফাইল চিত্র।

যেখান থেকেই বাচ্চাদের উদ্ধার করা হোক, আইন অনুযায়ী চাইল্ডলাইন তাদের নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারে মাত্র ২৪ ঘণ্টা। অথচ বাস্তবে এই নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে না। চাইল্ডলাইনের অফিসে কোথাও ১৫ দিন, কোথাও বা ২০ দিন পর্যন্ত রাখা হচ্ছে ওই সব শিশু, নাবালিকাকে।

Advertisement

কেন?

কারণ রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে এই মুহূর্তে শিশু কল্যাণ সমিতি (সিডব্লিউসি) রয়েছে শুধু মুর্শিদাবাদ ও আলিপুরদুয়ারে। বাকি ২১টি জেলায় শিশু কল্যাণ সমিতির মেয়াদ শেষ। ফলে শিশুদের উদ্ধার করার পরে তাদের বাড়ির ঠিকানা পেলেও সিডব্লিউসি-র নির্দেশ না-মেলায় দিনের পর দিন হোমেই আটকে থাকতে হচ্ছে শিশুদের। এই অবস্থায় কোনও চাইল্ডলাইন আর শিশু বা নাবালিকা উদ্ধারের পথে হাঁটছেই না বলে অভিযোগ। কেননা উদ্ধার করে এনে তাদের রাখার নাকি জায়গাই নেই! অনেক চাইল্ডলাইনের তরফে এই ব্যাপারে নিজেদের অসহায়তার কথা স্বীকারও করে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুর চাইল্ডলাইন দুই নাবালিকা এবং দু’টি শিশুকে উদ্ধার করে ১৫-২০ দিন ধরে নিজেদের অফিসে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। রবিবার তারা আরও এক নাবালিকা এবং দু’টি শিশুকে উদ্ধার করে। কিন্তু কোনও নির্দেশ না-পাওয়ায় তারা নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছে তাদের। ওই জেলার সিডব্লিউসি-র মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২২ ফেব্রুয়ারি। তার পরে জলপাইগুড়ির সিডব্লিউসি ওই জেলার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু ৩১ জুলাই মেয়াদ শেষ হয়ে যায় জলপাইগুড়ির সিডব্লিউসি-র। তখন দক্ষিণ দিনাজপুর চাইল্ডলাইনের দায়িত্ব যায় আলিপুরদুয়ারের হাতে।

আরও পড়ুন: এ বার কি ১৭ পুরসভাতেও প্রশাসক বসাবে রাজ্য সরকার?

লাল ফিতের ফাঁসে আটকে কিশলয় হোমেরও কিছু শিশু বাড়ি ফিরতে পারছে না। বাড়ির খোঁজ পাওয়া গেলেও হোমেই কাটাতে হচ্ছে তাদের। মুর্শিদাবাদের সিডব্লিউসি-র সদস্য বা চেয়ারপার্সন শান্তিনিকেতনে গিয়ে কয়েকটি বাচ্চাকে বাড়িতে পাঠালেও গত দু’সপ্তাহ ধরে তাঁরা আর সেখানে যাচ্ছেনই না। ফলে সেখানেও চাইল্ডলাইনের অফিসেই ঠাঁই হয়েছে ১৬টি বাচ্চার।

কিন্তু এমন পরিস্থিতি কেন?

রাজ্য জুড়ে সিডব্লিউসি গঠন না-হওয়াতেই এই সমস্যা শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের একাংশ। প্রশ্ন উঠছে, সিডব্লিউসি-র মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ছ’মাস তাদের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষমতা দফতরের হাতে ছিল। তা হলে রাজ্য সরকার সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করল না কেন?

আরও পড়ুন: ঝুলেই রইল পঞ্চায়েত-রায়, ভোট কি অবৈধ? প্রশ্ন আদালতের

‘‘নতুন আইনে মেয়াদ বাড়ানোর নিয়ম নেই,’’ জবাব নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার। প্রশ্ন উঠছে, নতুন আইনে মেয়াদ বাড়ানোর নিয়ম না-থাকলেও এটা পরিষ্কার বলে দেওয়া আছে যে, কোনও সিডব্লিউসি-র মেয়াদ শেষের ছ’মাস আগে থেকেই সেখানে নতুন সমিতি গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে হবে। যাতে সমিতির কাজ কখনওই থমকে না-যায়। এই বিধান থাকা সত্ত্বেও আগেভাগে সমিতি গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে না কেন? জবাব নেই।

নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার নতুন সিডব্লিউসি গঠনের জন্য ইন্টারভিউ নিয়ে বাছাই করে তালিকা তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় বাছাই কমিটি। সেই তালিকা দফতরে জমা দিয়েছে তারা। বাকি শিশু কল্যাণ সমিতিগুলির ইন্টারভিউ নিয়ে কাজ শেষ করতে আরও এক মাসের বেশি সময় লাগবে। দার্জিলিং, কালিম্পঙের সমিতির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া সত্ত্বেও আবেদনপত্র জমা পড়েনি। ফের বিজ্ঞাপন দিতে হয়। ফলে সব জেলায় সমিতি গড়ার প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে বলে মত সংশ্লিষ্ট শিবিরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন