দীর্ঘ বিতর্ক-বিতণ্ডার পরে শিক্ষা বিল পাশ করিয়ে নতুন উচ্চশিক্ষা আইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই আইন রূপায়ণের বিধি তৈরির জন্য গড়া দু’-দু’টি কমিটি কার্যত বাতিলই করে দিল রাজ্য সরকার। কেন?
উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী জোড়া বিধি-কমিটি স্থগিত রাখা হয়েছে। এবং তার মূলে আছে দু’টি কারণ। ওই দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, প্রথমত, জোড়া বিধি-কমিটি গড়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কোনও সম্মতিই নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, ওই দু’টি কমিটিতে এমন কয়েক জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, যাঁদের নিয়ে যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর।
কোনও বিল আইনে রূপান্তরিত হলেও নির্দিষ্ট ‘রুল’ বা বিধি তৈরির আগে তা প্রয়োগ করা যায় না। নতুন উচ্চশিক্ষা আইন বলবৎ করতেও চাই নির্দিষ্ট বিধি। সেই বিধি তৈরির জন্য দু’টি পৃথক কমিটি গঠন করেছিল উচ্চশিক্ষা দফতর। কিন্তু গঠনের কয়েক দিনের মধ্যেই সেই জোড়া কমিটির কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ওই দুই কমিটিকে আর মোটেই সক্রিয় করা হবে না। প্রয়োজনীয় বিধি তৈরি করবে দফতরের আইন বিভাগ। তার পরে সেটি পাঠিয়ে দেওয়া হবে উচ্চশিক্ষা সংসদে। সেখানে বিধি নিয়ে মতামত চাওয়া হবে সব উপাচার্যের।
উদ্যোগ পর্ব থেকেই সমালোচনার মুখে পড়ছিল উচ্চশিক্ষা বিল। রাজ্য সরকার ওই বিলের সাহায্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্ছিদ্র করতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভা অধিবেশনে প্রবল বিতর্কের পরে পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) বিল পাশ হয়ে যায়। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী সেই বিল অনুমোদন করার পরে ১ এপ্রিল থেকে কাগজে-কলমে চালুও হয়ে গিয়েছে নতুন আইন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই আইন রূপায়ণের জন্য চাই নির্দিষ্ট নিয়মবিধি।
আর সেই আবশ্যিক বিধি তৈরির উদ্দেশ্যেই গত ১৯ এপ্রিল দু’টি কমিটি গঠন করা হয়। ঠিক হয়, একটি কমিটি আইন প্রয়োগের নিয়মকানুন তৈরির পরামর্শ দেবে এবং খসড়া বিধি তৈরি করবে কলেজের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া এবং খসড়া বিধি তৈরি করবে অন্য কমিটি। কলেজের জন্য তৈরি ১৭ সদস্যের কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ডিপিআই জয়শ্রী রায়চৌধুরীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তৈরি নয় সদস্যের কমিটির মাথায় রাখা হয় নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুভশঙ্কর সরকারকে।
কিন্তু উচ্চশিক্ষা দফতরের একাংশের বক্তব্য, কমিটি তৈরির আগে শিক্ষামন্ত্রীর কোনও মতামতই নেওয়া হয়নি। দফতরের এক আধিকারিক জানান, বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছিল, তার সঙ্গে একমত নয় নবান্ন। তাই কমিটি তৈরির বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষামন্ত্রী কমিটির কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইট থেকে কমিটি তৈরির বিজ্ঞপ্তিটিই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
“মুখে বলা হচ্ছে স্থগিত। আসলে ওই জোড়া কমিটি আর দিনের আলো দেখবেই না,’’ মঙ্গলবার বলেন উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা।