রাজ্যে দেবোত্তর সম্পত্তির বকেয়া ভাড়ার জটে আটক বহু পরিবার

পশ্চিমবঙ্গে দেবোত্তর সম্পত্তির ভাড়া-বাবদ রেন্ট কন্ট্রোলে জমা পড়া মালিকদের বকেয়া টাকার পরিমাণ দ্রুত বেড়ে চলেছে। সূত্রের খবর, এ রাজ্যে এই বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এই পরিস্থিতির মাঝেই একের পর এক ভাড়াটিয়ারা হাতবদল করছেন ভাড়ায় নেওয়া দেবোত্তর সম্পত্তির নানা অংশ।

Advertisement

অশোক সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ১৮:৩৪
Share:

পশ্চিমবঙ্গে দেবোত্তর সম্পত্তির ভাড়া-বাবদ রেন্ট কন্ট্রোলে জমা পড়া মালিকদের বকেয়া টাকার পরিমাণ দ্রুত বেড়ে চলেছে। সূত্রের খবর, এ রাজ্যে এই বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এই পরিস্থিতির মাঝেই একের পর এক ভাড়াটিয়ারা হাতবদল করছেন ভাড়ায় নেওয়া দেবোত্তর সম্পত্তির নানা অংশ। ক’দিনের মধ্যে মধ্য কলকাতায় ২২ বর্গফুটের একটি দোকান হাতবদল হতে চলেছে কমবেশি ৯ কোটি টাকায়। দু’পক্ষের চুক্তি প্রায় পাকা।

Advertisement

মালিকের সঙ্গে বিরোধের জেরে কয়েক লক্ষ ভাড়াটিয়ার টাকা জমা পড়ার কথা রেন্ট কন্ট্রোল বিভাগে। মালিকদের সেই টাকা দেওয়ার কথা ওই সরকারি বিভাগের। রাজ্যের গৃহমলিক সংগঠনের তরফে সুকুমার রক্ষিত বলেন, ‘‘দেবোত্তর সম্পত্তির ভাড়া-বাবদ মোট বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেবল কলকাতার ক্ষেত্রে পরিমাণটি প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার মত। আমরা তথ্যের অধিকার আইনে কিছুকাল আগে সরকারের কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তার ভিত্তিতে এটা অনুমান।’’

বিভিন্ন জেলায় জেলাশাসকের দফতর এবং কলকাতায় সিটি সিভিল কোর্টে রেন্ট কন্ট্রোল বিভাগ মালিকদের প্রাপ্য এই টাকা দেয়। কেন এই হাল? ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘পরিকাঠামোর অভাব, আইনি জটিলতা প্রভৃতি নানা কারণে এই বকেয়া মেটানোর কাজের গতি বহু বছর ধরেই মন্থর। এখন মেটানো হচ্ছে প্রায় ৯ বছর আগের দেয়।’’ সরকারি বিভিন্ন বিভাগের আধুনিকিকরণ হলেও রেন্ট কন্ট্রোল বিভাগ রয়ে গিয়েছে সেই মান্ধাতার আমলেই। সুকুমার রক্ষিতের অভিযোগ, ‘‘এই পাওনা আদায়ে দিন পর দিন গৃহমলিকদের রেন্ট কন্ট্রোল বা সংশ্লিষ্ট বিভাগে ছোটাছুটি করতে হয়। নায্য পাওনা দ্রুত আদায়ের জন্য আমরা আইনি পদক্ষেপ করতে যাচ্ছি।’’

Advertisement

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের যে বাড়ির একাংশ হাতবদল হতে চলেছে, সেটি দেবোত্তর ঘোষিত হয় ১৯৩০ সালে। এর একতলায় নানা ধরণের অন্তত আটটি দোকান। এর একটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল ১৯৭০ সালে। আয়তন কমবেশি ২২০০ বর্গফুট। এখন ভাড়া মাসে ৬,৫০০ টাকা। দেবস্থান সরে গিয়েছে ওই বাড়ি থেকে। বাড়ি দেখভালের দায়িত্ব আদালতের রিসিভারের হাতে।

কিন্তু এভাবে কী দেবোত্তর সম্পত্তিতে থাকা ভাড়ার দোকানের মালিকানার হাতবদল হতে পারে? সংশ্লিষ্ট দোকানটির ভাড়াটিয়া এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের বক্তব্য, ‘‘আমরা তো দোকান বিক্রি করছি না। দোকানের একটি বিশেষ লাইসেন্স আছে। আইন মেনে সেটা হস্তান্তর করছি।’’ সূত্রের খবর, এর জন্য বিনিময়মূল্য ধার্ হয়েছে ৯ কোটি টাকা। যে পরিবার বাড়িটি দেবোত্তর করেছিল, ভাড়ার কোনও টাকা তাঁরা পাচ্ছেন না। ভাড়াটিয়াদের দাবি, টাকা জমা দিচ্ছেন রেন্ট কন্ট্রোলে।

দেবোত্তর সম্পত্তির বকেয়া ভাড়ার জটে খাবি খাচ্ছে খোদ কলকাতার এক প্রাক্তন মেয়র গোবিন্দ দে-র পরিবার। চিৎপুরের সংযোগস্থলে তাঁর ১৬৩ মহাত্মা গাঁধী রোডের চার তলা দেবোত্তর বাড়িতে প্রায় আড়াইশ ভাড়াটিয়া। আর জি কর রোডে রয়েছে ৩ তলা একটি বড় বাড়ি। এই দু’টির পুরোটা এবং হেদুয়ার কাছে ৫৪ রামদুলাল সরকার স্ট্রিটের পারিবারিক বাড়ির অর্ধেক দেবোত্তর। শেষোক্ত বাড়িটি প্রায় এক বিঘা জমি নিয়ে, তৈরি ১৯১০ সালে। গোবিন্দবাবুর পুত্র সুজয় দে বলেন, ‘‘পাঁচ পুরুষ ধরে আমাদের সুতোর ব্যবসা। পারিবারিক অর্থের মূল অংশ ঢালা হয়েছিল বিভিন্ন বাড়ির পিছনে। এই সব সম্পত্তি এখন রীতিমত দায় হয়ে উঠেছে।’’ এর একটা বড় অংশ দেবোত্তর ঘোষিত হয়েছিল।

সেবায়েতদের অনুমতির তোয়াক্কা না করে কোথাও আশ্রিত, কোথাও বা সরকারের কোনও বিভাগ দখল করে রেখেছে দেবোত্তর সম্পত্তি। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ভোগ করছে ভাড়াটিয়া ও বহিরাগতরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন