আমার খুদে মেয়ে পারল, আপনারা?

সেই রাধেশ্যামকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে অঙ্গদান আন্দোলনে নতুন তরঙ্গ তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে রাধেশ্যামের বার্তা, ‘‘আমার ছ’বছরের মেয়ে পেরেছে!’’

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৪:০৬
Share:

সন্তানহারা: ছোট্ট রিভ্যানির বাবা রাধেশ্যাম রাহাংডালে ও মা আরতি রাহাংডালে। কলকাতায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে একরত্তি মেয়েটির প্রাণ। অঙ্গদানের আকাঙ্ক্ষা সে প্রকাশ করেছিল তার অনেক আগেই। তাই শোক সামলে মেয়ের অঙ্গদানের জন্য আবেদন করেছিলেন মহারাষ্ট্রের গোন্দিয়ার বাসিন্দা রাধেশ্যাম রাহাংডালে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে আট জনের দেহে শিশুটির পাঁচটি অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এ বার সেই রাধেশ্যামকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে অঙ্গদান আন্দোলনে নতুন তরঙ্গ তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে রাধেশ্যামের বার্তা, ‘‘আমার ছ’বছরের মেয়ে পেরেছে!’’

Advertisement

একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছেন গোন্দিয়ার দেউড়ি-ত্রিমূর্তিনগরের বাসিন্দা রাধেশ্যাম এবং তাঁর স্ত্রী আরতি রাহাংডালে। এপ্রিলে পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁদের ছ’বছরের মেয়ে রিভ্যানির। তার মস্তিষ্কের মৃত্যুর পরেই হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ, চোখ এবং কিডনি প্রতিস্থাপিত হয় আট জনের দেহে। আরতিদেবী বলেন, ‘‘স্কুলের ফ্যান্সি ড্রেস প্রতিযোগিতায় চক্ষুদান সচেতনতা নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল পিউ (রিভ্যানির ডাকনাম)। তখনই ও বলেছিল, ‘মা আমি কি চক্ষুদান করতে পারি না!’ ছ’বছরের মেয়ে চক্ষুদানের গুরুত্ব বুঝেছিল।’’

খুদে মেয়েটির সেই ইচ্ছেকে হাতিয়ার করে এ রাজ্যে অঙ্গদানে জোয়ার আনতে চান এলআইসি বা জীবন বিমা নিগমের এক সহকারী ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এবং তাঁর দুই সহকর্মী গৌতম দাশগুপ্ত ও শাশ্বতী মুখোপাধ্যায়। এ দিন তাঁরা বলেন, ‘‘ছ’বছরের মেয়েটি চক্ষুদানে আগ্রহ দেখিয়েছিল। মেয়ের সেই আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে সাহস দেখিয়ে অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেন তার বাবা-মা। তাঁদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হবে। সেখানে অঙ্গদানের ইচ্ছার পাশাপাশি ফর্মও জমা দিতে পারবেন আগ্রহীরা।’’ সেই সঙ্গে অঙ্গদান নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে প্রতি মাসে অঙ্গদান সংক্রান্ত আলোচনাসভা আয়োজনের পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

Advertisement

আদিবাসী অধ্যুষিত গোন্দিয়া থেকে ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরে ত্রিমূর্তিনগরে থাকেন মহারাষ্ট্র পুলিশের কনস্টেবল রাধেশ্যাম। মার্চের মাঝামাঝি দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। মাসখানেকের মধ্যেই দুর্ঘটনায় আহত হন রিভ্যানি। জন্মদিনের সাত দিন আগে মস্তিষ্কের মৃত্যু হয় মেধাবী শিশুটির। এ দিন রিভ্যানির বিভিন্ন সময়ের ছবি, তার আঁকা ছবি, স্কুলের পরীক্ষার খাতার পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে আরতিদেবী বললেন, ‘‘চিকিৎসক যে-মুহূর্তে আমাদের মেয়ের মস্তিষ্কের মৃত্যুর কথা বলেছিলেন, তখনই আমরা ওর অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিই। অনেক বাচ্চার বিভিন্ন অঙ্গ প্রয়োজন। পিউয়ের অঙ্গ নিয়ে তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাল থাকুক, এটাই চেয়েছি। তাতেই মেয়ের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন