—ফাইল চিত্র।
আড়াই বছর আগে চতুর্থ রাজ্য অর্থ কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়েছে নবান্নে। কিন্তু সেই রিপোর্ট এখনও ‘সরকারি’ভাবে গৃহীত হয়নি। ফলে ‘মুক্ত তহবিল’-এর টাকা পাচ্ছে না ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলি। কবে অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্য টাকা বরাদ্দ করবে, তা নিয়ে অন্ধকারে প্রশাসনিক কর্তারা।
প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাড়ি তৈরি, স্বচ্ছতা বা রাস্তা নির্মাণের জন্য পঞ্চায়েত-পুরসভাকে টাকা দেওয়া হয়। তাদের ইচ্ছামতো সেই টাকা খরচের স্বাধীনতা থাকে না। কিন্তু অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে যে টাকা দেওয়া হয়, তা যে কোনও প্রকল্পে খরচ করা চলে। তাই পঞ্চায়েত বা পুরসভা চালানোর ক্ষেত্রে এই ‘মুক্ত তহবিল’-এর থোক টাকা গুরুত্বপূর্ণ।
৭৩তম সংশোধনীর পর সংবিধানের ২৪৩ (আই) ধারায় রাজ্য অর্থ কমিশন গড়া আবশ্যিক। সেইমতো তৃণমূল সরকারে আসার পর চতুর্থ কমিশন গঠন হয়। ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বাধীন কমিশন রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে মুখ্যসচিবের নেতৃত্ব পুর, পঞ্চায়েত ও অর্থ সচিবকে নিয়ে একটি পর্যালোচনা কমিটি তৈরি করে সরকার। কিন্তু আড়াই বছরে এক বারও সেই কমিটির বৈঠক হয়নি। অর্থ কমিশনের রিপোর্ট বিধানসভাতেও পেশ করা হয়নি। ফলে সরকারি ভাবে রিপোর্ট এখনও গ্রাহ্য করেনি নবান্ন। অভিরূপ সরকার বলেন, ‘‘আমাদের কাজ ছিল রিপোর্ট তৈরি করে জমা দেওয়া। এর পর সরকারের কাজ।’’ কিন্তু অর্থ দফতরের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘ঋণের সুদ-আসল শুধতেই বিস্তর টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। এর পর অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে টাকা জোটানো মুশকিল। কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ নিয়ে সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
চতুর্থ অর্থ কমিশন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত-পুরসভাগুলির বরাদ্দ পাওয়ার কথা ২০১৫-১৬ থেকে। সেই হিসেবে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে পাঁচ বছরে ৪২৫৬.৫২ কোটি এবং পুরসভাগুলিতে ২৯৮৩.৪৩ কোটি টাকা পৌঁছনোর কথা। এক কর্তার মতে, কেন্দ্রের চতুর্দশ অর্থ কমিশন মূলত গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে টাকা বরাদ্দের সুপারিশ করেছিল। ফলে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে টাকা আসা কমেছে। সেই ভারসাম্য রাখতে রাজ্যের চতুর্থ অর্থ কমিশন পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে বেশি টাকার সুপারিশ করেছে। বছরে রাজ্যের আয়ের ২.৫% পঞ্চায়েত-পুরসভার জন্য নির্দিষ্ট করতে বলেছে তারা। ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত সেই টাকা দেওয়ার কথা ছিল। মেয়াদ শেষের এক বছর আগেও অনিশ্চিত সুপারিশ মানা হবে কি না!